Alliances বা জোটগঠন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনুধাবনে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কে Alliance বা জোট বলতে কি বুঝায়?
আসলে Alliance বা জোট বা মৈত্রী, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, তখনই হয় যখন দুই বা ততোধিক
রাষ্ট্র পারস্পরিক নিরাপত্তার নিরিখে নিজেদের মধ্যকার কোন চুক্তিতে (সামরিক
চুক্তি) উপস্থিত হয়। নিরাপত্তার প্রশ্নটা ঠিক তখনই উঠে যখন
চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর সামনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন সাধারণ হুমকি (Common Threats) আসন্ন হয়। এই সাধারণ হুমকি বা অনিরাপত্তা থেকে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট
বিষয়াদির সংরক্ষণের প্রয়োজনে রাষ্ট্রগুলো সহযোগিতাপূর্ণ ও সমন্বিত নিরাপত্তার (Collective Security) বেষ্টনীতে প্রবেশ করে। পারস্পরি নিরাপত্তার স্বার্থে রাষ্ট্রগুলো সমন্বিত
আকারে তাদের সামরিক শক্তি ব্যবহার বা প্রদর্শন করে; এই প্রদর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যপূর্ণ (Anarchic) ব্যবস্থায় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শক্তিসাম্য বা শক্তি ভারসাম্য (Balance of Power) তৈরি করা।
Alliance বা আন্তর্জাতিক মৈত্রীকে প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। যথাঃ আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক চুক্তি বা মৈত্রী। আনুষ্ঠানিক মৈত্রী হল একধরনের চুক্তি যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশিত ও স্বাক্ষরিত। এই ধরনের চুক্তির প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হল- যদি চুক্তিবদ্ধ একটি রাষ্ট্র সামরিকভাবে আক্রান্ত হয় তাহলে অন্যান্য মৈত্রীভুক্ত রাষ্ট্রগুলো তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা নিবে। উদাহরণ হিসেবে ন্যাটোর কথা বলা যায়।
অন্যদিকে অনানুষ্ঠানিক মৈত্রী হল একধরনের অস্থায়ী চুক্তি বা সামরিক মহড়ার মাধ্যমে সৃষ্টি পারস্পরিক বোঝাপড়া (Memorandum of Understanding)। বর্তমানে বিভিন্ন দেশের মধ্যকার সামরিক মহড়া, কৌশলগত তথ্যসূত্রের আদান-প্রদান, সামরিক-কুটকৌশলের সহযোগিতার মাধ্যমে এই অনানুষ্ঠানিক মৈত্রী গঠিত হয়। উল্লেখ্য এইধরনের অলিখিত অনানুষ্ঠানিক মৈত্রীগুলো বেশিরভাগই গোপনীয়ভাবে সম্পাদিত হয়।
কম শক্তিশালী দেশের দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী,
- সামরিকভাবে অনিরাপত্তার নিরাপত্তায়নে জোটভুক্ত কম শক্তিধর দেশগুলো খুব সহজেই তাদের ডিফেন্স বাজেট কমিয়ে আনতে পারেন। যেমনঃ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বদৌলতে পূর্ব ও কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় অনেকগুলো কম সামরিক শক্তিধর দেশ প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক শক্তিধর রাশিয়ার সামরিক উচ্চাকাঙ্খা থেকে অনেকটাই নিরাপদ রাখতে পেরেছে।
- জোটের মাধ্যমে খুব সহজেই দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিধর রাষ্ট্রের সাথে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। ফলে নতুন করে তাদেরকে নিজ সামরিক অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বা অস্ত্রের উন্নতি ও বিস্তারে মননিবেশ করার প্রয়োজন পরেনা।
- সামরিক সহায়তা বাদেও জোটভুক্ত শক্তিশালী অংশীদারদের সাথে দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তাদের বানিজ্য সম্প্রসারণ, ঋণ গ্রহন বা বিভিন্ন সাহায্য (Aid) পেতে পারেন। এবং
- সামরিক মহড়া বা মিশনগুলোতে বিশাল পরিমানে সামরিক অফিসার ও কর্মকর্তাকে নিয়োগ করার মাধ্যমেও কিন্তু দুর্বল রাষ্ট্রগুলো আর্থিক সুবিধাও পেতে পারেন।
- শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি জোটগঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে নিজেদের শক্তিধর রূপে প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন জোট গঠনের প্রস্তাব ও পদক্ষেপ নেন। যেমনঃ স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময় যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বিস্তারকে রুখতে সোভিয়েতের চারিদিকের রাষ্ট্রগুলোর সাথে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন ও সোভিয়েতকে কোনঠাসা করতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত জায়গায় সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলেন।
- শক্তি ভারসাম্য তৈরির মাধ্যমে স্বীয় স্বার্থগুলো আদায় করতে জোট গঠনের প্রয়োজনীয়তা বেশি শক্তিধর রাষ্ট্রের।
- সর্বোপরি, শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো তার জোটের মধ্যে একটা হেজেমনিক বা অধিপত্য অবস্থা বঝায় রাখতে চায়। যেমনঃ ন্যাটোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভুমিকা।
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়





No comments