মেসোপটেমীয় সভ্যতা: প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান,সূউচ্চ
মন্দিরসম টাওয়ার, জিগ্গুরাটস,মহা কাব্য গিলগামেশ কিংবা সেমিটিক ভাষা অথবা সময়,সপ্তাহ,মাসের প্রাথমিক প্রচলনের কথা মাথায় আসলেই আমাদের মনে পরে প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার কথা। এ সভ্যতার আরো বিস্ময়কর সৃষ্টির মাঝে রয়েছে বিশাল ওয়াইন বোতল , চাকা আবিষ্কার ইত্যাদি।এখানেই বিকাশিত হয়েছিলো পৃথিবীর প্রথম প্রশাসনিক ব্যবস্থা ।আজ আমরা সভ্যতার জন্মভূমি "মেসোপোটেমিয়া সভ্যতা নিয়ে আলোচনা করবো,এবং জানবো।
🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠🟠
স্থানীয় ও বহিরাগত যাযাবর সংস্কৃতির মিলনে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও উন্নত মেসোপটেমীয় সভ্যতা। এটি শুধুমাত্র একটি জনগোষ্ঠী নয় বরং বেশ কয়েকটি জনগুষ্ঠী নিয়েই গঠিত ।মূলত চারটি সভ্যতার ধারা নিয়ে এই আধুনিক সভ্যতাটি গড়ে উঠেছিলো। সেসব সভ্যতা হল:-
·
প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা;
·
আক্কাদীয় সভ্যতা;
·
আ্যাসসিরীয় সভ্যতা ও
·
ব্যাবিলনীয় সভ্যতা।
এ সভ্যতা মিশরীয় সভ্যতা হতে ভিন্ন। মেসোপটেমীয় সভ্যতা উন্নতির সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্রবেশ করেছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০-৩৫০০অব্দে। কিন্তু প্রাকৃতিক দিক থেকে এলাকাটি সুরক্ষিত না হওয়ায়,৩৩৩ খ্রীষ্টাব্দে বহিঃশক্তির আক্রমনে বিপর্যস্ত হয়,এছাড়াও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অন্তঃকলহের জেরে ধীরে ধীরে সভ্যতাটির অবলুপ্তি ঘটে।
মেসোপটেমীয় সভ্যতা
সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ উৎস:-
এ সভ্যতাকে বলা হয় আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট-এ ও যার উল্লেখ আছে,প্রথম ভাগে, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথম পুরুষ( এ্যাডাম)এবং প্রথম নারী(ইভ) এর আবাসভুমি ‘গার্ডেন অব ইডেন'যাকে ঐতিহাসিকগন,মেসোপটেমীয় অন্চল বলে উল্লেখ করেছেন।
উনিশ শতকের পূর্বে মেসোপটেমীয় সভ্যতা সম্পর্কে কেউ তেমন একটা জানতোনা।এ অন্চল সম্পর্কে জানার উৎস ছিল,বাইবেল,গ্রীক ও রোমান লেখনী।সেগুলোতে অবশ্য এই সভ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা নেই।
১৮১৩ সালে ক্লডিয়াস জেমস রিচ(Cladidius James Rich,1787-1820)প্রথম ব্যবলনীয় সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ নিয়ে একটি মানচিত্র তৈরি করে বিশ্ববাসীকে জানান। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে বাগদাদে কাজ করতেন।(Answer
Book-About our world-National Geographic, Chapter, 7,page:266)
এরপর ইংরেজ,ফরাসি ও জার্মান প্রত্নতত্ত্বদেরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেসোপটেমিয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
মেসোপটেমিয়া শব্দগত বিশ্লেষণ :-
এ সভ্যতাকে গ্রিকরা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা বলে নাম দিয়েছেন। আক্ষরিক অর্থে”মেসো” অর্থ ‘মধ্যবর্তী”এবং “পটাম”অর্থ নদী। অর্থাৎ দুই নদীর মধ্যবর্তী অন্চল।
সুমেরীয়,ব্যাবিলনীয়,অ্যাসেরীয় ও ক্যালডীয় সভ্যতা ছিল মেসোপটেমীয় র প্রধান চারটি সভ্যতা।এর মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা সবচেয়ে প্রাচীন।তাই সুমেরীয়দের মেসোপটেমিয়া সভ্যতার স্রস্টা মনে করা হয়।
অবস্থান:-
★মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছে,আরব মরুভূমির উত্তরে অবস্থিত অর্ধ-চন্দ্রাকার উর্বর ভূমির অন্তর্গত। অন্চলটি উর্বর অর্ধচন্দ্র (Fertile
Crescent) নামেও পরিচিত।
★পূর্ব তুরস্কের আনাতোলিয়া পর্বতমালা থেকে উৎপত্তি লাভ করে টাইগ্রিস বা দজলা ও ইউফ্রেটিস বা ফোরাত নামের দু'টি নদী।এর পর তারা দক্ষিণ -পূর্ব দিকে এগিয়ে গিয়ে একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হয়ে শাত-আল-আবর নামে আরেকটি নদী হয়ে পারস্য উপসাগরে গিয়ে মিশেছ
★উত্তরে আর্মেনিয়ার পার্বত্য অন্চল,দক্ষিণ ও পশ্চিমে আরব মরুভূমি ও পূর্বে জাগরাস পার্বত্য অন্চল দিয়ে ঘেরা এই নদী দু'টির যাত্রাপথ। এই দুই নদীর মধ্যে থাকা উর্বর ও অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি অববাহিকার নাম ছিলো মেসোপটেমিয়া।
সময়কাল:-
খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০০ অব্দ নাগাদ বিভিন্ন জায়গার মানুষেরা আসতে থাকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থাকায় বহিরাগত ও আদিম আরব যাযাবর সংস্কৃতি মিলনে,এই অন্চলে গড়ে ওঠে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ও উন্নত এক সভ্যতা।
মেসোপটেমীয় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য :-
★প্রায় সাত-আট হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে উবাইদ নামে এক জাতি বাস করতো। উবায়েদরা কৃষিকাজ ও পশুপালনের জন্যে ছোট ছোট গ্রাম গড়ে তোলে। সে সময়ে তাদের দুটি গ্রাম ধীরে ধীরে শহর হিসেবে পরিণত হয়।
★মেসোপটেমীয় সভ্যতাগুলোর,মধ্যে আ্যাসেরীয়রা ছিল সামরিক জাতি। তারা তাদের সাম্রাজ্য মিশর পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। মেসোপটেমিয়ার নগর রাষ্ট্রগুলোর সাথে মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতার বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।পৃথিবীর প্রথম নগররাষ্ট্র “উরুক”সুমেরীয় সভ্যতার প্রধান শহর।সুমেরীয়রা সিন্ধু সভ্যতার প্রধান শহর। সুমেরীয়রা সিন্ধু সভ্যতাকে মেলুহা নামে ডাকত।
এ ছাড়াও,উর,কিশ,লাগাস,লার্সা ও নিপ্পুন নামে শহরগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভাষা:-
পৃথিবীর আদিম ভাষা সেমিটিক ভাষাগোষ্ঠীর সুমেরীয় ভাষায় কথা বলত।এই ভাষা দিয়ে তারা দৈনন্দিন ভাবের আদানপ্রদান ছাড়াও প্রশাসনিক কাজকর্ম,ধর্ম ও বিজ্ঞানচর্চা করত।এই ভাষায় প্রথম পাওয়া লিপিটারির বয়স ৫১০০-৪৯০০ বছরের মতো।
তাদের বর্ণমালা দিয়ে লেখা বিভিন্ন দলিল পরবর্তীকালের পাওয়া গেছে।
সাহিত্য :-
বিশ্ববিখ্যাত মহাকাব্যিক কাহিনী গিলগামেশ এই ভাষাতেই রচিত।নগরজীবন,বাণিজ্য ও সাহিত্যের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও উঠে আসে,এই নগরজীবন,বাণিজ্য ও সাহিত্যের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কে ওঠে আসে,এই সভ্যতার কিছু লেখায় পারলৌকিক চিন্তাভাবনা দেখা গেছে।
ধর্ম ও দর্শন:-
আঠারশ শতকের দিকে উদ্ধারকৃত মেসোপটেমীয়ানদের বিশ্বাস ছিলো যে পৃথিবী একটি বিশাল ফাঁকা বিশিষ্ট স্থানে অবস্থিত একটি গোলাকার চাকতি। তারা আরও বিশ্বাস করত যে আকাশে স্বর্গ এবং মাটির নিচে রয়েছে নরক।জল সম্পর্কে তাদের ধারনা ছিল যে পৃথিবী জল দিয়েই তরী এবং এর চারপাশ জুড়ে জলই আছে।প্রাচীন মেসোপটেমীয়ানরা বহুইশ্বরবাদে বিশ্বাসি ছিলো তবে সময়ের ধারার সাথে কিছু কিছু গোষ্ঠীর ধর্মমত পরিবর্তিতে হতে শুরু করে।প্রাচীন মেসোপটেমীয়ানদের মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবির মূর্তিপূজার প্রমাণ পাওয়া যায়।
ধর্ম পালনের দিক দিয়ে মেসোপটেমীয়া সভ্যতার মানুষেরা অনেক অগ্রগামী ছিলো।প্রতিটি জিগুরাট ও মন্দিরেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ যেমন ধনী,দরিদ্র, ব্যবসায়ী, কামার,মজুর,কৃষক ইত্যাদি শ্রেণীর লোকদের বসার ব্যবস্থা ছিল। এসব লোকজন যার যার নিজস্ব জায়গায় গিয়ে নগরদেবতাদের প্রনামভক্তি ও বিভিন্ন জিনিস উৎসর্গ করত। এতে এই সভ্যতার সার্বজনীন ধর্মব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়।
মেসোপটেমিয়ার বিকাশ সম্পর্কে গবেষকদের মতামত:-
অক্সফোর্ড আ্যাসমোলিয়ান জাদুঘরের পল কলিন্সের লেখা নতুন বই,”প্রাচীন ইরান এবং মেসোপটেমিয়া :পর্বতমালা এবং নিচু ভূমিসমূহের ব্যাখ্যা “ প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক, তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন,”মেসোপটেমিয়ান ধর্মগুরু,শিক্ষক ও আমলারা ধর্মীয় বিশ্বাস ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন।তাদের এ ঐতিহ্যের উন্থান, সবশেষে সাম্রাজ্যের পতন এবং নতুন মানুষ ও ধারনার আগমন সত্বেও মেসোপটেমিয়া একটি স্পন্জের মতো ছিল।যখনই নতুন মানুষ এ অন্চলে আসেন,মেসোপটেমিয়ার দীর্ঘ ঐতিহ্য শুষে তা বজায় রাখেন। অন্তদৃষ্টি সম্পূর্ণ ধর্মগুরু ও আমলারা মেসোপটেমিয়া সমাজে আদেশ জারি করতেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতো।”
আ্যারিয়ান থামসের মতে,”মেসোপটেমিয়ার অবস্থান ও তার সাফল্য অতি সমৃদ্ধ কৃষিভিত্তিক সরকার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মধ্যপ্রাচের কেন্দ্রবিন্দু মেসোপটেমিয়ার অধিকারে ছিল।
পল কলিন্স জানান,”মেসোপটেমীয়া ও আধুনিক ইরানের সোনা,রুপা ও তামা সমৃদ্ধ জগ্রোস পর্বতমালার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া ছিল। এসব সরন্জাম অস্র -শস্ত্র বানাতে আমদানি করা হতো।
মোসোপটেমিয়ার বিখ্যাত মিনারগুলো তৈরির উপকরণ ও ইরান থেকে এসেছিল। এসব বাণিজ্য ও সম্পর্ক জোরদারে মেসোপটেমিয়ায় বিকশিত হয় সামাজিক নেতৃত্ব। ল্যুভের মিউজিয়ামের মধ্যপ্রাচের পুরাকীর্তি বিভাগের কিউরেটর আ্যাবিয়ান থামস বলেন,” দীর্ঘ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে একটি অত্যাধুনিক সংস্কৃতির পাশাপাশি রীতিনীতি,ঐতিহ্য,কাল্পনিক ও পৌরাণিক কাহিনী এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারনা ও।
মেসোপটেমীয়ার অবদানঃ
প্রাচীন সভ্যতা হিসাবে মেসোপটেমিয়ার অনেক অবদান রয়েছে, মেসোপটেমিয়ার সাফল্যের কিছু দিক নিচে বর্ণনা করা হল,
গণিত:-
*রাষ্ট্র,মন্দির ও জনগনের মধ্যে সম্পদ কী ভাবে বন্টিত হবে,তা হিসাব করা হত গণিতের সাহায্যে।
* শস্যের বীজ বপন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্যে পাঁজি তৈরির ক্ষেত্রে ও গণিতের ব্যবহার ছিলো।
* মেসোপটেমিয়দের সংখ্যাগুলি ছিলো “ষাট”কেন্দ্রিক। সেখান থেকেই সম্ভবত এক ঘন্টায় ষাট মিনিট ও এক মিনিটে ষাট সেকেন্ডের হিসাব শুরু হয়।
*তারাই প্রথম এক বছরকে ১২ মাসে এক বছর,৩০ দিনে ভাগ করছিল।
*শূণ্যের প্রচলন তারাই শুরু করে।
*বৃত্তকে ৩৬০ টি ভাগে বিভক্ত করেছিলো তারাই।
*মেসোপটেমীয়রা প্রথম রাশিচক্র এবং জলঘড়ি আবিষ্কার করে।
*তাদের গণিতে পাটিগণিতের প্রাধান্য ছিল।অর্থ ও পণ্যদ্রব্য আদানপ্রদানের জন্যে পাটীগণিত ও সরল বীজগণিত ব্যবহার করত।সরল ও যৌগিক সুদ গণনা করতে পারতো।
*জ্যামিতিতে পরিমাপ ও গণনাকে প্রাধান্য দেওয়া হত।
*খাল কাটা শস্যাগার নির্মাণ ও অন্যান্য সরকারি কাজকর্মের জন্য পাটীগণিত ও জ্যামিতির ব্যবহার হত।
* বিপরীত সংখ্যা,বর্গ,সংখ্যা,বর্গমূল,থন সংখ্যা ও ঘনমূলের ব্যবহার ছিলো তাদের অঙ্কে।
* দ্বিঘাত সমীকরনের সমাধানের সৃত্ত আবিষ্কার করেছিল এবং তারা দশটির অজানা রাশি বিশিষ্ট দশটি সমীকরনের অঙ্ক সমাধান করতে পারতো।
জোতিৎবিজ্ঞানঃ-
সে সময় শুভ অশুভ ক্ষণ নির্ণেয় করা হতো নক্ষত্রের সাহায্যে।খালি চোখেই নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করতেন।
*গণিত ব্যবহার করে চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের গতি নিয়ে গবেষনা শুরু করেছিলো তারা।এর ফলে জ্যেতিবিজ্গান ও জোতিষশাস্তের বিকাশ ঘটেছিলো।
*গ্রহ নক্ষত্র গুলির গতিবিধির ছক আঁকতে জনত তারা।সেই অনুযায়ী তাদের ক্যালেন্ডার তৈরি করত।
*দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হত মানমন্দির গুলিতে।ঋতু নির্ণেয়ের মাধ্যমে শস্যরোপনের সময় বার ও বছরের দৈর্ঘ্য মাপা।
*প্রথম দিকে পৃথিবীটাকে চ্যাপ্টা চাকতির মতো ভাবলেও,পরে তাদের ধারণা হয় পৃথিবীটা গোলাকার।এরপর তারাই প্রথম পৃথিবীকে ৩৬০ ড্রিগ্রিতে ভাগ করার পরিকল্পনা করে।
ধাতুর ব্যবহার:-
ধাতুর ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেসোপটেমীয়রা বেশ উন্নতি সাধান করেছিলো।তারা খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে তামা ও ব্রোন্জ্ের ব্যবহার শুরু করে। মেসোপটেমীয়ার বিভিন্ন মন্দির এবং জিগুরাট থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বাসন কোসন পর্যবেক্ষণ করলে ধারনা করা যায় যে তারাই তামা ও টিনের সংমিশ্রণে তৈরি একটি চমৎকার ধাতু ব্রোন্জের আবিষ্কারক।এছাড়াও মেসোপটেমিয়ায় কাচের ব্যবহার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ১৬০০ থেকে শুরু হয়,বলে ধারনা করা হয়।
গণতন্ত্র :-
আধুনিক সভ্যতা-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর মেসোপটেমীয়ই সেই জায়গা যেখানে পৃথিবীর প্রথম আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার বিকাশ ও জায়গা যেখানে পৃথিবীর প্রথম আধুনিক প্রশাসনিক বৃত্ত,এরপর ছিল রাজ্য কেন্দ্রিক প্রশাসনিক বৃত্ত এবং সব শেষে ছিল সুবিশাল সাম্রজ্যকেন্দিক প্রশাসনিক বৃত্ত। এরপর ছিল রাজ্য কেন্দিক প্রশাসনিক বৃত্ত,এরপর ছি্ল রাজ্য কেন্দিক প্রশাসনিক বৃত্ত এবং সব শেষে ছিল সুবিশাল সাম্রজ্যকেন্দিক প্রশাসনিক বৃত্ত ।
মানুষ তাদের মতামত নির্ভয়ে প্রকাশ করত।যেখানে ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা।সর্বোপরি রাষ্ট্র,মন্দির ও জনগনের মধ্যে জাতীয় সম্পদ নিখুঁত ভাবে হিসাব করে বন্দন করাহত,যাতে জনসাধারণ অভাবে না পরে।
সেচ-ব্যবস্থা :-
মেসোপটেমীয়ার কৃষিজমির উর্বরতা,কেবল নদীর অববাহিকায় সীমাবদ্ধ ছিল।বৃষ্টিপাতের অভাব বিশেষত দক্ষিনে,গ্রীষ্মে জমি শুকিয়ে যায় এবং ফসল কাটা খুব কষ্ট ছিল।
তাই তারা নদী হতে দূরবর্তী অন্চলে পানি সরবরাহ করার জন্যে জল পরিবহনের জন্যে ব্যবস্থা খুঁজে বের করে।
মেসোপটেমিয়া অর্থনীতি
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে অর্থনীতি যথাযথভাবে মেসোপটেমিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিল। এই বক্তব্যটির কারণ হ'ল, প্রথমবার তারা সংগঠিত করার সময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েছিল।
যুদ্ধ :-
প্রথম মেসোপটেমিয়ার বাসিন্দারা তাদেরকে স্বাধীন নগর রাজ্যের সংগঠিত করেছিলেন।তাদের মধ্যে যুদ্ধ খুব ঘন ঘন ঘটেছিলে,যেহেতু তারা সকলেই তাদের শক্তি এবং অন্চল বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল।তবে সুমেরীয় সময়কালে কোন ও বড় ঐক্যবদ্ধতা সংঘটিত হয়নি।
এটি আক্কাদীয়ান সাম্রাজ্য যা একই রাজার অধীনে একটি অন্চলকে একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছিল।প্রথমবারের মতো, ক্ষমতা কেন্দ্র ভূত হয়েছিল এবং শাসকরা রাজবংশ তৈরি করেছিল।
সেই অর্জন হলেও,সাম্রাজ্য খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।ব্যাবিলনীয়রা তাদের অন্চলটি জয় করে এবং নিজ্বস রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।
এছাড়াও মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা,ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান,সূউচ্চ মন্দির সম টাওয়ার জিগ্গুরাটস,বিশাল ওয়াইন বোতল প্রমাণ করে যে,মোসোপটেমিয়া কত উন্নত এবং সমৃদ্ধ সভ্যতা ছিলো।
মেসোপটেমিয়া সভ্যতার পতন:-
ভৌগলিক এবং অস্থায়ী অবস্থান
অস্থায়ী অবস্থান
মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার জাঁকজমকের শেষ পর্যায়টি নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের সময়ে হয়েছিল, বিশেষত দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের শাসনামলে।
এই ব্যাবিলনীয় পুনরুজ্জীবন প্রায় এক শতাব্দী ধরে চলেছিল। পরবর্তীতে, তাদের সভ্যতা গ্রেট সাইরাস দ্বারা পরিচালিত পার্সিয়ানদের ধাক্কায় আত্মত্যাগ করে।
পার্সিয়ানদের আক্রমণ
ব্যাবিলনীয় শাসনের সমাপ্তি বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণের কারণে হয়েছিল। পরবর্তীকালের মধ্যে একজন অশূর পুরোহিতের পুত্র রাজা নাবোনিদাসের প্রতি জনগণের বিরোধিতা দাঁড়ালো।এই বৈধ রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন।
শক্তিশালী পাদ্রীরাও নবোনিডাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি মার্ডুক দেবতাটির সম্প্রদায়কে মুছে ফেলেছিলেন এবং চাঁদের দেবতা পাপকে উত্সর্গীকৃত একটি নতুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
অন্যদিকে, আকামেনিড সাম্রাজ্যের শাসক সাইরাস গ্রেট মেসোপটেমিয়ার পূর্ব দিকে বিশাল অঞ্চল জয় করেছিলেন। সমগ্র মধ্য প্রাচ্যে কেবল নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যই তার স্বাধীনতা বজায় রেখে মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া, জুডিয়া, আরবের কিছু অংশ এবং ফেনিসিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
শেষ অবধি, সাইরাস দাবি করেছিলেন যে তিনি ছিলেন প্রাচীন ব্যাবিলনীয় রাজাদের বৈধ উত্তরসূরি। কালক্রমে, ব্যাবিলনে তাঁর জনপ্রিয়তা নাবোনিডাসের চেয়ে বেশি ছিল।
ব্যাবিলনের পতন
সাইরাস দ্য গ্রেট অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে ব্যাবিলনে আক্রমণ করেছিলেন। বিজয় সম্পর্কিত নথিগুলি একে অপরের সাথে বিরোধী, কারণ কিছু ইঙ্গিত দেয় যে শহরটি ঘেরাও করা হয়েছিল এবং অন্যরা বলে যে এটি প্রতিরোধের উপস্থিতিও করতে পারেনি এবং লড়াইয়ের প্রয়োজন ছাড়াই বিজয় লাভ করেছিল।
ঐতিহাসিকগন, যে সাধারণ তথ্য বের করতে পেরেছেন তার একমাত্র সাধারণ ঘটনাটি হ'ল সাইরাস ইউফ্রেটিস নদীর জলকে কোনও সমস্যা ছাড়াই অতিক্রম করার জন্য প্রবাহিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর পরে, তার সৈন্যরা যখন একটি ছুটি উদযাপিত হচ্ছিল এমন একটি রাতে ব্যাবিলনে প্রবেশ করেছিল। শহরটি যুদ্ধ ছাড়াই নেওয়া হয়েছিল।
ব্যাবলনীয় শাসনের বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারনে সমাপ্তি ঘটেছিল। পরবর্তীকালের প্রতি জনগনের বিরোধিতা দাঁড়ালো, এই বৈধ,রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ সালের দিকে পার্সিয়ানরা এই অন্চল শাসন করলেও বেশিদিন নিজেদের দখল রাখতে পারেনি। রোমানরা পার্সিয়ানদের কাছ থেকে দখল কেড়ে নেয়। কিন্তু, তারাও খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ সালের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। পার্সিয়ানরা এই অন্চলের নিয়ণন্তন আবার নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় এবং প্রায় সপ্তম শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করে। এই সময় মেসোপটেমিয়াতে ব্যাপক ভাবে পার্সিয়ান প্রভাব পড়েছিল।
এরপর শুরু হয় মুসলিম শাসামল। এই সভ্যতা ইসলামের রাজধানী হিসাবে আত্বপ্রকাশ করে পুরো পৃথিবীতে আধিপত্য বিরাজ করে। বাগদাদের খলিফা হারন-আর-রশিদ এই মেসোপটেমীয় সভ্যতার উপর তার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলো। পরবর্তীতে এই অন্চলে খিলাফাত শাসন স্থায়ী হলে এই স্থানটি ইরাক নামে পরিচিত লাভ করে।
রোমানা আক্তার
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
তথ্যসূত্র
1. সর্বজনীন ইতিহাস। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া। মিহিস্টোরিয়াউনিভার্সাল ডট কম থেকে প্রাপ্ত
2. শিক্ষাগত পোর্টাল। মেসোপটেমিয়া। পোর্টেডেলুকাটিভ.নেট থেকে প্রাপ্ত
3. বাস্ক সরকারের শিক্ষা বিভাগ। মেসোপটেমিয়া। Hiru.eus থেকে প্রাপ্ত
4. ইতিহাস. কম সম্পাদক। মেসোপটেমিয়া। ইতিহাস ডট কম থেকে প্রাপ্ত
5. খান একাডেমি. প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা। খানচাদেমি.অর্গ.ওর থেকে প্রাপ্ত
6. ডায়েট ও এডজার্ড, রিচার্ড এন। ফ্রাই, ওল্ফ্রাম থ্রি ভন সোডেন। মেসোপটেমিয়ার ইতিহাস। ব্রিটানিকা ডট কম থেকে প্রাপ্ত
7. তরুণ, সারা পি। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং সভ্যতার উত্থান। প্রাচীন- origins.net থেকে প্রাপ্ত
8. নেলসন, কেন। ইতিহাস: বাচ্চাদের জন্য প্রাচীন মেসোপটেমিয়া। Ducksters.com থেকে প্রাপ্ত



No comments