Header Ads

Header ADS

হাইতি সঙ্কটঃ লাতিন আমেরিকান রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহিংস হস্তক্ষেপ

 

style="text-align: left;">হাইতি সঙ্কটঃ লাতিন আমেরিকান রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহিংস হস্তক্ষেপ

হাইতির রাজনৈতিক সংকট


০৭ জুলাই ২০২১, মধ্যরাত, একদল সশস্ত্র সৈন্য হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনাল মোসের নিজস্ব বাসভবনে প্রবেশ করে আচমকা হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট মোসেকে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাকান্ড সমগ্র হাইতি সমাজকে বেশ আতঙ্কগ্রস্থ করে রেখেছে। যদিও বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট যে কারা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বা কি উদ্দেশ্য নিয়েই বা হত্যাকাণ্ডটি চালানো হয়েছে? প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে যে এই হত্যাকাণ্ডের িপছনে কয়েকটি দল (কলম্বিয়ার মাদক পাচারকারী, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কিছু নিরাপত্তা কম্পানি ও দেশিয় কিছু বিরোধী গ্রুপ) এর একটি সমন্বিত টিম কাজ করেছে।  

প্রেসিডেন্ট জোভেনাল মোসে দেশের নাগরিকদের কাছে তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না এবং সম্প্রতি যখন তিনি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে যাচ্ছিলেন, তখন দেশব্যাপী একটা চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিলো। যাইহোক, এই হত্যাকাণ্ড হাইতির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে অনেকটা অনিশ্চিত করে তুলতে পারে, বিশেষত ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য দেশের অভ্যান্তরীন শক্তিগুলোর মধ্যকার অসম প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি, এবং সেক্ষেত্রে দেশব্যাপী যেকোন গণবিক্ষোভকে কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করবে ক্ষমতা দখলদারী দল।    

অন্যদিকে হাইতির অভ্যান্তরীণ অস্থিতিশীলতাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো ঢালাওভাবে লেখা শুরু করবে যাতে এই অস্থিরতাকে চরম লেভেলের ট্যাগ দেয়া যায়। যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট বিষয়টি উপস্থিত হবে, তখন বিশ্ব শান্তির ও  হাইতিকে স্থিতিশীল করার গুরু দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন নিজ কাধে তুলে নেবেন- অর্থাৎ তারা হাইতির অভ্যান্তরীন বিষয়ে আবারো হস্তক্ষেপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সহিংস হস্তক্ষেপের সমীকরণটি ঠিক এমনই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অনেক আগ থেকেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এই ধরণের হস্তক্ষেপের সম্মুখীন একাদিকবার হয়েছে, এমনকি হাইতি নিজেরও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে হাইতিকে স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতার বিপরীতে অনেক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।  

হাইতিতে বৈদেশিক বৈদেশিক হস্তক্ষেপের ইতিহাসঃ

প্রেসিডেন্ট মোসের হত্যাকাণ্ডকে বিশদভাবে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো হাইতির সমাজিক পরিস্থিতিকে চারটি বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত করেছে। যথাঃ বিশৃঙ্খলা (Chaos), সংঘর্ষ (Turmoil), দরিদ্র (Poverty), এবং দুর্নীতি (Corruption)। নিউ ইয়র্ক টাইমস তার সম্পাদকীয় পাতায় হাইতি সঙ্কট বিশ্লেষণে লিখেছেন, “হাইতিতে গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক বিশৃংখলা ও সংঘর্ষ এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে আরো অস্থিশীল পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বিশেষত ক্ষমতা দখল নিয়ে যে ন্যাক্কার প্রতিযোগিতায় রাজনৈতিক দলগুলো মত্ত তা এই অস্থিতিশীলতাকে আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে।“ 

নিউ ইয়র্ক টাইম সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো মোটামুটি একই ধরনের ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করেছে। তাদের উপস্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে তারা (মিডিয়াগুলো) এই বার্তাটি দিতে চায়, হাইতি রাষ্ট্রটি একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র, তারা নিজেদের শাসন কাঠামো নিজেরা পরিচালনায় অক্ষম। হাইতিতে বর্তমানে যে বিশৃঙ্খলা বিরাজমান তার একমাত্র কারণ দেশের অভ্যান্তরীণ দুর্নীতি, অদক্ষতা, এবং আইনের শাসনের অভাব। মজার বা দুঃখের ব্যাপারটি হল মিডিয়া সুন্দর বর্তমানের দুর্ঘটনাকে দেশীয় উৎপাদন হিসেবে চিহ্নিত করলেও, হাইতিতে চলা দীর্ঘদিনের বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কি নিষ্ঠুরতার সাথে হাইতির স্বাধীনতা ও গনতান্ত্রিক অধিকারকে ভূ-লন্ঠিত করেছে সে কথাকে হয়তো ভুলে গেছেন, অন্যথায় ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাচ্ছেন।  

২২ আগস্ট ১৭৯১, ফরাসী উপনিবেশ সেন্ট ডমিঙ্গোতে একদল দাস বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৮০৪ সালের ১ লা জানুয়ারি, বিদ্রোহ ঘোষণার এক দশকের মাথায় কৃষ্ণাঙ্গ বিপ্লবীরা উপনিবেশ শাসন বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, এবং হাইতিতে কৃষ্ণাঙ্গ সমাজ সর্বপ্রথম গভার্ণিং বডি গঠন করে। 

কিন্তু উপনিবেশিক ফ্রান্সের শক্তির কাছে সেই আন্দোলন বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফ্রান্স আবারো হাইতির উপর তার শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালায়। ১৮২৫ সালে, হাইতির আত্ম-নিয়ন্ত্রিত সরকার আবারো ফরাসী আক্রমণের স্বীকার হয়। ফলে হাইতির নব গঠিত সরকারের প্রেসিডেন্ট জেন পিয়েরে বয়ের হাইতির স্বাধীনতার অর্জনে বিরাট অংকের ক্ষতিপূরণ ফরাসী সরকারকে দিতে বাধ্য হন। বিশেষজ্ঞদের মতে হাইতির অর্থনৈতিক সংকটের বীজ ঠিক তখন থেকে অঙ্কুরিত হয়। 

কিন্তু এখানেই সব শেষ হয়ে যায় নি। হাইতির সার্বভৌমত্ব আবারও বৈদেশিক শক্তি কর্তৃক ব্যহত হয়, এবং এক্ষেত্রে সেই শক্তি তার প্রতিবেশি যুক্তরাষ্ট্র। যুগের পর যুগ, যুক্তরাষ্ট্র- হাইতির সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হেনেছে; হাইতির সমুদ্রবন্দর ও স্থল বন্দরগুলোকে দখলে রাখার চেষ্টা করেছে; এবং বারবার হাইতির জনগণের বিরোধীতার সম্মুখীন হয়েছে এবং সহিংস হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিজ অনুকূলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র- হাইতির ভূমি অধিগ্রহণ শুরু করে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অনেক পরিমান অর্থ কব্জা করে তা নিউ ইয়র্কে চালান করতে থাকে। পরবর্তীতে কয়েকবার হাইতি সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক নিরাপত্তার প্রস্তাব দিলে হাইতি সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেন।  

১৯১৫ সালে যখন হাইতির প্রেসিডেন্ট জেন ভিলব্রাম গুল্লিয়াম আততায়ীর অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ড উইড্রো উইলসন মার্কিন সেনাবাহিনীর সাহায্যে হাইতির ভূখণ্ড দখল করেন। সেখানে প্রায় ১৯ বছর মার্কিন সেনারা অবস্থান করে; দেশব্যাপী বর্নবাদ প্রতিষ্ঠা করে; প্রেসের স্বাধীনতাকে খর্ব করে; এবং হাইতি অধিবাসীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান কিন্তু হাইতিতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপের সমাপ্তি ঘটায় নি, বরং ১৯৩৪ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে একনায়কতান্ত্রিক সরকার কাঠামো চালু ছিলো। ১৯৮০র মাঝামাঝিতে হাইতিতে গণতান্ত্রিক শাসনের সূচনা ঘটে। কিন্তু সেই থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় ২০ বার হাইতির রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন হয়েছে, এবং প্রত্যেক পরিবর্তনের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের বড় হস্তক্ষেপ ছিলো। ১৯৯০ সালে, জেন বারটার্ন্ড এরিস্টাইড হাইতির প্রথম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু এক বছরের মাথায় মার্কিন সৈন্য আবার হাইতি দখল করে। এরিস্টাইড ২০০০ সালে আবার নির্বাচিত হন, কিন্তু আবারো ছোট একটা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, এবং এবারও এই অভ্যুত্থানের পিছনে সিআইএ র বড় হাত ছিলো। 

হাইতির গণতান্ত্রিক বিকাশের পথকে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক হস্তক্ষেপ কিভাবে বাধাগ্রস্থ করছে এরিস্টাইডের উদাহরণটা সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসের বিখ্যাত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামিমা পিয়েরে বলেছেন যে ২০০৪ সাল থেকে হাইতির সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক উন্মেষকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও অচল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সহিংস সামরিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। 

সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরিস্টেডকে যখন ক্ষমতা থেকে সরানো হয় তখন থেকে আবারো হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরোক্ষ দখলদারিত্ব কায়েম হয়। কিন্তু এইবার জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রেরণ করে হাইতিতে, এটা বুঝানোর জন্য যে, হাইতির সার্বিক অবস্থা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য অনেকটাই হুমকি স্বরূ্প। প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে হাজারো শান্তিরক্ষী বাহিনী হাইতিতে পদার্পণ করেন। কিন্তু আসল যে অনিরাপত্তা বা অশান্তি তার প্রশমন ঘটেনি। উপরন্ত কলেরা মহামারি এবং ধর্ষণের হার অনেকগুন বেড়ে যায়।  

 ডেভিডসন কলেজের আমেরিকান স্ট্রাডিজের অধ্যাপক মামিরাহ প্রোসপারের মতে হাইতির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থাকে আরো কয়েকগুণ বাজে অবস্থায় নিয়ে যায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনী হাইতিতে প্রায় ১৭ বছর অবস্থান করেছে, কিন্তু এই বছরগুলোতে হাইতিতে পূর্বের তুলনায় মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

দাতা প্রতিষ্টানগুলোর ব্যর্থতাঃ 

পূর্ববর্তী সরকার ব্যবস্থার এই নড়বরে অবস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রের উপর চরমমাত্রার অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা হাইতির সাধারণ নাগরিকদের আর্থিক-সক্ষমতাকে অনেকাংশেই সীমাবদ্ধ করে ফেলে। ২০১০ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং পরবর্তী বছরে দেশজুড়ে মহামারী কলেরার প্রাদুর্ভাব দেশের সকল উন্নয়ন কার্যক্রমকে ব্যাহত করেছে। এই ধ্বংসলীলা থেকে দেশকে বাঁচাতে সরকার অনেক প্রচেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে হাইতিতে প্রচুর বিদেশী সাহায্য আসতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্পোরেশন ও লাতিন আমেরিকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার সাহায্য পাঠায় ঋণ হিসেবে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পুনঃগঠন ও অসহায় হাইতিবাসীদের কিছু সাহায্য ছাড়া, এই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্পোরেশনগুলি দেশের নাগরিকদের জীবনমানের তেমন কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। 

যাইহোক, ভূমিকম্পের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন এবং তার স্ত্রী ও ওবামা প্রশাসনের সেক্রেটারি হিলারি ক্লিনটন নিজেদেরকে হাইতির অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে সংযুক্ত করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট সহায়তা চান। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা বলেন, শুধু বহুজাতিক কম্পানি প্রতিষ্ঠা ও তাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে হাইতির সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব। সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা “ক্যারাকোল” নামে নতুন শিল্প পার্ক গড়ে তোলেন, এবং তারা বলেন এই পার্কের উৎপাদন ও অবকাঠামোগত উতকর্ষতার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো সুদৃঢ় করা সম্ভব হবে। কিন্তু এক দশক পরে দেখা যায় শুধু প্রতিষ্ঠানের পকেটই ভরেছে কিন্তু হাইতিতে তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। এমনকি যে সমুদ্র বন্দরটির ব্যবহার করে উতপাদিত পণ্য রপ্তানি করা হত, সেখানেও কোনধরনের আধুনিক প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। 

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যদাতা সংস্থা USAID হাইতির ভূমিকম্পের পর প্রায় সারে চার বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিলো, কিন্তু ধ্বংসের তীব্রতার কাছে সে সাহায্য খুব একটা ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Center for Economic and Policy Research এর সিনিয়র গবেষক জ্যাক জহনসন বলেছেন যে এই যে বিপুল অর্থ হাইতিকে সাহায্য দেয়া হয়েছে তার মাত্র ২ শতাংশ সাহায্য হাইতির প্রশাসনের হাতে দেয়া হয়েছে, আর বাকী অংশ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে যারা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যান্ডেট নিয়েই আসলে সেখানে কাজ করেছে। আবার এই ২ শতাংশ অনুদান থেকেও হাইতির প্রশাসনিক কর্মকর্তারা অনেক ্সাহায্য নিজেরা আত্মসাৎ করেছিলো। যেমনঃ ২০০৮ থেকে ২০১৬ এর মধ্যবর্তী সময়ে ভেনিজুয়লার সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা পেট্রো ক্রাইব হাইতিতে ৪০০ প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেন। কিন্তু এই বিশাল অংকের বেশীরভাগই হাইতি প্রশাসনের পকেটে চলে যায়। 

হাইতির সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারঃ

জোবেল মোসের হত্যাকাণ্ডের পর ক্লদ জোসেফ কোনরূপ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় না গিয়ে নিজেকে অন্তরবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, এরিয়েল হেনরি, যিনি মোসের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনিও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার হাইতির সিনেটের সভাপতি জোসেফ ল্যামবেরটও নিজেকে অন্তরবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট দাবী করছেন। এই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে আরো অনেকাংশে বর্ধিত করেছে আইন সভার অনুপস্থিতি। কারণ মোসের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আইনসভার মেয়াদও শেষ হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর অজুহাত দিয়ে মোসে তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেন এবং এবছর সেপ্টেম্বর নাগাদ দেশব্যাপী গণভোটের আয়োজনের আশ্বাস দেন। হাইতির সাধারণ নাগরিকরা ্মোসের এই সিদ্বান্তে চরম নাখোশ ও নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে খুবই সন্ধিহান ছিলেন। হাইতির সুশীল সমাজ কোন ধরণের বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ব্যাতিরেকে একটি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। 

হাইতির সক্ষমতাঃ 

বৈদেশিক আর্থিক সাহায্য ছাড়া যে কোন ধরনের বৈদেশিক হস্তক্ষেপ ব্যাতিরেকে হাইতি অধিবাসীরা তাদের দেশকে সঠিক দিশায় নিয়ে যেতে সক্ষম। হাইতির রাজনৈতিক ইতিহাসই এমন; তারা দেশের গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক অধিকারের জন্য বারংবার আন্দোলন করেছে; দেশের নেতৃবৃন্দদের শাসনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অনেকবার রাস্তায় নেমেছে; এবং বৈদেশিক শক্তির হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে অনেক রক্ত ঝড়িয়েছে। হাইতির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাথে আন্দোলন-বিক্ষোভ অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাইতি নাগরিকরা হাইতির রাজনৈতিক স্বাধীনতা, সম্মান নিয়ে বেচে থাকা, জাতিসংঘের মিশনের ইতি এবং মোসের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিপরীতে অহিংস আন্দোলনরত রয়েছে। 

হাইতির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যাত্রা যে একদম মূল থেকেই শুরু করতে হবে এ কথা গ্লোবাল ব্লাক একটিভিস্টরা অনেকবার উল্লেখ করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেটাকে বারবারই পাশ কাটিয়ে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান “ব্লাক এলাইয়েন্স ফর পিস” এর সাধারণ সম্পাদক আজামু বারাকা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন হাইতিদের তাদের নিজস্ব সমস্যার কারণ খুজে বের করা পাশাপাশি সেই সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে করে দিতে হবে। স্থিতিশীলতার নাম নিয়ে যেকোন সহিংস বৈদেশিক হস্তক্ষেপের হাত থাকে হাইতিকে রক্ষা করতে হবে। 

যাইহোক, আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোকে অবশ্যয়ই হাইতি সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ চয়ন থেকে সরে এসে এই দেশটির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে হবে। হাইতিবাসীদের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আকাংখাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অবশ্যয়ই বাস্তবতাকে তুলে ধরতে হবে, কিন্তু বর্তমান বিশৃঙ্খলা, সংঘাত, দারিদ্রতা ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে আনুপাতিক বিশ্লেষণও দরকার- অর্থাৎ হাইতির এই দুর্গতির পিছনে তাদের নিজেদের দায় কতটুকু আর বৈদেশিক হস্তক্ষেপের দায়বদ্ধতা কতখানি। তাহলেই হাইতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি ভালো ধারনা তৈরি হবে, এবং এই সম্ভাবনাময়ী দেশটির ভবিষ্যৎ গঠনে হাইতিদের পাশাপাশি তারাও সহায়তা করতে পারবে।


মুল লেখকঃ

এডনা বোনহোম্মে

জার্মান ভিত্তিক ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞান বোর্ডের গবেষক।

আল-জাজিরা পত্রিকার সম্পাদকীয় থেকে নেয়া হয়েছে।


অনুবাদকঃ

বদিরুজ্জামান

শিক্ষানবিশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিক্রমা 



No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.