Header Ads

Header ADS

ইউক্রেন যুদ্ধের তিনটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ....

 


আমরা হয়তো ভুলেই যেতে পারি কতটা সাহস ও কৌশলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফেব্রুয়ারির ২৪,২০২২ তারিখ ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিলো। সর্বোপরি ইউরোপে রাশিয়ার পর আয়তনে বৃহত্তম দেশ ও জনসংখ্যায় ষষ্ঠ সর্বোচ্চ দেশ হল ইউক্রেন। বস্তুত, যদিও আগে পুতিন তার আক্রমণাত্মক নীতির দ্বারা এই অঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বজায় রাখতে চেয়েছে, কিন্তু ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করার ক্ষেত্রে পুতিন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। ক্রিমিয়া দখলের পর পুতিন ইউক্রেনে আরো দুইটি ছিটমহল সমস্যা তৈরি করে, প্রথমটি ডনবাস রাজ্যের কিছু অংশ নিয়ে, দ্বিতীয়টি পূর্ব ইউক্রেনের লুগানস্ক ও ডোনেস্ক রাজ্যগুলো নিয়ে। লুগানস্ক ও ডোনেস্ক ইউক্রেনের দুটি সম্পদশালী রাজ্য এবং পুতিন এই দুটি অঞ্চলই দখলে নিয়েছে।

 রাশিয়া যখন সিরিয়া সংকট সমাধানে গিয়েছিলো তখন শুধু তারা রাশিয়ার মিশাইল ও আকাশ শক্তিকেই কাজে লাগিয়েছিলো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া তাদের আসল যুদ্ধ কৌশলে ফিরে আসে, অর্থাৎ যুদ্ধবিমান, ট্যাংকার, আর্টিলারি, যুদ্ধজাহাজ এবং মিশাইল সাজিয়ে তারা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়। কিন্তু, পুতিন যদিও অনেকটা আশাবাদী ছিলেন যে তার এই শক্তিশালী বাহিনী খুব সহজে কিয়েভ দখল করে নেবে, তা কিন্তু হয়নি। বস্তুত কিয়েভ, চেরনিহিব, সামি এবং খারকিব দখলে গিয়ে রাশিয়ান বাহিনীকে ভালোই ধকল পোহাতে হয়েছে এবং হচ্ছে।। 

ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ চেতনার উন্মেষ ঘটেছে। পশ্চিমা অনেকগুলো গণমাধ্যম এই যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ব্যাপারটা বড় করে প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো অধিকাংশই অতিরঞ্জিত, যদিও ক্ষয়-ক্ষতি রাশিয়ার মোটামুটি ভালোই হয়েছে। অন্যদিকে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পুর্ব অংশে ভালোভাবেই অগ্রসর হচ্ছে।  তারা কৃষ্ণসাগর, খোরসান অঞ্চল, ডনবাসের পূর্বের অংশ এবং ঝাপোরঝিঝিয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব দখলে নিয়েছে। ২০১৪ সালের পর, প্রথম বারের মতন রাশিয়ানরা ক্রিমিয়ার সাথে রাশিয়াকে সং্যুক্তকারী করিডোর দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।  

মে মাসের প্রথম থেকেই রাশিয়ান বাহিনী ডনবাস অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে দখলের চেষ্টা চালায়, এবং পূর্বের দখলকৃত অঞ্চল, করিডোর এই ক্ষেত্রে রাশিয়াকে সাহায্য করেছে। জুন থেকে যুদ্ধ বিরতি নিয়ে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন তদবির শুরু হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। রাশিয়ার দেয়া শর্ত না মানা হলে রাশিয়া যুদ্ধ থামাবে না, অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিশাল শস্যভাণ্ডার এখন রাশিয়ার দখলে এবং আমেরিকার অবরোধের পর রুবলের বিনিময়ে রাশিয়ার প্রাকৃতিক  সম্পদ ক্রয় করার ঝামেলা ইউরোপীয়দের এক জটিল সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। যাইহোক, নিচে ইউক্রেন সংকটের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে তার তিনটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা তুলে ধরা হল।।

ইউক্রেনের  বিভাজনঃ

প্রথম সম্ভাব্য ভবিষ্যতটা এমন হতে পারে যে পুতিন এই যুদ্ধে অনেকাংশেই এগিয়ে গেছে; রাশিয়ার সৈন্যরা ডনবাস অঞ্চল সহ সমগ্র কৃষ্ণসাগর দখল করে নিয়ে ইউক্রেনকে একটি ক্ষুদ্র, দুর্বল ও স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। অতঃপর পুতিন বললেন এই স্পেশাল অপারেশন সফল হয়েছে এবং তিনি যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করবেন, তাই তিনি তার কমান্ডারদের বললেন বিজিত অঞ্চলকে ঘিরে ফেলা হোক, এবং রাশিয়ান সৈন্যদেরকে নিজেদের সীমানায় নিয়ে আসা হোক। 

পুতিন তার বিজিত অঞ্চল রক্ষায় ইউক্রেনের যেকোন আঘাত আকাশ পথে ও মিশাইলের সাহায্যে ব্যর্থ করতে পারেন। ফলে ইউক্রেনের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থায় আরো বেশি করে পচন ধরবে। যেমন ইউক্রেনের যেসকল প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো গড়ে মাসে ৫-৬ বিলিয়ন ডলার যে উপার্জন রয়েছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে; ইউক্রেনের জিডিপির ৪৫ শতাংশ ইতিমধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত  হয়েছে; তার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের শস্য রপ্তানি এখন বন্ধ, কারণ একমাত্র চ্যানেল কৃষ্ণসাগর এখন রাশিয়ার দখলে। এপ্রিলে একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ইউক্রেনের এই যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন পরবে। 

ধরলাম ইউক্রেন এই বিভাজনকে গ্রহণ করে নিলো। তখন ইউক্রেনের এক বিরাট অংশে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদোমির জেলেনেস্কি দেশের ভিতরে চরম জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন। অন্যদিকে জেলেনেস্কির হাতেও অপশন নেই বললেই চলে- হয় বিভাজন মেনে নিবে অথবা এই দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে নাজুক হয়ে পড়বে। 

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন, কারণ মিত্র রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পথেই তাদের চলতে হচ্ছে, না চাইলেও আমেরিকার কথামতো রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হচ্ছে, যা আসলে কোনভাবেই ইউরোপের কল্যাণ বয়ে আনবে না। যেহেতু এতগুলো নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতি একেবারে তলানিতে এসে পড়েছে, তাই পুতিন রাশিয়ার খাদ্যশস্য ও জ্বালানি রফতানি মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। 

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে গত ৪০ বছরে মধ্যে ২০২২ এ সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রায় ৮.৬%)। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল বাজেট দপ্তর থেকে বলা হয়েছে যে, বর্তমানে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর ৩.১%, ২০২৩ সালে তা কমে ২.২% এবং ২০২৪ সালে ১.৫% হতে পারে। অর্থনৈতিক এই বেহাল অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ভাটা সৃষ্টি করেছে, ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মাত্র ৩৯.৭% শতাংশ চায় বাইডেন আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিক। 

ইউরোপও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে গেছে। ১৯৯৭ সালের পর থেকে এই প্রথমবার ইউরো জোনে জ্বালানি পণ্য ব্যবহারে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে ও মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে ৮.১ শতাংশ হয়েছে।  রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমনের কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম লিটার প্রতি ৭০ সেন্ট করে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যারেলের দাম লাফ দিয়ে ১০৫ ডলার হয়েছে যা ক্রিমিয়া সংকটের পর সর্বোচ্চ। জুনের ৮ তারিখ গ্যাসের দাম শেষ ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়েছে। OECD বলে,  যুদ্ধ শুরুর থেকে জার্মানি, ইতালি ও ফ্রান্সের কোন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি, এবং তারা আরো আশা করছে যে আগামী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশ অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হতে পারে। 

অন্যদিকে যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রথম সামরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরিকে সফল হিসেবে প্রচার করা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক যে মন্দাভাব শুরু হয়েছে তা কিছুদিনের মধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকায় ইউক্রেন সঙ্কটকে একটা মাথাব্যথার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এদিকে ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রধান হেডলাইন হিসেবে ইউক্রেন সংকটের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন সংকটের নিরসনের বড় ভাই জো বাইডেন নিজেই তার দলীয় ও অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়াকে নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন, এবং ইউক্রেন যুদ্ধে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ও অস্ত্রের  যে সাহায্য বাইডেন দিতে চেয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। 

ইউক্রেনের এই বেহাল দশা, পশ্চিমাদের মাথাব্যথা ও রাশিয়ার সামরিক সফলতা- ভ্লাদিমির পুতিনকে এই বাজীতে অনেকটাই এগিয়ে রাখছে। ইউরোপীয় শক্তিগুলোর প্রতিপক্ষ হিসেবে পুতিন নিজের কৌশলগত অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পেরেছে, এখন ইউক্রেন সংকট ইস্যুতে, পুতিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপের শক্তি প্রদর্শনের বিপরীতে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে। সম্প্রতি জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেন পশ্চিমাদের আর্থিক অথবা সামরিক সহায়তা হয়তো অনেকদিনই পেতে থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে হয়তো পশ্চিমা শক্তিগুলোর সমর্থন অনেকটাই কমে যাবে, হয়তো মৌখিক সৌহার্দের কথাই আওড়ে যাবে ইউক্রেনের পশ্চিমা বন্ধুরা। এবং এই সকল কাজই ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিভাজন শর্তকে মেনে নিতে বাধ্য করবে। 

নিরপেক্ষ নীতি ব্যবহারঃ

যুদ্ধের অনেক আগে থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনকে ন্যাটোতে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করে যাচ্ছিলো। কিন্তু ২০০৮ সালে বুখারেস্টে ন্যাটোর সম্মেলনে যখন রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলোকে ন্যাটো সদস্যপদ দেয়ার ব্যপারে সুযোগ করে দেয়, তখন থেকেই ইউক্রেন নিজেকে ন্যাটোভুক্ত করার জন্য দেন দরবার করে যাচ্ছিলো। পুতিন যখন ইউক্রেনে আক্রমণ চালায় এবং কৌশলগত পজিশনে চলে যায় তখন জেলেনেস্কি নিজেদের ন্যাটো থেকে নিরপেক্ষ রাখার ব্যাপারে রাশিয়াকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। 

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ চার মাস হতে চলল। উভয়ই কম বেশি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উভয়েই জানে এই যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে চলবে। ইউক্রেনের জন্য হুমকিটা বেশি কারণ লম্বা যুদ্ধের প্রতিফল হিসেবে রাশিয়া ইউক্রেনের অধিকাংশ জায়গাই দখলে নিবে। অন্যদিকে রাশিয়াও চায় থামতে এবং তার উপরে যে বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা তুলে নিতে, অন্যথায় রাশিয়া চীনের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল হয়ে পরবে। 

এই পরিস্থিতিতে উভয়েরই নিরপেক্ষ পজিশনে বজায় রাখতে হবে। রাশিয়ার দিক থেকে সে শুধু ক্রাইমিয়া ও ইউক্রেনের কিছু অংশ গ্রহণ করে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা দিতে পারে। সে ইউক্রেন থেকে গ্যারান্টি নিতে পারে যে, রাশিয়াও তার সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করবে কিন্তু সেই ক্ষেত্রে ইউক্রেন কোনরূপ বাধা প্রদান করবে না। বিনিময়ে রাশিয়া ডনবাস অঞ্চল থেকে তার নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেবে। রাশিয়া নিশ্চয়ইতা দিবে যে, ইউক্রেনকে যেকোন দেশ অস্ত্র সহায়তা ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিতে পারবে, কিন্তু ইউক্রেন নিশ্চয়তা দিবে যে, কোন ধরনের বিদেশি বাহিনীকে ইউক্রেন তার ভূমিতে সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলতে দেবে না। 

এই ধরনের সমাধানের জন্য ইউক্রেনকেই বেশিরভাগ আত্মত্যাগ করতে হবে, বিশেষত ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে হবে, যা সত্যিই ইউক্রেনের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যের। 

নতুন রাশিয়াঃ 

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই জো বাইডেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা একটা কথাই ভেবে আসছে কিভাবে রাশিয়ার শাসন কাঠামো ঠিক রেখে পুতিনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া যায়। ইউক্রেনকে দখল করে পুতিন তার সক্ষমতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। এমনকি এত বিশাল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ সত্বেও রাশিয়ার এলিট ও সাধারণ নাগরিকদের থেকে রাশিয়ার যুদ্ধে জড়ানোর বিপরীতে কোন ধরনের মুভমেন্ট দেখা যায়নি। 

যদি ধরেও নেই যে রাশিয়ার ক্ষমতা থেকে পুতিনকে টেনে নামানো হবে। কিন্তু শূন্যস্থানে যে বসবে সেও তো পুতিনের সার্কেলের কেউ হতে পারে। রাশিয়ার জনগণ যখন যুদ্ধকে মেনে নিয়েছে, নতুন প্রার্থী কি চাইলেই রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে সরিয়ে আনতে পারবে বা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা থেকে রাশিয়ার অর্থনীতিকে বাচাতে পারবে? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর ধোঁয়াশা হয়েই থাকবে। আর সবচেয়ে বড় কথা রাশিয়ার ক্ষমতা থেকে চাইলেই যে পুতিনকে সরানো যাবে এই চিন্তা করাটাও বোকামি হবে। 

অন্য যে চিন্তাটি পশ্চিমাদের মাথায় আসতে পারে তা হল রাশিয়ায় গণতন্ত্রের বিকাশ এবং গণ আন্দোলনের মাধ্যমে একনায়ক পুতিনকে রাশিয়ার ক্ষমতা থেকে সরানো। কিন্তু এতো বিরাট একটি দেশে এভাবে গণ আন্দোলন অক্টোবর বিপ্লবের পর আর হয় নি, এবং দেশের জনগণের মধ্যে একটা বড় অংশ পুতিনের সমর্থক হওয়ায় সেই সুযোগটাও তেমন একটা নেই। আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথায় রাখতে হবে গণতন্ত্রের কথা বলে যদি রাশিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তবে এই বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রের দেশ হিসেবে রাশিয়া তখন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে যা কারোই কাম্য নিয়, বিশেষত ইউরোপীয়দের। 

এই যুদ্ধের সমাপ্তি এখন অতি প্রয়োজনীয়ঃ  

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত বিপর্যয় ও পশ্চিমা অর্থনীতির উপর যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব বাড়তেই থাকবে যদি এই যুদ্ধের সমাপ্তি এখনই ঘটানো না যায়। আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো এই যুদ্ধের ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। খরা ও আঞ্চলিক সংঘাত তো আছেই, উপরন্তু এই যুদ্ধ এই অঞ্চলে খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে এবং অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনে র খাদ্য শস্যের উপর নির্ভরশীল এবং খাদ্য যেহেতু সরবরাহ কমে গিয়েছে তাই দুর্ভিক্ষ তৈরির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। আফ্রিকার পাশাপাশি পৃথিবীর অন্য অনেক দেশে এই যুদ্ধ নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত জ্বালানি সেক্টরে। সর্বোপরি ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এখনই যৌক্তিক সমাধানে যেতে হবে, এবং সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও উভয়ের মাঝে সমাধানে পথ বাতলে দিতে হবে। কোভিডের পর বিশ্বে আবার যে বিপর্যয় শুরু হল (ইউক্রেন যুদ্ধ), অতিদ্রুতই তার সমাধান আমরা আশাকরি। 




অনুবাদকঃ বদিরুজ্জামান 

মূল লেখকঃ 

Rajan Menon, Bernard Spitzer Professor of International Relations at Powell School, city college of New York, director of the Grand Strategy Programme at Defense Priorities and Senior Research Scholar at Saltzman Institute of War and Peace at Colombia University. 

https://www.newagebd.net/article/175092/three-possible-futures

















































No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.