সক্রেটিসের মৃত্যু
![]() |
| হেমলক বিষ হাতে প্লেটো ও বিষ পানের আগে শিষ্যদের উদ্দেশ্যে সক্রেটিসের বক্তব্য |
মৃত্যুভয় প্রজ্ঞা অপেক্ষা মহৎ নয়, কারণ কেউ জানেনা জীবন অপেক্ষা মৃত্যু শ্রেয় কি না?"
সক্রেটিসকে কেন মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো?
খ্রীষ্টপূর্ব ৪৬৯ অব্দে, এথেন্সে মহান দার্শনিক সক্রেটিস জন্মগ্রহণ করেন। সক্রেটিস সম্পর্কে আলোচনা করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৩৯৯ অব্দে এথেন্সের ক্ষমতাসীন রাজা এই মহান দার্শনিককে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন। ঘোষণার প্রায় এক মাস পর তিনি প্রথাগত মৃত্যুদণ্ড সাজা হিসেবে হেলমক বিষ পানে মৃত্যুবরণ করেন। সক্রেটিসের দুই ছাত্রঃ প্লেটো ও জেনোফোনের রচিত গ্রন্থে সেই করুন বিবরণ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, মহান দার্শনিক সক্রেটিস তার নিজ দেশ এথেন্সে আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ততকালীন গ্রীক মিথোলজি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় পুরুহিত ও রাজাদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় ছিলো। ফলে এথেন্সে সত্য ও আদর্শিক সমাজের অনুপস্থিতি সক্রেটিস লক্ষ করেন। সক্রেটিস আস্তিক ছিলেন, কিন্তু ততকালীন জড়- মিথলজি কখনোই সক্রেটিসকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, বরংঞ্চ সক্রেটিস এই মিথ্যা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। এই বিরুদ্ধাচারণ শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে আঘাত হানে এবং তারা সক্রেটিসের বিরুদ্ধে ধর্ম- অবমাননা ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আনেন।
কিন্তু সত্য জ্ঞানের পুজারি সক্রেটিস সেই সকল অভিযোগকে থোড়াই পরোয়া করেছেন। তিনি যুব সমাজকে একে অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি দিকে মনোনিবেশ করতে জোর দেন। তিনি বলেন, "সবচেয়ে মহৎ উপায়টি হল নিজেদের উন্নয়ন ঘটানো, কিন্তু অন্যকে আঘাত করে নয়"। তিনি সবসময়ই অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন তাকে শাসকশ্রেণীর রোষানলে পড়তে হবে। কিন্তু তবুও তিনি দমে যাননি।
তার বিভিন্ন বক্তব্যের জেড়ে তাকে যে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় সেক্ষেত্রে তাকে বলা হয় যদি সে সবার সামনে তার বক্তব্যের ভুল স্বীকার করে নেয়, যদি সে এথেনীয়দের প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসের পক্ষে প্রচারণা চালায়, তবেই তার মুক্তি মিলতে পারে। তার শিষ্যরাও অনেক অনুরোধ করেছিলেন সক্রেটিসকে যেন তিনি অন্যায় স্বীকার করেন নেন। কিন্তু তিনি তার শিষ্যদের মনে করিয়ে দেন সদজ্ঞানের বড় বৈশিষ্ট্য হল মিথ্যা বা অন্যায় আবদারের কাছে অবনমিত না হওয়া।
" মৃত্যুভয় প্রজ্ঞা অপেক্ষা মহৎ নয়, কারণ কেউ জানেনা জীবন অপেক্ষা মৃত্যু শ্রেয় কি না?"
ফলে সক্রেটিস হেলমেক বিষ পাণ করেন, এবং সত্যকে জয়ী করে রেখে যান।
মুশরেখা নাজনীন রুনা
প্রথম বর্ষ
দর্শন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


No comments