সক্রেটিসের শিক্ষাদান পদ্ধতি কেমন ছিলো?

Socrates and Plato
 
 
সক্রেটিক
মহান শিক্ষাগুরু ছিলেন। কিন্তু তিনি এত প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী হওয়া সত্বেও খুবই সাধারণভাবে
জীবনযাপন করতেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রথাগত ধারার বিপরীতে একটা সাধারণ পদ্ধতিতে
শিক্ষা দিতে আনন্দ লাভ করতেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি কোন ধরাবাধা জায়গা নির্ধারণ
না করে, যত্রতত্র শিক্ষানবিশ তৈরি করে ফেলতেন। প্লেটোর ‘ডায়লগ’ এবং জেনোফোনের রচনায়-
সক্রেটিসের শিক্ষাদানের এই মজার কৌশলের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তিনি তার শিষ্যদের ক্ষুদ্র
থেকে সকল বিষয়েই শিক্ষা দিতেন। শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে তার কৌশলটি ছিলো শিষ্যদের বিভিন্ন
প্রশ্ন করে তার উত্তর নিয়ে ভাবতে বলা। 
একদিকে যেমন এই শিক্ষাদান তাকে এথেন্সের যুবদের
নিকট তাকে জনপ্রিয় করেছিলো, অন্যদিকে এই শিক্ষাদান পদ্ধতিকে ক্ষমতাসীনরা রাজ্যের শান্তি
শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করবে বলে প্রচার করতেন। কিন্তু তাতে সক্রেটিসের তেমন একটি যায় আসেনি।
তিনি সবসময়ই বলতেন, “একটি জিনিষ-ই আমি জানি, আর তা হলো আমি কিছু-ই জানি না” তিনি নিজেকে
জ্ঞানানুরাগী ও শিক্ষানবিশ বলেই পরিচয় দিতেন। তিনি ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে ডুবে থাকে এথেনীদের
সঠিক জ্ঞানের সন্ধান দিতে চেষ্টা করে গেছেন।  
সক্রেটিস
শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তর ও প্রতি-প্রশ্নোত্তর ও বিতর্ককে গুরুত্ব দিতেন। তিনি
সবসময়ই বিপরীত পক্ষকে প্রশ্ন করতে থাকতেন এবং যতক্ষণ না সঠিক উত্তরে বিপরীত জন পৌঁছেছেন
তিনি প্রশ্ন করেই যেতেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় সক্রেটিস আইরোনি বা সক্রেটিক মেথড। প্রশ্নোত্তরের
মাধ্যমে সঠিক পর্যায়ে পৌছানো এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য। তিনি সত্যকে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে
যুক্তি প্রদর্শনে গুরুত্ব দিতেন। 
সক্রেটিস
অস্তিত্ববাধে বিশাস করতেন। প্যারাডক্স পদ্ধতি ব্যবহার ছিলো তার মূল আকর্ষণ। এই পদ্ধতির
উদাহরণে সক্রেটিস বলেন, কোন উজ্জ্বল বস্তুকে ছাইয়ের স্তুপ থেকে বের করে আনার কৌশলই
জ্ঞান অর্জন বা বিতরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।  তিনি প্রশ্নহীন জীবনকে অসাড় ও শূন্য বলেছেন। সক্রেটিস
তার শিষ্যদের বিমূর্ত বিষয়ের শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকতেন। তিনি গ্রীক কল্পকাহিনীকে
প্রশ্ন করে নাস্তানাবুদ করতেন। সক্রেটিসকে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি জবাবদিহির কায়দায় উত্তর
দিতেন। তার শিক্ষাদানের ধরণ ছিলো ডায়লগ বা কথোপকথোন। 
ব্যপারটি
এমন যে, যেকোনো বিমূর্ত বিষয় যা অধিকাংশ নাগরিকই বিশ্বাস করতেন, সক্রেটিস তার সত্যতা
যাচাইয়ে প্রশ্ন করতেন, এবং তার শিষ্যদেরকেও একই পথ অবলম্বনের উপদেশ দেন। প্রশ্নের সামনে
কোন বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত হলে, সক্রেটিস সাহসের সাথে তাকে মিথ্যা বলেছেন, এবং তার শিষ্যদেরকেও
জ্ঞানার্জনে সদগুণ অর্জনে গুরুত্ব দিতে শিখিয়েছেন।  তিনি শিষ্যদের একবারে ক্ষুদ্র অংশ থেকে আলোচনা শুরু
করে, তিনি সিদ্ধান্তে আসা শিখিয়েছেন। তার শিষ্য প্লেটো পরবর্তীতে দি রিপাবলিক গ্রন্থে
সক্রেটিসের শিক্ষাদান ও বিতর্কের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। তার মেথড এখন সমাজ-বিজ্ঞানের
গবেষণার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
 
মুশরেখা নাজনীন
রুনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০২১-২২ সেশন।
  
![]()  | 
| Socrates and Plato | 
সক্রেটিক মহান শিক্ষাগুরু ছিলেন। কিন্তু তিনি এত প্রজ্ঞাবান ও জ্ঞানী হওয়া সত্বেও খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রথাগত ধারার বিপরীতে একটা সাধারণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিতে আনন্দ লাভ করতেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তিনি কোন ধরাবাধা জায়গা নির্ধারণ না করে, যত্রতত্র শিক্ষানবিশ তৈরি করে ফেলতেন। প্লেটোর ‘ডায়লগ’ এবং জেনোফোনের রচনায়- সক্রেটিসের শিক্ষাদানের এই মজার কৌশলের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তিনি তার শিষ্যদের ক্ষুদ্র থেকে সকল বিষয়েই শিক্ষা দিতেন। শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে তার কৌশলটি ছিলো শিষ্যদের বিভিন্ন প্রশ্ন করে তার উত্তর নিয়ে ভাবতে বলা।
একদিকে যেমন এই শিক্ষাদান তাকে এথেন্সের যুবদের নিকট তাকে জনপ্রিয় করেছিলো, অন্যদিকে এই শিক্ষাদান পদ্ধতিকে ক্ষমতাসীনরা রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করবে বলে প্রচার করতেন। কিন্তু তাতে সক্রেটিসের তেমন একটি যায় আসেনি। তিনি সবসময়ই বলতেন, “একটি জিনিষ-ই আমি জানি, আর তা হলো আমি কিছু-ই জানি না” তিনি নিজেকে জ্ঞানানুরাগী ও শিক্ষানবিশ বলেই পরিচয় দিতেন। তিনি ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসে ডুবে থাকে এথেনীদের সঠিক জ্ঞানের সন্ধান দিতে চেষ্টা করে গেছেন।
সক্রেটিস শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রশ্নোত্তর ও প্রতি-প্রশ্নোত্তর ও বিতর্ককে গুরুত্ব দিতেন। তিনি সবসময়ই বিপরীত পক্ষকে প্রশ্ন করতে থাকতেন এবং যতক্ষণ না সঠিক উত্তরে বিপরীত জন পৌঁছেছেন তিনি প্রশ্ন করেই যেতেন। এই পদ্ধতিকে বলা হয় সক্রেটিস আইরোনি বা সক্রেটিক মেথড। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সঠিক পর্যায়ে পৌছানো এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য। তিনি সত্যকে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে যুক্তি প্রদর্শনে গুরুত্ব দিতেন।
সক্রেটিস অস্তিত্ববাধে বিশাস করতেন। প্যারাডক্স পদ্ধতি ব্যবহার ছিলো তার মূল আকর্ষণ। এই পদ্ধতির উদাহরণে সক্রেটিস বলেন, কোন উজ্জ্বল বস্তুকে ছাইয়ের স্তুপ থেকে বের করে আনার কৌশলই জ্ঞান অর্জন বা বিতরনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি প্রশ্নহীন জীবনকে অসাড় ও শূন্য বলেছেন। সক্রেটিস তার শিষ্যদের বিমূর্ত বিষয়ের শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকতেন। তিনি গ্রীক কল্পকাহিনীকে প্রশ্ন করে নাস্তানাবুদ করতেন। সক্রেটিসকে কেউ প্রশ্ন করলে তিনি জবাবদিহির কায়দায় উত্তর দিতেন। তার শিক্ষাদানের ধরণ ছিলো ডায়লগ বা কথোপকথোন।
ব্যপারটি এমন যে, যেকোনো বিমূর্ত বিষয় যা অধিকাংশ নাগরিকই বিশ্বাস করতেন, সক্রেটিস তার সত্যতা যাচাইয়ে প্রশ্ন করতেন, এবং তার শিষ্যদেরকেও একই পথ অবলম্বনের উপদেশ দেন। প্রশ্নের সামনে কোন বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত হলে, সক্রেটিস সাহসের সাথে তাকে মিথ্যা বলেছেন, এবং তার শিষ্যদেরকেও জ্ঞানার্জনে সদগুণ অর্জনে গুরুত্ব দিতে শিখিয়েছেন। তিনি শিষ্যদের একবারে ক্ষুদ্র অংশ থেকে আলোচনা শুরু করে, তিনি সিদ্ধান্তে আসা শিখিয়েছেন। তার শিষ্য প্লেটো পরবর্তীতে দি রিপাবলিক গ্রন্থে সক্রেটিসের শিক্ষাদান ও বিতর্কের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। তার মেথড এখন সমাজ-বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুশরেখা নাজনীন রুনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০২১-২২ সেশন।

No comments