Header Ads

Header ADS

“রুয়ান্ডা গণহত্যা - ইতিহাসের নির্মম সাক্ষী”

 

    


ইতিহাসের এক নির্মম সাক্ষী রুয়ান্ডার গণহত্যা যুগে যুগে পৃথিবীতে যত নির্মম গণহত্যার ইতিহাস রচিত হয়েছে তার মাঝে উত্তর আফ্রিকার ছোট দেশ রুয়ান্ডাতে ঘটিত গণহত্যা অন্যতমমাত্র ১০০ দিনের মাঝে সেখানে ঝয়ে যায় প্রায় লক্ষ মানুষের প্রাণ ১৯৯৪ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে এই হত্যাযজ্ঞ এই হত্যাকান্ডের শিকার হয় সংখ্যালঘু তুতসী জনগোষ্ঠী সব ঘটনার পিছনেই একটা প্রেক্ষাপট থাকে রুয়ান্ডার গণহত্যার পেছনের প্রেক্ষাপটও জানা দরকার এটা জানতে হলে আমাদের অনেক পেছনে ফিরে যেতে হবে

সালটা ছিল ১৯১৬ যখন বেলজিয়ামের সৈন্যবাহিনী এই ছোট দেশটাকে দখল করে নেয় সেখানে তিনট সম্প্রদায় বাস করত হুতু যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৮%,  তুতসীরা ছিল ১১% এর মত এবং বাকি % ছিল টোয়া জনগোষ্ঠী হুতুরা কৃষি কাজ করত আর তুতসীরা পশুপালন বলা হয় যাদের দশটার বেশি গরু থাকত তারা তুতসী আর যাদের এরচেয়ে কম থাকত তারা হুতু বলে পরিচিত ছিল তবে এই দুই সম্প্রদায়ের মাঝে অমিল তেমন ছিলই না তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সব একই ছিল শুধু তুতসীরা হুতুদের চেয়ে উচ্চতায় লম্বা ছিল বেলজিয়াম রুয়ান্ডা দখল করার পর তারাই রুয়ান্ডার প্রশাসনিক কাজ তদারকি করত বেলজিয়াম প্রশাসন হুতু এবং তুতসীদের আলাদা পরিচয়পত্র দেয়া শুরু করে এবং তারা তুতসীদের বেশি প্রাধান্য দিত এবং যোগ্য মনে করত এসব বিষয় দুই সম্প্রদায়ের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে কারণ হুতুরা মনে করতে থাকে সংখ্যায় বেশি হওয়ার পরও তারা বৈষম্যর শিকার তুতসীরা বেশি সুবিধা পাওয়াই স্বভাবতই খুশি ছিল তারা পরবর্তী বিশ বছরে শিক্ষা, চাকরীর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে অন্যদিকে হুতুদের মাঝে ক্রমেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে



১৯৫৯ সালে এই দুই সম্প্রদায়ের মাঝে একটা দাঙ্গা হয় যেখানে হুতুদের হাতে প্রায় বিশ হাজার তুতসী নিহত হয় এবং অনেক তুতসী উগান্ডাতে পালিয়ে যায় ১৯৬২ সালে বেলজিয়াম রুয়ান্ডা থেকে চলে যায় সেই সাথে রুয়ান্ডার জনগণ তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা ফিরে পায়

 ১৯৭৩ সালে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুভেনাল হাবিয়ারিমানা রুয়ান্ডার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তার শাসনের শেষ দিকে এসে রুয়ান্ডার অর্থনৈতিক অবস্থা শীচনীয় অবস্থায় চলে যায়; তার জনপ্রিয়তা তলানীতে গিয়ে পৌছে সেই সময় কাগামের (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) নেতৃতে রুয়ান্ডা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট বা RPF গঠন করা হয় এর সদস্য ছিল অধিকাংশ তুতসী যারা ১৯৫৯ সালে উগান্ডাতে পালিয়ে গিয়েছিল এবং কিছু মডারেট হুতুও ছিল সরকার এবং এই সংগঠনের মাঝে শত্রুতা মনোভাব বাড়তে থাকে এক পর্যায়ে এই দুই মুখোমুখি শক্তি একটা শান্তি চুক্তি করে কিন্তু এই চুক্তি যথেষ্ঠ ছিলনা যখন হাবিয়ারিমানাকে বহনকারী বিমানকে ভূপাতিত করা হয় এতে হাবিয়ারিমানা নিহত হন স্বাভাবিকভাবেই এর দায় গিয়ে পড়ে কাগামের উপর কিন্তু তারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনাকে অস্বীকার করে এই ঘটনার পরই শুরু হয় ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা প্রায় ১০০ দিনের  ব্যবধানে রুয়ান্ডাতে লক্ষ মানুষ মারা যায় হুতুদের দ্বারা এই হত্যাকান্ড পরবর্তীতে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়

তখন এই হত্যাকান্ড বিশ্ব মিডিয়াতেও তেমন ভাবে আসেনি রুয়ান্ডার সরকার নিয়ন্ত্রিত রেডিও, পত্রিকা এই হত্যাযজ্ঞকে সমর্থন দিতে থাকে পত্রিকায় তুতসীদেরকে সাপের সাথে তুলনা করে প্রচার করা হয় এবং বলা হয় সাপ যখন মানুষের সামনে আসে তখন বিনাদ্বিধায় তাকে মেরে ফেলতে হয় তারা এটাও প্রচার করে সাপ মারতে যেমন সামনে হাতের কাছে যেসব হাতিয়ার আছে সেসব কিছু দিয়েই মারতে হয় তেমনি তুতসীদেরকেও সেভাবেই মারতে হবে এসব উস্কানির কারণে হত্যাযজ্ঞ কয়েকগুণ বেড়ে যায়অগণিত নারী ধর্ষণের শিকার হয়

 আল-জাজিরা চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেয়া হুতু গোষ্ঠীর এমন অনেক স্বীকার করে তারা কোনকিছু না বুঝেই এই হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে এবং প্রতিবেশিদেরও হত্যা করে প্রাণ বাঁচাতে অনেকে চার্চে আশ্রয় নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি তারা আরও বলে মিডিয়াতে প্রচারের কারণে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটাতে আরও উৎসাহ পায় সেই সময় যাদের পত্রিকা কেনার সার্মথ্য ছিলনা তাদের কাছে বিনামূল্য পত্রিকা সরবরাহ করা হত যার ফলে এটা আরও বেশি প্রচার পায় যে তুতসীরা হুতুদের জন্য বিপদজনক

সেই সময় জাতিসংঘও তার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ ছিল তারা তাদের সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে আনে এবং নামমাত্র সৈন্য সেখানে মোতায়েন করে যা গণহত্যা বন্ধে কোন কাজে আসেনিধ্বংসলীলা শেষে দেশটির শাসনভার গ্রহণ করে তুতসী সম্প্রদায়ের নেতা কাগামে দেশটিতে বর্তমানে স্থিতিবস্থা থাকলেও তুতসীদের ভয় যেকোন সময় আবার হুতুরা তাদের উপর চড়াও হতে পারেদেশটিতে সম্প্রতী নিহতদের স্মরণে বদ্ধভূমির উপর একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে যা নিহতদের স্মরণ করতেই নির্মিত হয়েছে

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.