Header Ads

Header ADS

Power: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রাণভোমরা




Power
এর সবচেয়ে সহজ সংজ্ঞাটি হতে পারে কিছু করার সক্ষমতা, কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে, এই সক্ষমতা তখনই পাওয়ার হিসেবে গণ্য হবে যখন তার ব্যবহার অন্যকে প্রভাবিত করে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করবেঅর্থাৎ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে যখন একটি রাষ্ট্র (State A) অপর একটি বা একাধিক রাষ্ট্রর (State B,C, D..) স্বাভাবিক আচরণ, নীতি বা কার্যাবলীর উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দখল অথবা অন্তত প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে সেই সক্ষমতাকে সাধারণত পাওয়ার বলে

এক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলোর প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা প্রধানত দুটি স্তরে বিভক্ত থাকেযথাঃ নিজের ঘর গোছানোর সক্ষমতা এবং ওপরের ঘরে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা”- অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রের (State A) পাওয়ারের অভ্যন্তরীণ উপাদানসমূহকে (যেমনঃ ভৌগোলিক অবস্থান,  রাজনৈতিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি,  সমাজ ইত্যাদি)  শক্তিশালী করবে যাতে সে তার অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নকে (সার্বভৌমত্ব) যেকোনো বহিঃস্থ চাপ বা হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেএবং সর্বোপরি,  নিজের ঘর রক্ষা করে অন্য ঘর বা রাষ্ট্রের (state B, C) উপর প্রভাব বিস্তারে বা জোর করে তার (State A এর) স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নীতিকে অপর রাষ্ট্রের (state B, C) নীতিতে প্রবেশ ঘটাতে পারেযেমনঃ রাশিয়া তার পার্শ্ববর্তী বলকান অঞ্চলের রাষ্ট্রেগুলোর অভ্যন্তরীণ নীতিতে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে বা যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের গালফভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে তা উভয় রাষ্ট্রের পাওয়ার বা সক্ষমতার একটি উদাহরণ

একটা মজার ব্যাপার হল, রাষ্ট্রের পাওয়ারের এই যে বাহ্যিক দিক অর্থাৎ অন্যকে (state B কে) প্রভাবিত বা দমন  করার সক্ষমতা তা প্রমাণে কিন্তু শক্তিশালী রাষ্ট্রটির সবসময় সক্রিয় থাকতে হয় না, উপরন্তু বাকী রাষ্ট্রগুলোর (state B, C) স্বীকৃতিই যথেষ্ট তার শক্তিশালী স্টাটাসটা বজায় রাখতে যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে গোটা বিশ্বের একটা ধারণা বা পরোক্ষ স্বীকৃতি রয়েছে, এক্ষেত্রে কিন্তু তাদের অন্য রাষ্ট্রগুলোর সাথে যুদ্ধ বিগ্রহ বাধাতে হয়নি

Interestingly, যখন কিছু স্কলাররা পাওয়ারকে রাষ্ট্রের একটি উপায়, সক্ষমতা বল হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রের স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে, অন্যদিকে কিছু রাষ্ট্র যে শুধু নিজেদের টিকিয়ে রাখা বা নিরাপত্তার স্বার্থেই পাওয়ার কে ব্যবহার করছে তাও অনেকে বলেছেন যেমনঃ ইসরাইল বা উত্তর কোরিয়ার কথা ধরুন, তাদের শক্তি বৃদ্ধি বা প্রদর্শনের মুল লক্ষ্যই কিন্তু তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রগুলো তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে পাওয়ারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেনসেই লক্ষ্যগুলো হতে পারে মর্যাদা (Prestige), আধিপত্য প্রতিষ্ঠা  (Hegemony), ভূখণ্ড বা নিরাপত্তা,  এবং এগুলো আদায়ে State A, State B,C,D…ইত্যাদির সাথে আক্রমণ নীতি (Offensive action) বা প্রতিরোধ নীতি (Defensive) – এই দুইধরনের নীতিই অবলম্বন করতে পারেন অর্থাৎ মাথায় বন্ধুক ধরতেও পারেন বা মাথায় হাত বুলিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে পারেন  



ঐতিহাসিকভাবে কোন একটি রাষ্ট্র/সাম্রাজ্যের পাওয়ার সর্বদা মিলিটারি সক্ষমতার উপর নির্ভর করলেও আধুনিক সময়ে শক্তির উপাদানগুলো  তারতম্য পাওয়ারের সংজ্ঞায়নে  এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে অর্থাৎ কোন একটা রাষ্ট্রের পাওয়ারের মাপকাঠি কি আমরা তার বাস্তব (Actual) সক্ষমতার নিরিখে করব, না সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের  শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাব্যতাও (Potential) যুক্ত হবে সেই নিরীক্ষণে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পাওয়ারকে যদি সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে যদি সংজ্ঞায়িত করতে চাই তবে তাকে কতগুলো শর্ত বা ধাপ পার হতে হবে, এবং বিশেষত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ একটি কার্যকর সরকার ব্যবস্থা জাতীয় ঐক্যের দরকার পরবে যার ফলে রাষ্ট্রটি সম্ভাব্যতার লেভেল পেরিয়ে বাস্তবে পৌছাবে যেমন ধরুন জাপান বা জার্মানির কথা তাদের সামরিক সক্ষমতা এতবেশী না হলেও, সামরিক শক্তি বৃদ্ধির যাবতীয় উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে তাদের রয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের সরকার জাতীয় ঐক্যমত দরকার পরবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ার মত সামরিক শক্তিশালী দেশ হতে

একটা বিষয় খুবই জরুরি তা-হল জাতীয়শক্তি সবসময়ই গতিশীলশক্তির উপাদান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন আবর্তে শক্তির বিকাশও নতুন রূপে প্রকাশিত হয় যেমন ধরুন গত শতকের কথা, প্রযুক্তিগত যে উৎকর্ষ সাধন হয়েছিল এবং সামরিক ক্ষেত্রে সেই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার পাওয়ারের সমীকরণকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষেত্রে পারমাণবিক অস্ত্রের আবিষ্কার যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগ বিশ্বযুদ্ধের বা সাধারণ যুদ্ধের স্বাভাবিক প্রকৃতিকেই পরিবর্তন করে দিয়েছে; সাথেসাথে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বরাজনীতিতে একপাক্ষিক ক্ষমতা রাজার স্থানে আসীন করিয়েছে; এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে

প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ছাড়াও, যেকোনো আন্তর্জাতিক যুদ্ধ বা বিপ্লব- আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ক্ষমতার বণ্টন প্রক্রিয়াকে অনেকটাই প্রভাবিত করেযেমন ২য় বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপকে একদম ধ্বংস করেছে; যুদ্ধপরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থানে সহায়তা করেছে; উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনকে তরান্বিত করেছে; আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘের জন্ম দিয়েছে এবং সর্বোপরি মাত্র একটি যুদ্ধই পূর্ববর্তী ৩০০ বছরের ইউরোপ কেন্দ্রীক ক্ষমতার সমীকরণকে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে

সামরিক শক্তির বাহিরেও, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি রাষ্ট্রেকে শক্তিশালী হওয়ার প্রতিযোগিতায় অনেক আগে নিয়ে যায় এছাড়াও প্রাকৃতিক সম্পদের আবিস্কার বা ধ্বংস রাষ্ট্ররর পাওয়ার বিকাশের সক্ষমতাকে অনেকটাই চাপে ফেলে দেয়যেমন ধরুন ওপেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলো তেল সমৃদ্ধ হওয়ার জন্যই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক শক্তিশালী পর্যায়ে থাকে যা আমরা ১৯৭৩ তেল অবরোধ কৌশল থেকে দেখতে পারি এমনকি তখনকার মহাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সাথে সমঝোতা আবশ্যক হয়ে পরে পাশাপাশি রাষ্ট্রের অবস্থানের নিরিখেও তার শক্তির মূল্যায়ন করা যায়, কেউবা এই অবস্থানের কারণে অতিরিক্ত সুবিধা পায় যেমন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া, আবার কিছু রাষ্ট্রের কাছে নিজেকে টিকিয়ে রাখতেই শক্তি বাড়াতেই হয় যেমন ফ্রান্স এই অবস্থানের কারণেই রাষ্ট্রগুলো আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে   

বাদেও পাওয়ারকে যদি আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্পর্কের নিরিখে বিবেচনা করি তাহলে পাওয়ারকে দুইভাগে ভাগ করা যায় যার প্রথমটি মূলত সম্পর্ক স্থাপনের সময় আঞ্চলিক বা বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপট বা ক্ষমতার সমীকরণকে মেনে চলে যেমন স্নায়ুযুদ্ধকালীন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অনেকটা দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েতের বলয়কে ঘিরেই হত আর দ্বিতীয় প্রকারটা পাওয়ারের কাঠামোগত দিককে ইংগিত করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পাওয়ারের যে সম্পৃক্ততা বিশ্লেষণে স্কলারসরা এই কাঠামোগত দিকটাকেই অনুসরণ করেছেন তারা কয়েকটি প্রশ্নের মাধ্যমে পাওয়ার সম্পর্কে একটি নূন্যতম ধারণা তৈরির চেষ্টা করেছেন যেমনঃ

·        শক্তি কিভাবে অন্যের চিন্তাকে (Ideas) প্রভাবিত করছে?

·        শক্তি এবং অর্থনীতি এদের মধ্যকার প্রকৃত সম্পর্কটা কেমন?

·        শক্তি কি শুধু নিরাপত্তার নিরিখে তৈরি হয় না আক্রমণের লক্ষ্যে

·        শক্তি কিভাবে উত্পাদন ভোগের নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে? ইত্যাদি



অতএব  উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে আমরা বলতে পারি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পাওয়ারকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়ঃ

·        পাওয়ার হল কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ;

·        পাওয়ার হল অন্য রাষ্ট্রকে প্রভাবিত (Offensive/ Defensive) করার এক প্রয়োজনীয় নিয়ামক;

·        পাওয়ারের লক্ষই থাকে সংঘাতে বিজয়ী হওয়া এবং স্বীয় নিরাপত্তা বজায় রাখা

·        পাওয়ার হল নিজের অভ্যন্তরীণ সম্পদের নিরাপত্তা করে বাহিরের সম্পদে ভাগ বসানো, এবং

·        সর্বোপরি, পাওয়ার একটি স্টাটাস- যা সব রাষ্ট্রেরই অসমভাবে থাকে  অর্থাৎ কারো বেশি কারো কম এবং তারজন্যই আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্য জরুরি হয়ে পরে দুর্বল রাষ্ট্রেগুলোর টিকে থাকতে

 


বদিরুজ্জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

 

 

 

 

 

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.