Header Ads

Header ADS

Appeasement Policy: যে কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা


Appeasement শব্দের আভিধানিক অর্থ কারো দাবী-দাওয়া মেনে নিয়ে তাকে শান্ত করা, প্রশমিত করা, সন্তুষ্ট করা ইত্যাদিআন্তর্জাতিক সম্পর্কে, বৈদেশিক নীতি প্রণয়ন  বাস্তবতায়নের ক্ষেত্রে এই প্রশমন নীতি (Appeasement Policy)  খুবই ঝামেলা জটিল একটি প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এই প্রশমন নীতি গ্রহণের পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হল কোন আক্রমনাত্মক রাষ্ট্রের সাথে অহেতুক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বদলে তার কিছু দাবী মেনে নিলেই সেই রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ হবে 

কিন্তু এই নীতি প্রণয়নের বোকামিটা হল আক্রমনাত্মক রাষ্ট্রগুলো সহজে সন্তুষ্ট হতে চায় না, তাদের দাবীর পরিমাণ বাড়তেই থাকে  সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদাগুলোর যোগান দেওয়ার অর্থ ক্ষমতার লোভকে আরো বাড়িয়ে দেয়া, তাদেরকে আরো শক্তিশালী করা দীর্ঘমেয়াদে এই প্রশমন প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ অবস্থার বদলে যুদ্ধের ঝুঁকিকেই বাড়িয়ে দেয়

১৯৩০ এর দশকে, জার্মানির চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের আক্রমনাত্মক  মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে ফ্রান্স বৃটেন হিটলারের সাথে এই আপোষ নীতি অনুসরণ করেন হিটলার প্রথম থেকেই তার ইউরোপ দখলের উচ্চাকাঙ্খা লুকিয়ে রাখেনি তিনি তার বিখ্যাত জীবনীMein Kempf (My Struggle)” গ্রন্থে ইউরোপ, জার্মানি ইহুদিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ভাবনার কথাগুলো স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন

১৯৩০ এর দশকে হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যাচার (প্রপোগাণ্ডা) ছড়াতে শুরু করেন হিটলার দাবী করেন যে চেকোশ্লোভাকিয়ার সরকার তাদের রাষ্ট্রে জার্মান ভাষাভাষী সুদাতেন জার্মানদের উপর নিদারুণ অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে সুদাতেনদের ভাষার উপর ভিত্তি করে কোন ধরনের রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে কিন্তু আদতে এর সবটাই ছিল হিটলারের সাজানো পরিকল্পিত মিথ্যাচারএভাবে হিটলার সুদাতেনদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলেন, এবং তাদের সহায়তায় সুদাতেনল্যান্ডকে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবী জানান

আবশ্যিকভাবেই, চেকোশ্লোভাকিয়ার সরকার হিটলারের এই দাবীকে অযৌক্তিক -গ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিতে থাকেন, কিন্তু হিটলার বারংবার চেক সরকারের উপর যুদ্ধ না হয় সুদাতেনদের জার্মানিভুক্ত  করনের হুমকি চালিয়ে যেতে থাকেন 

অন্যদিকে, পশ্চিমা শক্তিধরেরা আরো একটি মহাযুদ্ধ থেকে ইউরোপকে রক্ষা করতে মরিয়া ছিলেন, তাই তারা জার্মান চেকোশ্লোভাকিয়ার মধ্যকার সমস্যাটার সমাধানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন সম্মেলনের ফলাফল হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৮ সালে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় যার মাধ্যমে সুদাতেনল্যান্ডকে জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করা হয়; এবং ফ্রান্স বৃটেনের গ্যারান্টিতে চেকোশ্লোভাকিয়া জার্মানির মধ্যকার সীমানা চিহ্নিত করা হয়বিপরীতে জার্মানির পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় সে কখনো বৃটেন ফ্রান্সকে আক্রমণ করবে না কিন্তু, পরবর্তী মাসের মাথায়ই হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়া আক্রমণ করে সমগ্র দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়

মিউনিখ চুক্তির কল্যাণে হিটলার পূর্ব ইউরোপে তার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে এবং পরবর্তী বছরেই হিটলার পোলান্ড আক্রমণ করেন পরিস্কারভাবে বুঝা যায় হিটলার প্রশমণ নীতিকে ব্যবহার করে তার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের যাত্রাকে চলমান রাখতে চেয়েছিলেন অন্যদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যেভাবে জার্মানিকে সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল করে ফেলা হয়, মিউনিখ চুক্তি জার্মানির সেই শক্তি উদ্ধারে সহায়তা করে এবং ইউরোপে ফ্রান্স, বৃটেন ইতালির সাথে শক্তি সাম্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে

চেকোশ্লোভাকিয়া দখল করার বিপরীতে ইউরোপীয় শক্তিগুলি কী জার্মানির বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারতো না? পারলেও কেন করল না? এই বিতর্ক এখন পর্যন্ত ঘোলাটে হয়েই রয়ে গেছে কিন্তু সুদাতেনদের জার্মানির অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারটিই যে পরবর্তীতে হিটলারকে আরো উচ্চাকাঙ্খী করে তুলেছিল তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-উত্তর উদারবাদী চেতনায় বিশ্বাসী নীতিনির্ধারকেরা একটা বড় রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হন, বিশেষ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলীন, এবং তিনি পরবর্তীতে তার এই উদারবাদী প্রশমন নীতির জন্যেই ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়েছিলেনকিন্তু নাৎসি জার্মানির এই বিশ্বাসঘাতকতা কে পুজি করে এই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পন্থাটিকে একেবারে প্রত্যাখ্যান করা যায় না কারণ এমন অনেক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে যেখানে সংকট সমাধানে এই রাজনৈতিক নীতিটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেএই পন্থাটিকে প্রত্যাখ্যান করলে বস্তুত রাষ্ট্রগুলোর কোন সামরিক সংকট সমাধানে যুদ্ধে জড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না

ভালোর থেকে প্রশমন নীতিকে রাষ্ট্রের উগ্র ডানপন্থীরাই বেশি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন এই নীতিকে কিভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থে ব্যবহার করা যায় তার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমান সময়ে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল সাম্প্রতিক ইউক্রেন যুদ্ধও কিন্তু এই প্রশমণ নীতির স্বার্থবাদী ব্যবহার। 

পরিশেষে, রাষ্ট্রের ব্যবহারের উপর এই নীতির ইতিবাচক নেতিবাচক রূপটি নির্ভর করছে, কিন্তু প্রশমন নীতি কোনভাবেই ধ্বংসাত্মক ফলাফলের কারণ হতে পারে না যদি রাষ্ট্রগুলো প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তাদের বৈদেশিক নীতি প্রনয়ণ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে   

 

অনুবাদকঃ বদিরুজ্জামান

মূল বইঃ International Relations: Key Concepts by Martin Griffts.

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.