Header Ads

Header ADS

বিসিএস ট্রাই করুন তবে...


বি সি এস!  বি সি এস!  বি সি এস!  এটা এখন একটা মানসিক রোগ হয়ে গেছে বলাই যুক্তিযুক্ত। বেশিরভাগ জনই বলে অনার্স শেষ হয়ছে বি সি এস প্রিপারেশন নে, ক্যাডার হইতেই হবে। তাহলেই লাইফ সেটেল।এটা আমি নিজেও এখন ফেস করতেছি, বি সি এস এর কি খবর,  পড়াশোনা কেমন চলে, অন্য সবকিছু ছেড়ে বি সি এস পড়ো, সরকারি চাকরি করতেই হবে।  গতদিন আমার কলেজ লাইফ এর গণিতের শিক্ষক উনিও একই জ্ঞান দিলেন বয়স শেষ অবধি চেষ্টা করো। বি সি এস এর জব কেমন সেটা তো ভালোভাবে জানো। 

মনে মনে একটু হাসি পেলো, আমি ব্যক্তিগতভাবে বি সি এস এর বিষয় টা কম পছন্দ করি। তার কারণ এটা একটা দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া যেখানে আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মধ্যেবিত্ত পরিবারের থেকে উঠে আসা। অনার্স মাস্টার্স  শেষ করে বয়স ২৫/২৬ পর্যন্ত পরিবারের অভিভাবক খরচ চালান। তারপর তারা কিছুটা অাশা করেন তার সন্তান যে কিনা দ্রুত উপার্জন করে সংসারের হাল ধরবে। 

তার বিশেষ কারণ এই সময় অবিভাবকের বয়স হয়ে যায়, শারীরিক ও মানসিক ভাবে তারা  অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়েন। ছোটবেলায় বাবা মা যেমন সন্তানদের মাথার উপর তপ্ত রোদের মাঝে ফলের বৃক্ষের ন্যায় কাজ করেন, তেমনি তারাও বয়স হলে শিশুর ন্যায় হয়ে যান এবং একটা নিরাপদ বৃক্ষ প্রত্যাশা করেন।  যার ছায়াতে বাকি জীবন টা অতিবাহিত করতে চান। আর এটাই স্বাভাবিক।  একটা বিষয় বলে রাখি সেটি হলো বি সি এস সবার জন্য নয়। এখানে মেধার সাথে পরিশ্রম,  ধৈর্য আর কিছুটা নিয়তির প্রয়োজন হয়। আপনারাই প্র্যাকটিকেল ভাবে চিন্তা করুন পরিষ্কার বুঝতে পারবেন,  কতজন বি সি এস পরীক্ষা দেয়, আর কতজন ক্যাডার হন। 

কত বৃহৎ অংশ ব্যর্থতার সাধ গ্রহণ করে হতাশ হয়ে চোখমুখে আর কিছু দেখতে পান না। ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত আমার দ্বারা আর কিছু হবে না। বাস্তবিক পক্ষে আমি অনেক জনকেই দেখেছি তাদের বেশিরভাগই একটা/ দুইটা বি সি এস কেন ২০ টা বি সি এস দিলেও হওয়া মুশকিল। তাই সবার কথা শুনে ঝাঁকের কৈ এর মতো ঝাঁকে মিশে গিয়ে অনেকই পরিশেষে হতাশ হন। আমি একজন প্রফেশনাল ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং বিষয়েও পড়াশোনা রয়েছে এবং কিছুটা কাজ করেছি আর করেও যাচ্ছি।  আমার একজন ক্লায়েন্ট এমন সমস্যা নিয়ে এসেছিলো ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত,  বি সি এস এর  প্রেসারে রয়েছেন। 

মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল প্রয়োগ করে  যথাসাধ্য চেষ্টা  করেছি তার কাউন্সেলিং করার। আর অভিভাবক শ্রেণীর যারা আছেন তাদের নিকট অনুরোধ সন্তানদের বি সি এস এর পোকা মাথায় ঢোকানোর জন্যে মানসিক টর্চার করবেন না। সন্তান পড়াশোনার পর অনেকটাই নিজেকে বুঝতে পারে আমার দ্বারা কতটা সম্ভব আর কি সম্ভব। বি সি এস ছাড়াও দ্রুত অনেক ভালো কাজ( জব)  করার সুযোগ রয়েছে।  তারাও তো বেশ রয়েছেন। এখন অনেকেই বলতে পারেন সরকারী চাকুরি মানে সুখ আর সুখ ( নো টেনশন) তাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি সুখ প্রাপ্ত করার বস্তু নয়, সুখ অনুভব করার বিষয়। এজন্য কোন কোম্পানি অথবা কোন প্রাইভেট  বা বেসরকারি চাকুরি কে ছোট ভাবে চিন্তা করবেন না। 

সৎ ভাবে জীবন অতিবাহিত করাটাই অাসল।  আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা যত সময় নষ্ট করেন বি সি এস নামক দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া পেছেনে,  সেখানে তারা তার আগেই অনেকটা অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি হতে পারতো ও দেশে বেকার এর সংখ্যাও কমতো। বাংলাদেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগে হয়েছে,  সেখান থেকেও কিছুটা অপ্রীতিকর বিষয় দেখেছি ও শুনেছি,  আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বেশিরভাগই ব্যাকডেট।  এবং নতুনত্ব কে প্রাধান্য কম দেন। রিসার্চ এর বিষয় খুবই করুণ অবস্থা।  এমনটাও দেখেছি বি সি এস এর পড়া পড়তে আগে বলেন তার পাশাপাশি একাডেমিক চালাতে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের Ranking করা হচ্ছে    কতগুলো   বি সি এস  ক্যাডার বের হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে।  নিঃসন্দেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম তালিকায় রয়েছে এক্ষেত্রে।  বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েছেন বা পড়ছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা টা কিসের জন্য।  বি সি এস এর জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া লাগেনা,  একজন HSC passed student কে প্রিপারেশন নেওয়ালে সেও সক্ষম হয়তো, কারণ পড়াশোনাটা ঐ অবধি।  তাই একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে এটাই বলি, বি সি এস ট্রাই করুণ তবে ওটাকে জীবন ভাবতে বা জীবনের মূলমন্ত্র বানাতে যাবেন না। অন্য যারা বেসরকারি জব করেন তারাও বেশ ভালো করছেন,  আর বেশ রয়েছেন।।।


-Anup Sutradhar

Clinical Psychologist 

University of Rajshahi


No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.