Header Ads

Header ADS

Bilateralism ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য

 



Bilateralism দিয়ে দুটি অংশের মধ্যে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক  বুঝায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে Bilateralism সাধারণ দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় এই সংজ্ঞায়নটি যথেষ্ট নয়। Bilateralism দ্বারা দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ককেও বুঝানো যায়- যেখানে একটি কোম্পানি পণ্য বিক্রি করে এবং অন্য কোম্পানি তা ক্রয় করতে পারে। অন্যদিকে, Bi-lateralism দিয়ে বেসরকারি সংস্থা (NGOs) এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের (INGOs) মধ্যকার সম্পর্ককেও বুঝানো যেতে পারে। যেমনঃ UNICEF একটি বৃহৎ আন্তর্জাতিক সংস্থা হওয়ার পরও বিভিন্ন NGOs এর সাথে UNICEF অনেক চুক্তি করে যাতে  NGOs গুলো ইউনিসেফের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আবার Bilateralism শব্দটা দ্বারা দুটি দলের উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক পরিচালনার কৌশলকেও উল্লেখ করা যায়। এই কৌশলের মূখ্য উদ্দেশ্য কীভাবে বহুপাক্ষিক (Multilateral) এবং একপাক্ষিক (Unilateral) চুক্তি সম্পাদনের বদলে উভয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে চুক্তি করতে পারে। Bilateralism- আঞ্চলিকতাবাদ (Regionalism) থেকেও আলাদা- কারণ আঞ্চলিকতাবাদে দুইয়ের অধিক দেশ কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার বা সৌহার্দের সম্পর্ক গড়ে তোলে।  পক্ষান্তরে, Bilateral বা দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আঞ্চলিক ধারণার বাহিরেই হয়, যেমনঃ জাপানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

পৃথিবীতে সম্পাদিত বেশিরভাগ চুক্তিই গঠনগতভাবে দ্বি-পাক্ষিক। এই চুক্তিগুলোর ধরণ ও বিষয়বস্তুও ভিন্ন। যেমনঃ প্রত্যাবর্তন চুক্তি, বৈদেশিক উন্নয়ন সহযোগিতা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, আকাশ সীমা ব্যবহার, শুল্ক নির্ধারণ, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহায়তা, পারমাণবিক কাচামালের বিনিময়, বার্তা সেবা,  ভিসা প্রসেসিং, জলজ ও মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক ইস্যু ইত্যাদি।

পণ্যের বেচা-কেনা আন্তর্জাতিকভাবে যখন তগেকে শুরু হয় তখন থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাণিজ্য চুক্তির প্রধান প্রধান ধারাগুলোকে Bilateralism প্রভাবিত করতে শুরু করে। এই ধরনের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ইতিহাস অনেক পুরাতন। যেমনঃ ২৫০০ খ্রীষ্টপূর্বে তৎকালীন  ব্যাবীলনীয় ও মিশরীয় সভ্যতার মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে বাণিজ্য কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছিলো। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিধি যতই বাড়তে থাকে বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট দ্বি-পক্ষীয় চুক্তির সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউরোপের রেনেসা, ঔপনিবেশ স্থাপনা এবং শিল্প বিপ্লব সবগুলোই এই দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির পরোক্ষ ফল।

বন্ধুত্ব, বাণিজ্য এবং সমুদ্র যাত্রা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে উপরিউক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলো সম্পাদিত হত এবং চুক্তির সদস্য হিসেবে দুটি-দেশই একে অন্যকে বাণিজ্য, সমুদ্র যাত্রা এবং ব্যাক্তি মালিকানা ও উভয় দেশের বাজারে পণ্য প্রবেশের অধিকার প্রদান করে। এছাড়াও চুক্তির মাধ্যমে উভয়ের মধ্যকার বানিজ্য শুল্কও নির্ধারণ করা হয়।

উনবিংশ শতকের বাণিজ্য চুক্তিগুলোর ভিতরে বড় কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তখন চুক্তিগুলো সম্পাদনের উদ্দেশ্য শুধু নতুন নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা না রেখে পাশাপাশি দুর্বল দেশগুলোকে অসম সামরিক এগ্রিমেন্ট পালনে বাধ্য করা। এরকম দ্বি-পাক্ষিক চুক্তির সবচেয়ে বড় উদাহরণ প্রথম আফিম যুদ্ধ। প্রথম আফিম যুদ্ধ শেষে চিং রাজবংশের সাথে বৃটিশদের জবরদস্তিমূলক নানকিং চুক্তি সম্পাদনা করে। জবরদস্তিমূলক এই নানকিং চুক্তির আদলে চিং বংশ বৃটিশদের একটা নির্দিষ্ট শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার দেয়, চীনের ৫ টি সমুদ্র বন্দর ও হংকং কে বৃটিশদের নিকট ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। চিং সরকারের এই বেহাল দশার সুযোগ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশও নিয়েছিলো। যেমনঃ ১৮৮৪ সালে আমেরিকা ও চিং রাজবংশের সাথে চুক্তি হয় যার ফলে আমেরিকাকে চীনের মূল-ভূখন্ডে আমেরিকাকে চীনের বাজার ব্যবহার ও নির্দিষ্ট শুল্কে চীনা বন্দর ব্যবহার সহ নানাবিধ সুবিধা দিতে চিং রাজবংশ বাধ্য হয়।

যদিও উনবিংশ শতকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিনা শুল্কে বাণিজ্য শুরু হয়েছিলো। তবুও দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে বাণিজ্য ধারাগুলো Bilateralism কেই অনুসরণ করে হয়েছিলো। যদিও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আর্থিক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার উপায় হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বহুপাক্ষিক (Multilateralism) বাণিজ্যকেই বেশি প্রাধান্য দেয়, কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাব আন্দাজ করতে পেরে Bilateral বাণিজ্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করে।

কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে দেশগুলো এক বাক্যে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যাবস্থার গুরুত্ব স্বীকার করেন। ফলাফল স্বরূপ GATTGATT (Geberal Agreement on Tariffs and Trade) ১৯৪৭ সালে যাত্রা শুরু করে। গ্যাটের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিলো আসন্ন বাণিজ্য চুক্তিগুলোর দ্বি-পাক্ষিক ব্যবস্থার চেয়ে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকেই বেশী জোর দেওয়া। কিন্তু গ্যাট “Most-Favored Nation (MFN)” ধারণাটিকে সামনে নিয়ে আসেন যার মাধ্যমে একটা রাষ্ট্র চাইলেও অন্য কোন দেশের সাথে তার বাণিজ্য শুল্কের হার, বাজার,  ঋণে প্রদান ইত্যাদি অব্যাহত রাখতে পারবে- কিন্তু সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই বৈশ্বিক বাণিজ্যিক স্টান্ডার্ট কে অনুসরণ করতে হবে।  

এছাড়াও গ্যাট  তার MFN নীতি দ্বারা দুটি কাজ করেছেঃ
1.     পূর্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোকে তার শাসিত দেশগুলোর সাথে আলাদাভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির পথকে সুগম করে, এবং
2.     বিভিন্ন অঞ্চল আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং কাস্টম ইউনিয়ন তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।

গ্যাট এবং এর উত্তরসূরী বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার মধ্যবর্তী এই দীর্ঘ ৪০ বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বহুপাক্ষিকতার দৃষ্টি থেকে সম্পাদিত হিয়েছে। তৎকালীন বিশ্বের বৃহৎ বাণিজ্য শক্তি যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), এবং জাপান এই বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। তারা উদার অর্থনীতি ও মুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। 

কিন্তু ১৯৮০ পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পাবো দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা আবারও প্রাধান্য পাচ্ছে, বিশেষত দুই ক্ষেত্রে-
1.     পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি অএলে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপের বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পায়, এবং যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনেন এবং পূর্ব ও আসিয়ান ভুক্ত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা চালায়।

2.     গ্যাটের মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের পরিবর্তে Preferential Trade Agree-ments (PTAs) সম্পাদিত হয়। বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশগুলো PTA বাস্তবায়নে বেশি জোর দেয়। বর্তমানে বেশিরভাগ আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে (যেমনঃ সার্ক, আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি)) PTAs তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এভাবেই Neo-Bilateralism বর্তমান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য়ের প্রধান অংশ হয়ে গেছে। এর প্রধান লক্ষ্য আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিকতার বদলে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শক্ত, দৃঢ় ও কার্যকর বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। (সংক্ষেপিত)

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.