আন্তর্জাতিক সম্পর্কে 'নিরাপত্তা (Security)' ধারণাটি কিভাবে কাজ করে??
নিরাপত্তা জরুরি, অন্তত বিশ্ব রাজনীতিতে। শুধু রাজনীতিবিদদের মুখে বা পন্ডিতদের লেখনিতেই না, গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় 'নিরাপত্তা' বিষয়টি এখন প্রধান চর্চায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো 'নিরাপত্তা' বিষয়টি অনেকাংশেই 'আপেক্ষিক বা পক্ষপাতমূলক (Subjective)'। বিশেষত সমাজ বিজ্ঞানে নিরাপত্তার সংজ্ঞায়নকে ঘিরে নানান তর্ক-বিতর্ক চালু আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা একটা সোজা সংজ্ঞায়নে একমত যে নিরাপত্তা বলতে সকল ধরনের হুমকির অনুপস্থিতিকেই বুঝায়। এছাড়াও, যে পদ্ধতিতে নিরাপত্তার বিভিন্ন ধরন নিয়ে গবেষণা করা হয় তাকে 'নিরাপত্তা অধ্যায়ণ' বলে।
নিরাপত্তা অধ্যায়ণঃ
নিরাপত্তা অধ্যায়ণ ও নিরাপত্তা অর্জনে যুদ্ধ ও সংঘাত- মানব সমাজের শুরু থেকেই প্রতীয়মান। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানান অঞ্চলে বিচিত্র বিষয়কে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের অংশ হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু আধুনিক নিরাপত্তা অধ্যায়ণের যাত্রা শুরু হয় দুই মহাযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেক্ষাপটে। কারণ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিদারুণ আঘাত ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিলো, এবং সংঘাত বা যুদ্ধ নিরসনের মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জনই ছিলো শক্তিগুলোর প্রধান লক্ষ্য। ধীরে ধীরে "নিরাপত্তা অধ্যায়ণ" আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপশাখা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
১৯৫০ ও ১৯৬০'র দশককে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এই সময় পারমাণবিক ডেটারেনস তত্ত্বের বিকাশ, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সিস্টেম তত্ত্বের আধারে ব্যাক্ষা করা এবং কোন সংকট/সংঘাত উদ্ভুত হলে তার ম্যানেজমেন্ট কেমন হতে পারে- শান্তিপূর্ণ না সামরিক তার বিস্তারিত গবেষণা নিরাপত্তা অধ্যায়ণের ফলেই সম্ভব হয়েছিলো। কিউবার মিসাইল সংকট থেকে মুক্তি নিরাপত্তা অধ্যায়ণের অন্যতম বড় সফলতা বলে উল্লেখ করা যায়।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রে ছিলো ৪ টি থিম। যথাঃ
রাষ্ট্র (State) ই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান সত্তা;
কৌশল (Strategy) এ কোন সংঘাত উদ্ভুত হলে রাষ্ট্র কোন উপায়ে (সামরিক না শান্তিপূর্ণ) তা সমাধা করবে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ;
বৈজ্ঞানিক (Science) পদ্ধতিতে গবেষণা পরিচালনা করবে রাষ্ট্র যাতে নিরপেক্ষভাবে কোন সমাধানে পৌছানো যায়; এবং
সাম্যাবস্থা (Status Quo) এ যখন শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য অবস্থা বজায় থাকবে তখন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।
পরবর্তীতে Barry Buzan তার বিখ্যাত বই States and Fear এ নিরাপত্তার পরিধিকে আরো সম্প্রসারণ করেন। বুজান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সামরিক নিরাপত্তার বাইরেও আরো চারটি ধরণ যুক্ত করেন। যথাঃ
রাজনৈতিক নিরাপত্তা
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
সামাজিক নিরাপত্তা এবং
পরিবেশগত নিরাপত্তা।
নিরাপত্তা অধ্যায়ণের আলোচ্য বিষয়ঃ
গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে নিরাপত্তা অধ্যায়ণ চারটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্ট করে। যথাঃ
নিরাপত্তা কী?
কার জন্য নিরাপত্তা?
নিরাপত্তার পরিধি কতটুকু?
কিভাবে নিরাপত্তা অর্জন করা যায়?
নিরাপত্তা কী?
যেখানে লালিত মূল্যবোধ কোনরূপ হুমকি থেকে রক্ষা পায় সেখানেই নিরাপত্তা কায়েম হয়। অর্থাৎ, হুমকির (Threats) অনুপস্থিতিই নিরাপত্তা (Security)। অনেকেই নিরাপত্তা (Security) ও টিকে থাকা (Survival) কে গুলিয়ে ফেলেন, কিন্তু উভয়েই বৈশিষ্ট্যগত ভাবে ভিন্ন। যেখানে টিকে থাকা (Survival) অস্তিত্বের (Existential) সাথে সম্পর্কিত, সেখানে নিরাপত্তা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ নাগরিকদের অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণের রাষ্ট্রের সক্ষমতার মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা অর্জিত হয়, এবং এই অধিকারগুলো যখন রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয় তখন নাগরিকরা অনিরাপত্তায় ভোগে।
অন্যদিকে, দর্শনের ভাষায় নিরাপত্তার দুটি বিপরীত ধর্মীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। প্রথমটি নিরাপত্তাকে 'শক্তি অর্জন বা পুঞ্জিভূতকরণ' এর সাথে সমার্থক হিসেবে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, শক্তি অর্জনের মাধ্যমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব। কোন সত্ত্বার যত শক্তি অর্জনের সক্ষমতা থাকবে, সে ততটা নিরাপদে থাকবে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় নিরাপত্তাকে শান্তির (Emancipation) সাথে তুলনা করা হয়, এবং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই শান্তি অর্জন সম্ভব। তবে, অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা- নিয়মকের (যেমনঃ পারমাণবিক অস্ত্র) চেয়ে রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের নিরিখেও নির্ধারিত হয়। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের পারমাণবিক শক্তি অর্জনকে যেভাবে নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ বলে প্রচার করে, ইসরায়েল বা ভারত বা পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার বেলায় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তাহীনতার বুলি আওরায় না।
অতএব, নেতিবাচক ভাবে নিরাপত্তা হল হুমকির (সামরিক) অনুপস্থিতি, আর ইতিবাচক দিক দিয়ে নিরাপত্তা হল নাগরিকদের প্রয়োজনীতা পূরণের সম্ভাব্য সক্ষমতা। অর্থাৎ, দেশ নাগরিকদের বিচিত্র আকাঙ্ক্ষার যোগান দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
কার নিরাপত্তাঃ
ঐতিহাসিকভাবে নিরাপত্তা সবসময়ই মানব কেন্দ্রিক ছিলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নিরাপত্তা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। আরো বিশেষায়িত করে বললে নিরাপত্তা জাতীয় স্বার্থের সাথে ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়৷ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবেও দেখানো হয়।
যাইহোক, নিরাপত্তা অধ্যায়ণে কার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে, এর সম্ভাব্য পাঁচটি উত্তর পাওয়া যায়। যথাঃ
রাষ্ট্রঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রই প্রধান সত্তা, যাকে ঘিরে নিরাপত্তা বিষয়টি আলোচিত হয়। বিশেষত স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার যে-কোন পরিবর্তন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার উপর হুমকি স্বরুপ কী কল্যাণকর তা বিবেচনা করা হত। জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা তখন একই সুতোয় গাথা ছিলো। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রকেই একমাত্র নিরাপত্তা অর্জনের কেন্দ্রে রাখতে হবে এই চেতনাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছিলো।
মানব-জীবনঃ রাষ্ট্র কেন্দ্রিক নিরাপত্তার রাডার পরিবর্তন করে, বিশ্লেষকরা মানুষকে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন। তখন থেকে মানব নিরাপত্তা (Human Security) ধারনাটির বিকাশ ঘটতে থাকে। মানব সম্মান (Human Dignity) রক্ষাকেই মানব নিরাপত্তার সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের নীতি নির্ধাকদের কাছে মানব নিরাপত্তা- নিরাপত্তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।
সমাজঃ সমাজকে অনেক বিশ্লেষকই নিরাপত্তা অধ্যায়ণের সবচেয়ে জরুরি ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। কারণ, তারা মনে করেন, ব্যক্তি বিশেষে নিরাপত্তা আপেক্ষিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মানুষ যখন সংঘবদ্ধভাবে সমাজ গঠন করে, তখন তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোও নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং নিরাপত্তা অর্জনে সামাজিক সমন্বয়ন ঘটে।
বিশ্লেষণ স্তর (Level of analyses): এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেভেল থেকে আমরা নিরাপত্তা বিশ্লেষণটি করতে পারি। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে ব্যক্তি পর্যন্ত সবই এই বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত (যেমনঃ রাষ্ট্র, আমলাতন্ত্র, রাজ্য, প্রদেশ, অঞ্চল, সভ্যতা, নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি)
পরিবেশগতঃ এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কেন্দ্রে থাকে পৃথিবী৷ এই পৃথিবী একটা বড় বাস্তুসংস্থানকে নিয়ে টিকে আছে। মানুষ এই ইকোলজির অংশ এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। অতএব সব কিছুর আগে পরিবেশকেই নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রে রাখতে হবে।
নিরাপত্তা ইস্যু কোনগুলো?
নিরাপত্তা কী ও কার নিরাপত্তা, এই দুই প্রশ্নের উত্তর বের করার পর তৃতীয় জরুরি বিষয়টি হল নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে নির্ধারণ করা। সাধারণত যে বিষয়গুলোর উপস্থিতি হুমকিকে (Threat) উস্কে দেয়, তাকেই নিরাপত্তা ইস্যু বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় কে বা কারা- কোন কোন বিষয়গুলোকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে, এবং কেন?
একদিক দিয়ে এই ইস্যুগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক হতে পারে- অর্থাৎ নিরাপত্তা ইস্যুগুলো লিঙ্গ, জাত, বর্ণ, ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রেণী। এমনকি সেই ব্যক্তির জন্মস্থান, তার গন্তব্যস্থল, তার ভবিষ্যৎ জীবন পরিক্রমা ইত্যাদি কেন্দ্রিক হতে পারে। এক্ষেত্রে ইস্যুগুলোর গুরুত্ব আপেক্ষিক হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অধ্যায়ণে যে হুমকিগুলো সমাজকে আক্রান্ত করে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করে৷
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ - নিরাপত্তা এবং বিশ্ব ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলবে এমন কিছুকেই নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। যেমনঃ আধুনিক সন্ত্রাসবাদকে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে প্রচার করে৷ অন্যদিকে, দুর্বল দেশগুলোর নিরাপত্তা তুলনামূলক কম বিস্তারিত হয়। যেমনঃ ঘানা তাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংঘাত ও এইডসকে চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে জাতিসংঘ তার সনদ অনুযায়ী যে ইস্যুগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপদ বজায় রাখতে বাধা দিবে তাকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে প্রচার করে। যেমনঃ
আর্থ-সামাজিক হুমকি। যেমনঃ দারিদ্র্য, মহামারী ও সংক্রামিত রোগ, পরিবেশগত বিপর্যয়;
আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘর্ষঃ যেমনঃ গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা;
পারমাণবিক, রেডিওলোজিকাল, রাসয়নিক, এবং বায়োলজিকাল অস্ত্রের বিস্তার;
আধুনিক সন্ত্রাসবাদ; এবং
সীমানা বহির্ভূত অপরাধ সংঘন ইত্যাদি
কিন্তু এই ইস্যুগুলোর মধ্যে কোনটি বেশি হুমকি স্বরুপ আর কোনটি কম- এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। কিন্তু আমরা দেখি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তিশালী দেশগুলো যেগুলোমে বেশি প্রাধান্য দেয় সেগুলোই প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে যায় যেমনঃ পশ্চিমাদের কাছে অগণতন্ত্র, পরিবেশ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু। আবার অঞ্চলভেদেও এই নিরাপত্তা ইস্যু ভিন্ন হতে পারে যেমনঃ আফ্রিকার কাছে এইডস ও খাদ্যাভাব বড় নিরাপত্তা ইস্যু। যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুদ্ধ বা সংঘাতকেই প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে ধরা হয়, এবং এই হুমকি অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকিকেও প্রভাবিত করে থাকে। বর্তমান ইউক্রেন সংকট এই বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
নিরাপত্তা কিভাবে অর্জন করা যায়?
নিরাপত্তা অধ্যায়ণে এই প্রশ্নটির উত্তরই সবচেয়ে জরুরি। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আমরা কিভাবে নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দেই। আমাদের প্রধান্যের নিরিখেই নিরাপত্তা কিভাবে অর্জিত হবে সেই পলিসি গ্রহণ করা হয়। Absolute Security বলতে আসলে কিছু নেই। মানুষ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানাবিধ হুমকিতে ভুগে থাকে। সেক্ষেত্রে হুমকির লেভেলের উপর উপর নিরাপত্তা নির্ধারিত হবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে নিরাপত্তা বিভিন্ন কায়দায় অর্জন করা যায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রধানত রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন হয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অ-রাষ্ট্রীয় সত্তাগুলোও নিরাপত্তা অর্জনে সহায়তা করে। সামাজিক সংস্কার, মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগি সংস্থাগুলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমেও নিরাপত্তা অর্জন করা যায়।
সর্বাংশে আমরা বলতে পারি বিশ্ব রাজনীতি এই নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে নিয়েই পরিচালিত হয়, তা হোক সামরিক বা পরিবেশগত। অন্যদিকে নিরাপত্তা অধ্যায়ণ আমাদেরকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিক্রমা অনুধাবনে সহায়তা করে, বিশেষত কিভাবে হুমকি থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
ভাবানুবাদকঃ বদিরুজ্জামান
মূল বইঃ
Security Studies: An Introduction by Paul. o. Williams.
নিরাপত্তা জরুরি, অন্তত বিশ্ব রাজনীতিতে। শুধু রাজনীতিবিদদের মুখে বা পন্ডিতদের লেখনিতেই না, গণমাধ্যমের প্রতিটি শাখায় 'নিরাপত্তা' বিষয়টি এখন প্রধান চর্চায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো 'নিরাপত্তা' বিষয়টি অনেকাংশেই 'আপেক্ষিক বা পক্ষপাতমূলক (Subjective)'। বিশেষত সমাজ বিজ্ঞানে নিরাপত্তার সংজ্ঞায়নকে ঘিরে নানান তর্ক-বিতর্ক চালু আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা একটা সোজা সংজ্ঞায়নে একমত যে নিরাপত্তা বলতে সকল ধরনের হুমকির অনুপস্থিতিকেই বুঝায়। এছাড়াও, যে পদ্ধতিতে নিরাপত্তার বিভিন্ন ধরন নিয়ে গবেষণা করা হয় তাকে 'নিরাপত্তা অধ্যায়ণ' বলে।
নিরাপত্তা অধ্যায়ণঃ
নিরাপত্তা অধ্যায়ণ ও নিরাপত্তা অর্জনে যুদ্ধ ও সংঘাত- মানব সমাজের শুরু থেকেই প্রতীয়মান। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানান অঞ্চলে বিচিত্র বিষয়কে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের অংশ হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু আধুনিক নিরাপত্তা অধ্যায়ণের যাত্রা শুরু হয় দুই মহাযুদ্ধের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেক্ষাপটে। কারণ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিদারুণ আঘাত ইউরোপীয় শক্তিগুলোকে অনেকটাই দুর্বল করে দিয়েছিলো, এবং সংঘাত বা যুদ্ধ নিরসনের মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জনই ছিলো শক্তিগুলোর প্রধান লক্ষ্য। ধীরে ধীরে "নিরাপত্তা অধ্যায়ণ" আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপশাখা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
১৯৫০ ও ১৯৬০'র দশককে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের স্বর্ণযুগ বলা হয়। এই সময় পারমাণবিক ডেটারেনস তত্ত্বের বিকাশ, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে সিস্টেম তত্ত্বের আধারে ব্যাক্ষা করা এবং কোন সংকট/সংঘাত উদ্ভুত হলে তার ম্যানেজমেন্ট কেমন হতে পারে- শান্তিপূর্ণ না সামরিক তার বিস্তারিত গবেষণা নিরাপত্তা অধ্যায়ণের ফলেই সম্ভব হয়েছিলো। কিউবার মিসাইল সংকট থেকে মুক্তি নিরাপত্তা অধ্যায়ণের অন্যতম বড় সফলতা বলে উল্লেখ করা যায়।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রে ছিলো ৪ টি থিম। যথাঃ
রাষ্ট্র (State) ই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান সত্তা;
কৌশল (Strategy) এ কোন সংঘাত উদ্ভুত হলে রাষ্ট্র কোন উপায়ে (সামরিক না শান্তিপূর্ণ) তা সমাধা করবে তার তুলনামূলক বিশ্লেষণ;
বৈজ্ঞানিক (Science) পদ্ধতিতে গবেষণা পরিচালনা করবে রাষ্ট্র যাতে নিরপেক্ষভাবে কোন সমাধানে পৌছানো যায়; এবং
সাম্যাবস্থা (Status Quo) এ যখন শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য অবস্থা বজায় থাকবে তখন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে।
পরবর্তীতে Barry Buzan তার বিখ্যাত বই States and Fear এ নিরাপত্তার পরিধিকে আরো সম্প্রসারণ করেন। বুজান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সামরিক নিরাপত্তার বাইরেও আরো চারটি ধরণ যুক্ত করেন। যথাঃ
রাজনৈতিক নিরাপত্তা
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
সামাজিক নিরাপত্তা এবং
পরিবেশগত নিরাপত্তা।
নিরাপত্তা অধ্যায়ণের আলোচ্য বিষয়ঃ
গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে নিরাপত্তা অধ্যায়ণ চারটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্ট করে। যথাঃ
নিরাপত্তা কী?
কার জন্য নিরাপত্তা?
নিরাপত্তার পরিধি কতটুকু?
কিভাবে নিরাপত্তা অর্জন করা যায়?
নিরাপত্তা কী?
যেখানে লালিত মূল্যবোধ কোনরূপ হুমকি থেকে রক্ষা পায় সেখানেই নিরাপত্তা কায়েম হয়। অর্থাৎ, হুমকির (Threats) অনুপস্থিতিই নিরাপত্তা (Security)। অনেকেই নিরাপত্তা (Security) ও টিকে থাকা (Survival) কে গুলিয়ে ফেলেন, কিন্তু উভয়েই বৈশিষ্ট্যগত ভাবে ভিন্ন। যেখানে টিকে থাকা (Survival) অস্তিত্বের (Existential) সাথে সম্পর্কিত, সেখানে নিরাপত্তা সামাজিক ও রাজনৈতিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ নাগরিকদের অধিকারগুলো নিশ্চিতকরণের রাষ্ট্রের সক্ষমতার মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা অর্জিত হয়, এবং এই অধিকারগুলো যখন রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ হয় তখন নাগরিকরা অনিরাপত্তায় ভোগে।
অন্যদিকে, দর্শনের ভাষায় নিরাপত্তার দুটি বিপরীত ধর্মীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। প্রথমটি নিরাপত্তাকে 'শক্তি অর্জন বা পুঞ্জিভূতকরণ' এর সাথে সমার্থক হিসেবে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, শক্তি অর্জনের মাধ্যমেই নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব। কোন সত্ত্বার যত শক্তি অর্জনের সক্ষমতা থাকবে, সে ততটা নিরাপদে থাকবে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় নিরাপত্তাকে শান্তির (Emancipation) সাথে তুলনা করা হয়, এবং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই শান্তি অর্জন সম্ভব। তবে, অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা- নিয়মকের (যেমনঃ পারমাণবিক অস্ত্র) চেয়ে রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের নিরিখেও নির্ধারিত হয়। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের পারমাণবিক শক্তি অর্জনকে যেভাবে নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ বলে প্রচার করে, ইসরায়েল বা ভারত বা পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার বেলায় কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তাহীনতার বুলি আওরায় না।
অতএব, নেতিবাচক ভাবে নিরাপত্তা হল হুমকির (সামরিক) অনুপস্থিতি, আর ইতিবাচক দিক দিয়ে নিরাপত্তা হল নাগরিকদের প্রয়োজনীতা পূরণের সম্ভাব্য সক্ষমতা। অর্থাৎ, দেশ নাগরিকদের বিচিত্র আকাঙ্ক্ষার যোগান দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
কার নিরাপত্তাঃ
ঐতিহাসিকভাবে নিরাপত্তা সবসময়ই মানব কেন্দ্রিক ছিলো। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নিরাপত্তা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। আরো বিশেষায়িত করে বললে নিরাপত্তা জাতীয় স্বার্থের সাথে ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়৷ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিরাপত্তাকে জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবেও দেখানো হয়।
যাইহোক, নিরাপত্তা অধ্যায়ণে কার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হবে, এর সম্ভাব্য পাঁচটি উত্তর পাওয়া যায়। যথাঃ
রাষ্ট্রঃ আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রই প্রধান সত্তা, যাকে ঘিরে নিরাপত্তা বিষয়টি আলোচিত হয়। বিশেষত স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার যে-কোন পরিবর্তন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার উপর হুমকি স্বরুপ কী কল্যাণকর তা বিবেচনা করা হত। জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তা তখন একই সুতোয় গাথা ছিলো। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রকেই একমাত্র নিরাপত্তা অর্জনের কেন্দ্রে রাখতে হবে এই চেতনাকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছিলো।
মানব-জীবনঃ রাষ্ট্র কেন্দ্রিক নিরাপত্তার রাডার পরিবর্তন করে, বিশ্লেষকরা মানুষকে নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন। তখন থেকে মানব নিরাপত্তা (Human Security) ধারনাটির বিকাশ ঘটতে থাকে। মানব সম্মান (Human Dignity) রক্ষাকেই মানব নিরাপত্তার সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের নীতি নির্ধাকদের কাছে মানব নিরাপত্তা- নিরাপত্তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে সেভাবে গুরুত্ব পায়নি।
সমাজঃ সমাজকে অনেক বিশ্লেষকই নিরাপত্তা অধ্যায়ণের সবচেয়ে জরুরি ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। কারণ, তারা মনে করেন, ব্যক্তি বিশেষে নিরাপত্তা আপেক্ষিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু মানুষ যখন সংঘবদ্ধভাবে সমাজ গঠন করে, তখন তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোও নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং নিরাপত্তা অর্জনে সামাজিক সমন্বয়ন ঘটে।
বিশ্লেষণ স্তর (Level of analyses): এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেভেল থেকে আমরা নিরাপত্তা বিশ্লেষণটি করতে পারি। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে ব্যক্তি পর্যন্ত সবই এই বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত (যেমনঃ রাষ্ট্র, আমলাতন্ত্র, রাজ্য, প্রদেশ, অঞ্চল, সভ্যতা, নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি)
পরিবেশগতঃ এই ক্ষেত্রে নিরাপত্তার কেন্দ্রে থাকে পৃথিবী৷ এই পৃথিবী একটা বড় বাস্তুসংস্থানকে নিয়ে টিকে আছে। মানুষ এই ইকোলজির অংশ এবং পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। অতএব সব কিছুর আগে পরিবেশকেই নিরাপত্তা অধ্যায়ণের কেন্দ্রে রাখতে হবে।
নিরাপত্তা ইস্যু কোনগুলো?
নিরাপত্তা কী ও কার নিরাপত্তা, এই দুই প্রশ্নের উত্তর বের করার পর তৃতীয় জরুরি বিষয়টি হল নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে নির্ধারণ করা। সাধারণত যে বিষয়গুলোর উপস্থিতি হুমকিকে (Threat) উস্কে দেয়, তাকেই নিরাপত্তা ইস্যু বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় কে বা কারা- কোন কোন বিষয়গুলোকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে, এবং কেন?
একদিক দিয়ে এই ইস্যুগুলো ব্যক্তি কেন্দ্রিক হতে পারে- অর্থাৎ নিরাপত্তা ইস্যুগুলো লিঙ্গ, জাত, বর্ণ, ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রেণী। এমনকি সেই ব্যক্তির জন্মস্থান, তার গন্তব্যস্থল, তার ভবিষ্যৎ জীবন পরিক্রমা ইত্যাদি কেন্দ্রিক হতে পারে। এক্ষেত্রে ইস্যুগুলোর গুরুত্ব আপেক্ষিক হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা অধ্যায়ণে যে হুমকিগুলো সমাজকে আক্রান্ত করে সেগুলো নিয়েই আলোচনা করে৷
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ - নিরাপত্তা এবং বিশ্ব ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলবে এমন কিছুকেই নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। যেমনঃ আধুনিক সন্ত্রাসবাদকে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক হুমকি হিসেবে প্রচার করে৷ অন্যদিকে, দুর্বল দেশগুলোর নিরাপত্তা তুলনামূলক কম বিস্তারিত হয়। যেমনঃ ঘানা তাদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংঘাত ও এইডসকে চিহ্নিত করে।
অন্যদিকে জাতিসংঘ তার সনদ অনুযায়ী যে ইস্যুগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপদ বজায় রাখতে বাধা দিবে তাকেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে প্রচার করে। যেমনঃ
আর্থ-সামাজিক হুমকি। যেমনঃ দারিদ্র্য, মহামারী ও সংক্রামিত রোগ, পরিবেশগত বিপর্যয়;
আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংঘর্ষঃ যেমনঃ গৃহযুদ্ধ, গণহত্যা;
পারমাণবিক, রেডিওলোজিকাল, রাসয়নিক, এবং বায়োলজিকাল অস্ত্রের বিস্তার;
আধুনিক সন্ত্রাসবাদ; এবং
সীমানা বহির্ভূত অপরাধ সংঘন ইত্যাদি
কিন্তু এই ইস্যুগুলোর মধ্যে কোনটি বেশি হুমকি স্বরুপ আর কোনটি কম- এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কারো নেই। কিন্তু আমরা দেখি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শক্তিশালী দেশগুলো যেগুলোমে বেশি প্রাধান্য দেয় সেগুলোই প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু হয়ে যায় যেমনঃ পশ্চিমাদের কাছে অগণতন্ত্র, পরিবেশ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু। আবার অঞ্চলভেদেও এই নিরাপত্তা ইস্যু ভিন্ন হতে পারে যেমনঃ আফ্রিকার কাছে এইডস ও খাদ্যাভাব বড় নিরাপত্তা ইস্যু। যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুদ্ধ বা সংঘাতকেই প্রধান নিরাপত্তা ইস্যু হিসেবে ধরা হয়, এবং এই হুমকি অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকিকেও প্রভাবিত করে থাকে। বর্তমান ইউক্রেন সংকট এই বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ৷
নিরাপত্তা কিভাবে অর্জন করা যায়?
নিরাপত্তা অধ্যায়ণে এই প্রশ্নটির উত্তরই সবচেয়ে জরুরি। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আমরা কিভাবে নিরাপত্তা ইস্যুকে প্রাধান্য দেই। আমাদের প্রধান্যের নিরিখেই নিরাপত্তা কিভাবে অর্জিত হবে সেই পলিসি গ্রহণ করা হয়। Absolute Security বলতে আসলে কিছু নেই। মানুষ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নানাবিধ হুমকিতে ভুগে থাকে। সেক্ষেত্রে হুমকির লেভেলের উপর উপর নিরাপত্তা নির্ধারিত হবে।
বিশ্ব রাজনীতিতে নিরাপত্তা বিভিন্ন কায়দায় অর্জন করা যায়। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রধানত রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন হয়। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অ-রাষ্ট্রীয় সত্তাগুলোও নিরাপত্তা অর্জনে সহায়তা করে। সামাজিক সংস্কার, মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগি সংস্থাগুলো, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমেও নিরাপত্তা অর্জন করা যায়।
সর্বাংশে আমরা বলতে পারি বিশ্ব রাজনীতি এই নিরাপত্তা ইস্যুগুলোকে নিয়েই পরিচালিত হয়, তা হোক সামরিক বা পরিবেশগত। অন্যদিকে নিরাপত্তা অধ্যায়ণ আমাদেরকে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিক্রমা অনুধাবনে সহায়তা করে, বিশেষত কিভাবে হুমকি থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
ভাবানুবাদকঃ বদিরুজ্জামান
মূল বইঃ
Security Studies: An Introduction by Paul. o. Williams.


No comments