Header Ads

Header ADS

চার্লস মার্কস না কার্ল মার্কস?

 
Karl Marx

মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনার সূচনায় সাধারণ পাঠকদের মনে প্রথমেই যে প্রশ্নটি উদিত হয় -"কে এই কার্ল মার্কস?" 
 
ইংরেজিতে উচ্চারণ চার্লস মার্কস হলেও, তিনি পরিচিত তার জার্মান ডাকনাম কার্ল মার্কস হিসেবে। মার্কস আদতে একজন দার্শনিক ছিলেন। ধর্মীয় দিক থেকে মার্কস ইহুদি হলেও, ইহুদি ধর্মকে তিনি নানান কারণে প্রশ্নবিদ্ধ ও সমালোচনা করেছিলেন, এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালন থেকে বিরত ছিলেন।

মার্কসের সংগ্রামী জীবনের ব্যপ্তি ছিলো ১৮১৮-১৮৮৩ সাল অব্দি। কমিউনিজম বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের জনক হিসেবে মার্কস সর্বাধিক প্রসিদ্ধ এবং ধিকৃতও। 


মার্কসের লেখা বই, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও তার চিন্তা বা আইডিয়াকে বিংশ শতকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্রহণ করেন। বাকী দুই-তৃতীয়াংশ মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মত্ত ছিলেন। অর্থাৎ, বিংশ শতকের বিশ্বকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা:

  • যারা ছিলেন মার্কসবাদী দর্শনে অনুপ্রাণিত;

  • যারা মার্কসবাদকে যাবতীয় সংঘাতের কেন্দ্রভেবে এই দর্শনকে ঘৃণা করতেন; এবং

  • যারা মার্কসবাদ বা মার্কস- এর কোনটিই জানে না বা এ নিয়ে মাথা ঘামান নি। 


মজার বিষয় হল, বিংশ শতকে মার্কস অনেকাংশেই কুরআন ও বাইবেলের মতন প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলো। অর্থাৎ, মার্কসবাদের অনুসারীরা মার্কসের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিতেন। তবে তাদের খুব কম অনুসারীই মার্কসকে বুঝতে চাইতেন বা মার্কসবাদকে গভীরভাবে অধ্যায়ন করতেন। 


মার্কস বা মার্কসবাদের এত প্রভাব বিস্তারের অনেকগুলো কারণের একটি ছিলো, মার্কস বিশ্ববাসীকে এমন কিছু জটিল প্রশ্নের জ্ঞান ও তত্ত্বমূলক ব্যাক্ষ্যা দিয়েছেন যেগুলো ইতিপূর্বে সেভাবে আলোচিত হয়নি। মার্কসবাদী দর্শনের অনুশাসন বিংশ শতকে মানুষকে মানুষের শোষণ থেকে মুক্তি লাভের আশা বা দিশা দেখিয়েছিলো। 


আজ আমরা যে সামাজিক নিরাপত্তা, ভাতা, সাপ্তাহিক ছুটি, শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন, বৃত্তি, কৃষি ও শিল্পখাতে ভর্তুকি পেয়ে থাকি তার পিছনে দীর্ঘদিনের মার্কসবাদী দর্শন ও আন্দোলনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এছাড়াও মার্কসবাদী আদর্শের ফলে- অসমতা ও শোষণ থেকে মুক্তি লাভের নীতি বহুদেশের সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। 


যাহোক, ১৮১৮ সালের ৫ই মে, প্রুশিয়ান (বর্তমান জার্মানি) সাম্রাজ্যের ত্রিভেরী (বর্তমান ত্রিয়ার) শহরের এক স্বচ্ছল পরিবারে কার্ল মার্কস জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হেনরিখ মার্কস পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন, এবং তৎকালে আইন পেশার কদর ছিলো বলে, তার পিতা মার্কসকেও আইন বিষয়ে অধ্যায়নের জন্য জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন।  

উচ্চ শিক্ষার্জনে মার্কস পরবর্তীতে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু বার্লিনে থাকাকালীন মার্কস ইহুদি ধর্ম ত্যাগ করেন, এবং নিজেকে নাস্তিক বলে ঘোষণা দেন। ফলে আইনে বিশেষজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও, ধর্মভীরু বা অর্থডোক্স জার্মান সমাজে পেশাগত জীবনে মার্কস তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেন নি।  

মাত্র আঠারো বছর বয়সে কার্ল মার্কস জেনি ভন ওয়েস্টফিলিয়াকে বিয়ে করেন। জেনি ছিলেন সুশ্রী ও অভিজাত পরিবারের কন্যা। তবে মার্কসের জটিল জীবনের করুন পরিণতিতে জেনি সবসময় মার্কসকে ছায়ার মত আগলে রেখেছিলেন। 

জার্মানিতে কার্ল মার্কসের টিকে থাকা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছিলো। ফলে, ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে স্ত্রী জেনিকে নিয়ে মার্কস ফ্রান্সের প্যারিসে পাড়ি জমান। প্যারিসে মার্কস ফ্রাঙ্কো-জার্মান এনালস নামক পত্রিকার সহ-সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্যারিসে মার্কস ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের সাথে পরিচিতি হন, এবং উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে যে বন্ধুত্ব বিশ্বকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছে। 

ফ্রাঙ্কো-জার্মান এনালস পত্রিকাটিকে ফরাসি সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং মার্কসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ফলে মার্কস প্যারিস ছেড়ে লন্ডনে পালিয়ে যান। তার জীবনের বাকী অংশ লন্ডনেই কাটে। 

অবশেষে, ১৮৮৩ সালের ১৪ই মার্চ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কার্ল মার্কস মৃত্যু বরণ করেন। তাকে ১৭ই মার্চ লন্ডনের হাইগেট সেমিটারি-তে সমাহিত করা হয়।  

তার সমাধি ফলকে দুটি বাক্য লেখা আছে। প্রথমে লেখা, কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর শেষ লাইন "দুনিয়ার মজদুর এক হও" (Workers of all land unite), এরপরে লেখা ১১তম থিসিস অন ফয়ারবাখ-এর এঙ্গেলীয় সংস্করণের বিখ্যাত উক্তি, "এতোদিন দার্শনিকেরা কেবল বিশ্বকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাই করে গেছেন, কিন্তু আসল কাজ হল তা পরিবর্তন করা। 

নিচে কার্ল মার্কসের লেখা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই/প্রবন্ধের নাম উল্লেখিত হলঃ 













মার্কসবাদ নিয়ে লেখা চলবে......



লেখকঃ 

বদিরুজ্জামান
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়










No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.