মরগেনথুর ছয় নীতিঃ ক্লাসিক্যাল রিয়ালিজমের মানদন্ড
বিংশ শতকের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অন্যতম হ্যান্স জোওয়াসিম মরগেনথু (ফেব্রুয়ারি ১৭, ১৯০৪- জুলাই ১৯, ১৯৮০)। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব ও আন্তর্জাতিক আইন অধ্যায়নের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন। Politics among Nations মরগেনথুর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ।
তার জীবদ্দশায় বইটির পাঁচটি সংস্করণ বের হয়েছিল। দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে Six Principles of Political Realism শিরোনামে গ্রন্থটির প্রথম অধ্যায় শুরু হয়। তখন থেকেই ক্লাসিক্যাল রিয়ালিজম তত্ত্ব অনুধাবন ও বিশ্লেষণে মরগেনথুর ছয় নীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।
হ্যান্স জি. মরগেনথুর ছয় নীতি যথাক্রমেঃ
- মানব প্রকৃতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি;
- জাতীয় স্বার্থ শক্তির দ্বারা নির্ধারিত;
- জাতীয় স্বার্থ সবসময় গতিশীল;
- আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নৈতিক আদর্শ;
- রাষ্ট্রীয় আদর্শ বনাম সার্বজনীন মূল্যোবোধ; এবং
- স্বাধীন বিশ্ব-রাজনীতি।
চলুন বিভিন্ন উদাহরণের সাহায্যে নীতিগুলোকে বুঝে নেয়া যাক।
১. মানব প্রকৃতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিঃ
রিয়ালিস্ট দার্শনিকদের অনুকরণে মরগেনথু বলেন, মানব চরিত্রের একটা সহজাত বিষয় হল মানুষ রেশনাল- অর্থাৎ, মানুষ সবসময় স্বার্থ আদায়, নিরাপত্তা অর্জন ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চায়। যেমনঃ থমাস হবস তার লেবিয়াথান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন মানুষ প্রকৃতিতে টিকে থাকার প্রয়োজনেই আবেগ বা আদর্শ বা নৈতিকতায় ত্বারিত না হয়ে শক্তি অর্জনে চেষ্টা চালায়; প্রতিযোগিতায় একে অন্যের উপর প্রভাব খাটিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
প্রেক্ষাপটে যতই পরিবর্তন আসুক না কেনো, মানুষের সহজাত স্বভাব একই থাকে যাকে মরগেনথু Objective Laws (Amimus Dominandi) বলে উল্লেখ করেছেন। এই বিবেচনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল হয়তো মানুষকে প্রকৃতিগত বা জন্মগতভাবে রাজনৈতিক জীব বলেছেন। কারণ, রাজনীতির উদ্দেশ্য একটাই- শক্তি অর্জন। এই শক্তি অর্জনের সাহায্যে মানুষ তার স্বার্থ, নিরাপত্তা বা টিকে থাকা নিশ্চিত করতে পারে।
মরগেনথুর ভাষায় আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও এমন সহজাত বৈশিষ্ট্য আছে- যা অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকে- তা হল শক্তি অর্জনের মাধ্যমে নিজের টিকে থাকা নিশ্চিত করা। যেমনঃ প্রাচীন গ্রিসের এজিয়ান ও ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন অঞ্চলের উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষে এথেন্স, স্পার্টা, মেসিডোনিয়া বা পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চালু ছিলো।
ক্ষুদ্র নগর রাষ্ট্রগুলো এই বৃহৎ শক্তিদের সাথে মৈত্রী গঠনের মাধ্যমে টিকে থাকতে চাইতো। মধ্যযুগে বাইজান্টাইন, রুশ ও অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যেও সামরিক শক্তি বৃদ্ধির একই প্রবণতা লক্ষণীয়। আধুনিক সময়ের, স্নায়ুযুদ্ধকালে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একই ধরণের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।
অতএব, মানুষ ও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অপরিবর্তিত থাকে। অর্থাৎ, মরগেনথুর ভাষায় নিজের টিকে থাকা, স্বার্থ বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হিসেবে রাষ্ট্র বা মানুষ শক্তি অর্জন বা রাজনীতিকেই বেছে নেয়।
২. জাতীয় স্বার্থ শক্তির দ্বারা নির্ধারিত:
মরগেনথুর ছয়নীতির দ্বিতীয় নম্বর নীতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সহজে ভাষায় বললে, দ্বিতীয় প্রিন্সিপালে বলা হয় যে, একটি রাষ্ট্র তার শক্তির বিবেচনায় তার জাতীয় স্বার্থকে নির্ধারণ করবে। যেমন ধরুন চীনের কথা। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চীনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে চীন পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক শক্তি।
এই সক্ষমতা চীনকে নতুন নতুন স্বার্থ নির্ধারণে সাহায্য করেছে। দক্ষিন ও পূর্ব চীন সাগরের উপর চীন একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে, আসিয়ান দেশগুলোতে চীনের প্রভাব বজায় রাখতে চাচ্ছে, এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিরোধিতা করছে। সেক্ষেত্রে চীন দ্রুতগতিতে তার নৌ-সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে।
একইভাবে একটি রাষ্ট্র তার শক্তির সাহায্যে তার স্বার্থ আদায় করবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের স্বার্থ নির্ধারণ বা আদায় উভয়েই রাষ্ট্রের শক্তি বিবেচনায় হবে। একইভাবে মরগেনথুর ভাষায়, একটি রাষ্ট্রের আচারণ শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়; একটি রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি প্রণয়নও শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
যেমন ধরুন ইসরায়েলের কথা। অবস্থানগত কারণে ইসরায়েল নিজেকে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে অনিরাপদ মনে করে৷ ফলে, ইসরায়েল শক্তি অর্জনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক স্বার্থ যেমনঃ সীমান্তবর্তী দেশ ও ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে গ্রেটার ইসরায়েল গঠন করা, এবং ইরান ও সিরিয়ার সামরিক উত্থানকে রুখে দেওয়া।
৩. জাতীয় স্বার্থ সবসময় গতিশীল:
জাতীয় স্বার্থের পরিধি ও প্রকৃতি সবসময় পরিবর্তনশীল। রাজনীতি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সাথে সাথে জাতীয় স্বার্থের গতিপথও পালটে যায়। এই পরিবর্তনের প্রভাবে রাষ্ট্রের নীতি প্রণয়ন ও কর্ম পরিকল্পনায় নতুনত্ব আসে।
যেমন ধরুন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কথা। স্নায়ুযুদ্ধকালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক সক্ষমতা ও সমাজতান্ত্রের বিস্তারকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের নিরাপত্তা ও স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে, ন্যাটোকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করে সোভিয়েতের বিপরীতে শক্তি ভারসাম্য রক্ষা করার নীতি ই.ইউ. গ্রহণ করেছিলো।
কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইইউ'র রাজনৈতিক স্বার্থ পরিবর্তিত হয়, ফলে ন্যাটোকে রাশিয়ার বিপরীতে শক্তিশালী করার প্রশ্নেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতপার্থক্য লক্ষিত হয়। সম্প্রতি ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত না করার পিছনে ইইউর শক্তিশালী কিছু দেশ যেমন: জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস অনাগ্রহ প্রধান কারণ।
একই উদাহরণ শক্তির বেলায়ও খাটে। যেহেতু, রাজনৈতিক স্বার্থ জাতীয় শক্তির দ্বারা নির্ধারিত হয়, সেক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের স্বার্থের গতিপথ সুরক্ষিত রাখতে রাষ্ট্রের শক্তি অর্জনেও নতুনত্ব আনতে হয়।
যেমন ধরুন স্নায়ুযুদ্ধকালে সোভিয়েতের এন্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের মধ্যে শক্তির অসম অবস্থা তৈরি করে। ফলে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্বার্থ নির্ধারিত হয় সোভিয়েতের সাথে শক্তির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা। তখন যুক্তরাষ্ট্রও একই ধরণের মিসাইল তৈরি করে। এভাবেই স্বার্থের পরিবর্তন শক্তির ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করে।
৪. আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নৈতিক আদর্শ:
মরগেনথুর ভাষায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনায় রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ এবং ব্যক্তিগত নীতি-আদর্শ কখনই এক হবে না। একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও একজন রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের চিন্তার স্বাধীনতা সমান নয়। চিন্তা বা আচরণের ক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়বদ্ধতা না থাকলেও, রাষ্ট্র পরিচালককে সবসময় দায়ত্বশীল আচারণ করতে হয়।
কারণ, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, টিকে থাকা বা স্বার্থ আদায়ের উপর রাষ্ট্রপ্রধানের আচারণ বা সিদ্ধান্ত যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। ম্যাকেয়াভেলি যেমনটি বলেছেন- রাজাকে সর্বদা বিচক্ষণ ও রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ে সচেতন ও কৌশলী হতে হবে। অন্যথায়, প্রতিযোগিতায় বা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রের স্বার্থ ব্যহত হবে।
যেমন ধরুন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ব্রিটেন ও জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধানদের রাজনৈতিক আদর্শ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিতে ভার্সাই চুক্তি হয় যেখানে নৈতিক আদর্শের উপর জোর দেয়া হয়। অর্থাৎ, মানুষের পজিটিভ গুণগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়, প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাত নিরাময়ের কথা বলা হয়; নিরস্ত্রীকরণের সাহায্যে সংঘাতের মাত্রা কমিয়ে আনার দিকে গুরুত্ব দেয়া হয় ইত্যাদি।
কিন্তু জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে যখন হিটলার ক্ষমতায় আসেন, তিনি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেন। অর্থাৎ, হিটলার ভার্সাই চুক্তির নৈতিক আদর্শকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্র থেকে দূরে রেখে, প্রথাগত সামরিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থ আদায়ে জোর দেন। তিনি গোপনে রাইনল্যান্ডে সামরিক স্থাপনা গড়ে তোলেন।
খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর লীগ অব নেশনস থেকে তেমন কোন শক্তি বা সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর অন্যতম কারণ ছিলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নেভিল চেম্বারলিনের নীতিবাদী রাষ্ট্রদর্শন। অর্থাৎ, চেম্বারলিন, হিটলারের এই সামরিক উত্থানকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত না করে এবং হুমকির বিপরীতে সমন্বিত সামরিক পদক্ষেপ না নিয়ে বরং হিটলারের সাথে সমঝোতা নীতি গ্রহণ করেন, যাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভাষায় Appeasement Policy বলে।
চেম্বারলিনের বিশ্বাস ছিলো সমঝোতা চুক্তির ফলে জার্মানিও ব্রিটেনের মত নৈতিক আদর্শ অনুসরণ করবে। কিন্তু হিটলার চেম্বারলিনের এই সমঝোতার মানসিকতাকে দুর্বলতা হিসেবে নিয়েছিলো, এবং পরবর্তীতে চেকোস্লোভাকিয়া ও পোলান্ড আক্রমনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুচনা ঘটান। দ্বিতীয় যুদ্ধকালে উইন্সটন চার্চিল ব্রিটেনের ক্ষমতায় এসে চেম্বারলিনের নীতির পরিবর্তন করে রাজনৈতিক স্বার্থ সম্পর্কিত আদর্শ গ্রহণ করে্ন।
৫. রাষ্ট্রীয় আদর্শ বনাম সার্বজনীন মূল্যোবোধ:
চতুর্থ নীতির অনুকরণেই মরগেনথু তার পঞ্চম নীতিতে বলেন, রাষ্ট্র কখনো তার জাতীয় আদর্শ সার্বজনীন মূল্যবোধের নিরিখে গ্রহণ করবে না। তার মতে, জাতীয় স্বার্থ কখনই সার্বজনীন আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে না, উপরুন্ত প্রতিই সার্বভৌম রাষ্ট্রের ্নীতিগত ভিন্নতাই তাদের স্বার্থ নির্ধারণে বৈচিত্র নিয়ে আসে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র তার আদর্শ অনুযায়ী তার স্বার্থ ঠিক করে থাকে।
যেমন ধরুন যুক্তরাষ্ট্র তার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে সার্বজনীন আদর্শ বা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ হিসেবে প্রকাশ করে। কিন্তু সার্বজনীনতার আড়ালে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। এর পূর্বে প্রথম গালফ যুদ্ধেও এমন নীতি যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছিলো। এমনকি আরব বসন্তের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র সার্বজনীন আদর্শের ভিতরে নিজের স্বার্থ আদায়ে চেষ্টা করেছে।
একইভাবে, রাষ্ট্র শুধু শক্তির দ্বারাই জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টায় থাকবে। সার্বজনীন আদর্শবাদের অনুসরণে রাষ্ট্র তার কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করবে না। অর্থাৎ, শক্তির ব্যবহারের বাহিরে স্বার্থ আদায়ের অন্য কোন উপায় রাষ্ট্র গ্রহণ করবে না। যেমন ধরুন ভারত-পাকিস্তানের কথা। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তারা সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেয়। সার্বজনীন নীতি যেমন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে তারা বিশ্বাসী নয়, উপরুন্ত ভূরাজনৈতিক সমীকরণে নতুন নতুন সামরিক স্থাপনা প্রতিষ্ঠাকে মূল আদর্শ হিসেবে তারা বিবেচনা করেন।
৬. স্বাধীন বিশ্ব-রাজনীতি:
হ্যানস জি মরগেনথুর ভাষায়, রাজনৈতিক রিয়ালিজম আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে একটি স্বাধীন ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে, এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তায় তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, একজন অর্থনীতিবিদ যেখানে স্বার্থকে সম্পদের নিরিখে; একজন আইনজ্ঞ যেমন স্বার্থকে সামাজিক বিধিমালার নিরিখে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে, একজন রিয়ালিস্ট বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক, স্বার্থকে সবসময় শক্তির ভিত্তিতে ব্যাখ্যা করেন। এভাবেই আন্তর্জাতিক রাজনীতি দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ, যদি ইউক্রেন যুদ্ধকে ধরি, অর্থনীতিবিদেরা ইউক্রেন যুদ্ধকে অর্থনৈতিক সমীকরণের বিচারে দেখবেন, যেমন বিশ্ববাজারে খাদ্য সংকট, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি; আইনজ্ঞরা যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী, মানবাধিকার লংঘন, যুদ্ধাপরাধ, শরনার্থী সমস্যা প্রভৃতির আলোকে ব্যাক্ষা করেন; কিন্তু রাজনৈতিক রিয়ালিস্টরা এই যুদ্ধকে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখবেন। তাদের ভাষায়, ইউক্রেন রাশিয়ার মত বৃহৎ শক্তির শোষণ বা প্রভাব থেকে বাঁচতে বা রাশিয়ার বিপরীতে শক্তি ভারসাম্য তৈরির উদ্দেশ্যে ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছেন, এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক সহায়তা নিয়ে রাশিয়ার বিপরীতে লড়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া এবং ন্যাটোর রাশিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পদার্পনকে নিজের নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে নিয়েছে। এক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন রেশনাল আচারণ করেছেন, অর্থাৎ, ন্যাটোতে ইউক্রেনে ঢোকার পূর্বেই সামরিক শক্তি ব্যবহার করেছেন, অর্থাৎ সংঘাতে লিপ্ত হয়েছেন।
আশাকরি, মরগেনথুর ছয় নীতি সম্পর্কে আপনাদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। এই নীতির মূল ভাষ্য, রাষ্ট্রকে শক্তির দ্বারা স্বার্থ অর্জন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন নৈতিকতার অনুসারী হওয়া চলবে না। রাষ্ট্রের সম্পর্ককে স্বার্থের নিরিখে পরিচালনার মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে রাষ্ট্রের টিকে থাকা বা স্বার্থ আদায় নিশ্চিত হয়।
To be continued....
লেখকঃ
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
03bodir@gmail.com
রেফারেন্সঃ
1. Sorenson, G. Jackson, R. (2021). Introduction to International Relations
Theories and Approaches. https://global.oup.com/academic/product/introduction-to-international-relations-9780198862208?cc=bd&lang=en&
2. McGlinchey, S. Walters, R. (2017). International Relations Theory. https://www.e-ir.info/publication/international-relations-theory/
3. Dinesh. 2015. Morgenthau’s Realist Theory (6 Principles). https://www.yourarticlelibrary.com/international-politics/morgenthaus-realist-theory-6-principles/48472


No comments