মুভি রিভিউঃ Burn, 1969
অষ্টাদশ, উনবিংশ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধ্ব পর্যন্ত বিশ্ব রাজনীতির রূপরেখা নির্ধারিত হত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাবে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গোটা বিশ্বে তার উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। যেকোন ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের তুলনায় ব্রিটিশ সান্রাজ্য ছিলো সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী। “The Sun Never Sets in the British Empire”- কথাটি দ্বারা তৎকালীন আন্তর্জাতিক পরিক্রমায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাব, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার ব্যপ্তিকে বুঝানো হত।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমরাও (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ অন্যান্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি) উপনিবেশ হিসেবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলাম। তবে কোন একটি জনপদ বা অঞ্চল ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত হয়েছে কিছু পদ্ধতিগত নিয়ম মেনে। প্রেক্ষাপয় অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন হলেও, ব্রিটিশদের অনুপ্রবেশ ও পর্যায়ক্রমে ক্ষমতাদখল, এবং উপনিবেশ স্থাপনে ব্রিটিশরা কিছু নিয়ম বা ট্যাকটিকস অনুসরণ করেছে।
Burn or The Quemada নামক সিনেমাতে ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার তেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা ট্যাকটিকস্কে দেখানো হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে সহায়ক হতে পারে।
প্রথমে যদি সিনেমাটির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ আপনাদের দেইঃ
সিনেমার নামঃ Burn বা The Quemada
পরিচালকঃ গিলবার্ট পন্টেকর্বো (ইতালিয়ান)
অভিনেতাঃ
স্যার মারলন ব্রান্ডোঃ স্যার উইলিয়াম ওয়াকার
ঈভারিস্তো মার্কেজঃ হোসে ডেলোরেস
রেনাতো সালভাতোরিঃ টেডি সানসেজ
প্রদর্শনের সময়ঃ ১৯৬৯
IMDB Ratings: 7.1/10
Burn সিনেমার প্লটটি সেন্ট্রাল আমেরিকার একটি ছোট্ট দ্বীপ Quemada-কে নিয়ে। দ্বীপটি ভৌগলিকভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় নারকেল ও আঁখ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিলো। এত উর্বর হওয়া সত্বেও এই দ্বীপের স্থানীয় অধিবাসীরা প্রচন্ড অভাব ও মানবেতর জীবন যাপন করতো। কারণ তাদের কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রথম পর্তুগিজদের নজরে আসে। আঁখ রপ্তানির ছলনায় পর্তুগিজরা দ্বীপে উপনিবেশ স্থাপন করে এবং দ্বীপের অধিবাসীদের ভূমি দাসে পরিণত করে।
স্থানীয় পর্যায়ের যেকোন প্রতিরোধ বা বিদ্রোহকে কঠোর হস্তে পর্তুগিজরা দমন করতে থাকে। অসংখ্য প্রতিবাদীদের জেলে বন্দি করা হয়, এবং পর্যায়ক্রমে তাদের হত্যা করে পর্তুগিজরা, পরবর্তীতে নিহতের পরিবারকে সেই লাশের শেষ কৃত্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
যাহোক, আজকের আলোচনায় আমরা Burn সিনেমার রিভিউ যতটা না দিব, সিনেমাটির বিভিন্ন প্লট কেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করবো। অতএব, ভিডিওটি একটি দ্বীর্ঘ হবে, আশাকরি আপনারা শেষ পর্যন্ত থাকবেন।
২ ঘন্টা ০৯ মিনিটের সিনেমাটির ঘটনাগুলোকে যদি থিম হিসেবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি তাহলে ব্রিটিশ উপনিবেশ তৈরির কৌশল আমরা বুঝতে পারবো।
১। কাঁচামালের প্রয়োজনীয়তা:
উপনিবেশ স্থাপন প্রধানত দুইটি কারণে হয়েছে। যথা: ইউরোপ কেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতিতে বেশি বেশি উপনিবেশ স্থাপনকে শক্তিমত্তা ও সক্ষমতার পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনা করা; এবং ঔপনিবেশিক শক্তি ও উপনিবেশিক স্থানের কিছু নির্দিষ্ট কাচামালের প্রাচুর্য অথবা স্বল্পতা। এই অংশে আমরা উপনিবেশ স্থাপনের দ্বিতীয় কারণ নিয়ে আলোচনা করবো।
আপনারা যদি সত্যেন সেনের ‘'মসলার যুদ্ধ’ অনুবাদ গ্রন্থটি পড়েন, তাহলে বুঝতে পারবেন কিভাবে মসলা (যেমন গোলমরিচ, লবঙ্গ, দারচিনি প্রভৃতি) হিরা বা স্বর্ণের মত মূল্যবান হয়ে উঠেছিলো ইউরোপীয় বাজারে। এই মূল্যবান সম্পদ বা কাচামালের সন্ধানে রেনেসা পরবর্তী ইউরোপী সাম্রাজ্য ও বনিকেরা অচেনা সমুদ্রের প্রতিটি প্রান্তে রোমাঞ্চকর সমুদ্রযাত্রা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভাস্কো দা গাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবিস্কার করেন, এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার দীর্ঘ বেবা অন্ত:রীপ পাড়ি দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে নোঙ্গর করে।
এই একই ধরনের ভৌগোলিক ও ভূ-অর্থনৈতিক গুরুত্ব দেখিয়ে Burn সিনেমাটির সূচনা হয়। যেখানে একজন নাবিক এক ব্রিটিশ মার্চেনারি বা বর্তমান ভাষায় স্পাইকে (মারলন ব্রান্ডো) Quemada নামক এক দ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের বর্ণনা দেন। যেখানে গুরুত্ব পায় দ্বীপের প্রচুর আঁখ ও নারিকেল উৎপাদন। এদিকে ইউরোপের বাজারে চিনির চাহিদা আকাশ ছোয়া। ব্রিটিশ শেয়ার বাজারে চিনি ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি মুনাফা আসতে থাকে। তাই ব্রিটিশদের আগেই পর্তুগীজরা এই দ্বীপটির দখল নিয়েছে।
২। স্থানীয়দের ভূমিদাসে পরিণত করাঃ
পর্তুগীজরা Quemada’র উর্বর জমিতে শুধু আঁখ চাষের জন্যই স্থানীয়দের বাধ্য করে (যেমনঃ আমাদের নীল উৎপাদনে বাধ্য করতো ব্রিটিশ নীলকরেরা) এবং তাদের ভূমি দাসে পরিণত করে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে কতিপয় সাহসী যুবক পর্তুগীজদের এই শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন, এবং পর্তুগিজরা কঠোর হস্তে সে বিদ্রোহ দমন করে এবং অসংখ্য স্থানীয়কে বিদ্রোহের অজুহাতে গ্রেফতার করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পর্তুগীজরা ব্রিটিশ একটি চিনি কম্পানির (এন্টিলিস সুগার মিল) সাথে চুক্তি করে দীর্ঘদিন ব্রিটিশ সহ ইউরোপীয় বাজারে চিনি রপ্তানি করতো। কিন্তু যে শর্তে ব্রিটিশ চিনি কোম্পানিটি ইক্ষু সংগ্রহ করতো তাতে তাদের মুনাফা অন্যান্য অঞ্চলের ব্রিটিশ কোম্পানির থেকে কম হত। ফলে কোম্পানিটি ব্রিটিশ স্পাই স্যার উইলিয়াম ওয়াকারের সাথে গোপনে যোগাযোগ করেন। এদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য নিজেদের বড় শত্রু পর্তুগিজদের শাসন কেমন চলছে, এবং কিভাবে সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সে অঞ্চল ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীনে আনা যায় সে উদ্দেশ্যে তার গুপ্তচরবৃত্তি চালু রাখে। কে'মাদার ক্ষেত্রে স্যার উইলিয়াম ওয়াকারই সেই তুরুপের তাস।
৩। ক্ষমতার কেন্দ্রে বিশ্বাস-ঘাতক তৈরি করাঃ
ব্রিটিশ স্পাই উইলিয়াম ওয়াকার কে'মাদায় পা দেয় পর্তুগিজ এক সরকারি অফিসারের আহবানে। তার নাম টেডি স্যানসেজ। তিনি পর্তুগিজ উপনিবেশের একটা গুরত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে কে'মাদায় পর্তুগিজদের শাসনকে হাটিয়ে তিনি কে'মাদায় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, যেখানে তিনি হবে রাষ্ট্রপতি এবং স্থানীয়দের নিয়েই প্রজাতন্ত্র পরিচালিত হবে। এন্টিলিস সুগার কম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে তিনি উলিয়াম ওয়াকারের সাহায্য চান (আমাদের ইতিহাসে এই ব্যক্তিকে মীর জাফরের সাথে তুলনা করা যায়।
উইলিয়াম ওয়াকারের কাছে এই সুযোগ মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত মনে হয়। এক্ষেত্রে তিনি প্রথমে স্থানীয় বিদ্রোহকে চাংগা করতে চেয়েছেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে একজন সাহসী ও সক্ষম স্থানীয় তার দরকার ছিল। এই প্রেক্ষিতেই তিনি প্রথম পরিচিত হন হোসে ডেলোরেসের সাথে।
৪. ব্রিটিশদের চোর-পুলিশ খেলাঃ
হোসে ডেলোরেস একজন কর্মঠ যুবক, যিনি পেশায় একজন কুলি। তবে শারিরীক দিকদিয়ে যতই শক্তিশালী হোক, মানসিকভাবে তারা সবাই পর্তুগিজদের দাসে পরিণত হয়েছিলো। উইলিয়াম ওয়াকার চেয়েছিলেন সেই দাসত্বের অবসান ঘটাতে, এবং হোসে ডেলোরেসের ক্ষেত্রে তিনি সফল হন। এবার, ডেলোরেসকে অর্থের লোভ দেখিয়ে তিনি পর্তুগিজদের কোষাগার লুন্ঠন করতে বলেন। তারা শ্বেতাঙ্গদের কথাকে মেনে নিয়ে পর্তুগিজ ব্যংক লুট করেন এবং সে সম্পদ ব্রিটিশদের কাছে জমা দেন।
কিন্তু ব্রিটিশদের আসল চরিত্র এরপরই ফুটে ওঠে অর্থাৎ বাংলায় যে প্রবাদটি আছে, “চোরকে বলে চুরি করতে, আর গৃহস্থকে বলে সজাগ থাকতে”- কথাটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের চরিত্রের সাথে মিশে যায়। তারা স্থানীয়দের পর্তুগীজ ব্যংক লুটের কথা বলে ঠিকই, পাশাপাশি পর্তুগিজ শাসকদের বলে স্থানীয়রাই তাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
৫. স্থানীয়দের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়াঃ
কার্যত পর্তুগিজরা যখন সৈন্য সমেত স্থানীয়দের জব্দ করতে যান, তখন ব্রিটিশ পরিকল্পনার আরেকরূপ সেখানে দেখা যায়। অর্থাৎ পূর্বেই ব্রিটিশ এক ব্যবসায়ী জাহাজে প্রচুর অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখার পর উত্তেজনার মূহুর্তে উইলিয়াম ওয়াকার স্থানীয়দের হাতে সেই অস্ত্র ফ্রিতে তুলে দেন, এবং প্রশিক্ষণ দেন কিভাবে বন্দুক চালিয়ে পর্তুগীজদের কাবু করতে হবে। স্থানীরা অস্ত্র হাতে পর্তুগীজ সৈন্যদের ভূলন্ঠিত করেন, এবং নির্যাতকদের লাশ নিয়ে পৈশাচিক আনন্দে মেতে ওঠেন। যা ব্রিটিশ পরিকল্পনা সফল হওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে নেয়।
এ পর্যায়ে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনে পর্তুগিজরা একটু নরম পন্থা অবলম্বন করে। তারা স্থানীয়দের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকার দেয়, এবং আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক শক্তির এই প্রস্তাব বিশ্বাসঘাতক সানসেজ ও স্পাই ওয়াকারের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। ফলে স্থানীয় কিছু বিদ্রোহীর সহযোগে সানসেজকে সাথে নিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে পর্তুগিজ গভর্ণরকে হত্যা করা হয়। গভর্নরের মৃত্যুতে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় সেখানে সানসেজ পর্তুগীজ সেনাপ্রধানের সহায়তায় কে'মাদাকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র, এবং নিজেকে অন্ত:বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন।
৬. স্থানীয়দের আত্ম-নিয়ন্ত্রণ বা স্বাধীন হওয়ার ইচ্ছাঃ
কিন্তু তখনো হোসে ডেলোরেসের বিদ্রোহী বাহিনী সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। উপরুন্ত তিনি সানসেজকে কে'মাদার সরকার প্রধান হিসেবে অস্বীকার করে, এবং নিজেকে কে'মাদার সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে ঘোষণা করেন। ডেলোরেস সন্দেহের বসে বিদেশি কম্পানিগুলোকে দ্বীপ থেকে বিতারিত করেন। উইলিয়াম ওয়াকারের পরিকল্পনায় বড় বাধা ছিলো হোসে ডেলোরেসের এভাবে ক্ষমতা গ্রহণ ও বিদেশি কম্পানিগুলোকে বিতারিত করা। এমনকি ডেলোরেস, উলিয়াম ওয়াকারকেও দ্বীপ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন, যেকারণে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ইউরোপীয় শাসন নীতি ও আদর্শ অনুসরণ ছাড়া চলতে পারবে না উইলিয়াম ওয়াকার, হোসে ডেলোরেসকে তার ব্যাক্ষা দেন। অবশেষে তিনিও দ্বীপ ত্যাগ করেন।
৭.স্বাধীন হওয়ার একান্ত প্রচেষ্ঠাঃ গেরিলা যুদ্ধ
এরমধ্যে সানসেজ পর্তুগিজ সৈন্যদের সাহায্যে হোসে ডেলোরেসের বাহিনীকে বন্দি করতে শুরু করে। হোসে ডেলোরেস দ্বীপের গহীনে আত্ম-গোপন করেন, এবং সরকার বিরোধী গেরিলা ফোর্স তৈরি করে পর্তুগীজদের বিভিন্ন স্থাপনায় আতর্কিত হামলা চালাতে শুরু করে, বিশেষত এই হামলা ব্রিটিশ চিনি কোম্পানি এন্টিলিসের উতপাদন ও মার্কেটিং এ দারুণভাবে আঘাত হানে। এই আঘাত ব্রিটিশ শেয়ার বাজারে এই কোম্পানির মুনাফা কমে যেতে শুরু করে।
ফলে, এন্টিলিস সুগার কম্পানি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শরণাপন্ন হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ স্পাই উইলিয়াম ওয়াকারের সাহায্যে কে'মাদার পরিস্থিতি ঠিক করার কথা বলেন। ইতিমধ্যে উইলিয়াম ওয়াকার ব্রিটিশ সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান, কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অনুরোধে তিনি আবারও কে'মাদায় যেতে আগ্রহী হন, তবে এই-বার তিনি এন্টিলিস সুগার কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে সানসেজের সরকারের সাথে বৈঠক করেন।
৮. ধর্ম বিদ্বেষী ও উদার মতাদর্শ বিরোধী অপবাদঃ
বৈঠকে সানসেজের পক্ষ থেকে হোসে ডেলোরেসের গেরিলা ফোর্সকে প্রতিহত করতে উইলিয়াম ওয়াকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়, যাতে সানসেজের সরকারের দুর্বলতা ওয়াকারের কাছে ফুটে ওঠে। এই দুর্বলতার খোঁজেই ওয়াকার কে'মাদায় এতদিন বিভিন্ন ছলাকলার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওয়াকার ডেলোরাসের গেরিলা বাহিনীকে শেষ করতে নিষ্ঠুরতম পন্থাগুলা বেছে নিতে চান। কিন্তু সানসেজ ভাবেন এই পদ্ধতি দ্বীপে আবারও বিদ্রোহের সূচনা করবে। ফলে ওয়াকার সানসেজের সেনাবাহিনী প্রধানকে রাষ্ট্রপতির পদ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সানসেজের বিরুদ্ধে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়, এবং সানসেজকে বিভিন্ন অপরাধে (যেমনঃ ধর্ম-বিদ্বেষী, উদারমতাদর্শের বিরোধী, নিরাপত্তা হুমকি ইত্যাদি) অভিযুক্ত করে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।
৯. কঠোরভাবে বিদ্রোহ দমনঃ
অবশেষে উইলিয়াম ওয়াকারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা সফল হয়, অর্থাৎ পর্তুগিজ উপনিবেশে ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রবেশ করে, এবং পর্তুগীজদের কোনঠাসা করে ফেলে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ডেলোরাসের গেরিলা বাহিনীকে শেষ করতে প্রথমে স্থানীয়দের কাছে ডেলোরাসকে ডাকাত ও বিশৃঙ্খলাকারী হিসেবে প্রচার করে। পরবর্তীতে প্রান্তিক গ্রামগুলি থেকে জোরপূর্বক গ্রামবাসীদের আলাদা করে। পড়ে আগুন, গোলা বর্ষণ, পানিতে বিষ মেশানো, সামরিক রেইড দেওয়া শুরু করে। এভাবেই একদিন হোসে ডেলোরেসকে গ্রেফতার করা হয়।
ডেলোরেসকে স্থানীয়দের সামনে ফাসি দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় যাতে অন্য কেউ এমন বিদ্রোহের আর সাহস না পায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের অন্তরে হোসে ডেলোরেসই ছিলো তাদের আদর্শ নেতা ও জেনারেল। তার ফাসির পূর্বে তিনি স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা কী? কেন এই বিদেশিরা তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ তা বুঝায়। এর পর ওয়াকারের অতীতে দেওয়া এক প্রশ্নের জওয়াব ডেলোরেস ওয়াকারকে দেয় যা সিনেমার সবচেয়ে শক্তিশালী এক ডায়লগ। এভাবেই ডেলোরেসের মৃত্যু ও কে'মাদা দ্বীপটি ব্রিটিশ উপনিবেশভুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সিনেমাটির সমাপ্তি ঘটে।
প্রিয় দর্শক এই ছিলো বার্ণ সিনেমাটির রিভিউ। আশাকরি, এই রিভিয়ের সাথে সাথে আপনারা ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের পদ্ধতিগুলোও জানতে পারলেন। আসলে, বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে পদ্ধতিগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, তবে কিছু কমন ট্যাকটিকস ব্রিটিশরা অনুসরণ করেছেন।
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


No comments