Mercantilism: আমদানি কম রপ্তানি বেশি
![]() |
| Mercantilism in History |
Mercantilism: রপ্তানি বেশি আমদানি কম
অর্থনীতিকে ব্যাক্ষা ও ব্যবহারে আন্তর্জাতিক রাজনীতির অর্থনীতি (International Political Economy- IPE) যে তিনটি ক্লাসিক্যাল তত্ত্ব দিয়েছে- Mercantilism তন্মধ্যে অন্যতম। IPE-এর প্রথম তত্ত্বটি মুক্তবাজার অর্থনীতির (Laissez-Fair) কথা বলে যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনায় উদারতাবাদকে সমর্থন করে, এবং অভ্যন্তরীন বাজারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে সীমিত করে। দ্বিতীয় তত্ত্ব হল মার্কসবাদ যা আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শোষণকে ব্যাক্ষা করে, এবং বিশ্লেষণ করে দেখায় কিভাবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদের আলোকে গড়ে উঠেছে, এবং এই ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একক- অর্থাৎ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বৈষম্য বা নির্ভরশীলতা তৈরি করেছে (World System Theory)। মার্কেন্টালিজম IPE-এর তৃতীয় তত্ত্ব।অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ তত্ত্বটিকে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ হিসেবে উল্লেখ/ উপস্থাপন করেছেন, এবং IPE-এর তত্ত্বগুলোর মধ্যে মার্কেন্টালিজম-ই সবচেয়ে পুরাতন।
পঞ্চাদশ থেকে সপ্তদশ শতকের শেষার্ধ অবদি, মার্কেন্টালিজম তত্ত্বটি খুবই প্রভাবশালী অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সময়ের সাথে মার্কেন্টালিজম তত্ত্বে অনেক নতুনত্ব এসেছে, এবং উদারবাদী অর্থনীতি ও মার্কসবাদের মধ্যকার চিরায়াত দ্বন্দ্ব বা বিতর্কের বিকল্প হিসেবে মার্কেন্টালিস্ট অর্থনৈতিক তত্ত্ব বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে-ই- রাষ্ট্রের যাবতীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা দরকার এটাই মার্কেন্টালিজম তত্ত্বের মূলকথা বা দর্শন। মার্কেন্টালিস্টরা মনে করেন, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কার্যক্রম/ পরিচালনা পদ্ধতি যখন রাষ্ট্রের সম্পদ ও গৌরব অর্জনে সহায়ক হবে তখনই রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হবে।
ফ্রান্সিক বেকন মার্কেন্টাইল দর্শনের একনিষ্ঠ সমার্থক ছিলেন। তিনি বলেন, বৃটেনের অর্থনৈতিক উন্নতির সাথে তার সামুদ্রিক যাত্রার সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, " আমরা (ব্রিটিশ) ইন্ডিজ যাত্রা করি, ইন্ডিজ থেকে সম্পদ নিয়ে ঘরে (ব্রিটেনে) ফিরি, সেই সম্পদ আমাদের মহান বানায়।"
ফলে, রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে উপনিবেশ স্থাপ, শোষণ বা অন্যের সম্পদ দখল প্রভৃতিকে মার্কেন্টালিস্টরা আবশ্যিক মনে করে, পক্ষান্তরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে মানব কল্যাণের একটা দিক আছে- অর্থনীতি যে পারস্পারিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে- মার্কেন্টালিস্টরা এই দর্শন/ বয়ানকে গ্রহণ-ই করে না।
উপরুন্তু তাদের ভাষায়, অর্থনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্বার্থের সহায়ক- অর্থাৎ, সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। বস্তুত, আর্থিক শক্তি একটি রাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি দরকারি।
রাষ্ট্র তার অর্জিত সম্পদের সাহায্যে দুইভাবে গৌরব অর্জন বা শক্তিশালী হতে পারে। যথাঃ
১. রাষ্ট্র তার অভ্যন্তরীন বাজার অর্থনীতি এমনভাবে সাজাবে যা তাকে অন্য রাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে বাণিজ্যে ভারসাম্য আনয়নে সহায়তা করবে। এবং
২. বিদেশ থেকে সস্তায় পণ্য আমদানি কমিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দিবে। যেমনঃ "দেশী পণ্য কিনে হন ধন্য" স্লোগান।
সমৃদ্ধি অর্জনে/ স্বার্থ আদায়ে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেখানে রাষ্ট্রের রপ্তানি ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে- এবং আমদানির হ্রাসের মাধ্যমে পর-নির্ভরশীলতা ও বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র, রপ্তানি বৃদ্ধিতে প্রণোদনা দেবে এবং আমদানির পরিমান কমিয়ে আনবে।
এভাবেই, কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রকে শিল্পন্নোত করার চেষ্টা করবে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পণ্য অভ্যন্তরীন বাজারে প্রবেশে নানা শুল্ক কর আরোপ করবে- পক্ষান্তরে দেশীয় শিল্প বিকাশে ভর্তুকি সহ অন্যান্য সুযোগ -সুবিধা দিবে।
মার্কেন্টালিস্টদের ভাষায়, রাষ্ট্র সবসময় সচেতন থাকবে যাতে প্বার্শবর্তী রাষ্ট্রের আর্থিক দুর্ঘতি বা প্রভাব যেন তাদের উপর না পরে এবং সেভাবেই অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণ করবে। এটাকে অর্থনীতির ভাষায় "Beggar thy neighbour Policy" বলে। রাষ্ট্রের স্বার্থ বিবেচনায় রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ বাজারে ও মুদ্রামান নির্ণয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। যেমনঃ দ্যা গ্রেট ডিপ্রেশন।
রাজনীতির অর্থনীতিবিদরা মার্কেন্টালিজমকে প্রকৃতি অনুসারে দুইভাগে ভাগ করেছেন। যথাঃ
১. নিয়ন্ত্রিত মার্কেন্টালিজম (Benign/ Defensive Mercantilism): নিয়ন্ত্রিত মার্কেন্টালিজম আন্তর্জাতিক উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে চায় এবং এটাকেই জাতীয় আদর্শে রূপ দেয়। প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলে। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্রের মনরু ডকট্রিন।
২. আক্রমণাত্মক মার্কেন্টালিজম (Malign/ Aggressive Mercantilism): আক্রমনাত্মক মার্কেন্টালিজ ১৯৩০ এ জনপ্রিয় ছিল। বস্তুত, যেকোন অর্থনৈতিক মন্দার পরপর এই প্রবণতা বেশি কাজ করে। এই ধরণের বাণিজ্যকে অনেক রাষ্ট্র অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করে, এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধে বিজয় অর্জনে এই বাণিজ্য অস্ত্র ব্যবহার করে। যেমনঃ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ।
মার্কেন্টালিজম তত্ত্বটি অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে (যখন মুক্তবাণিজ্য কেন্দ্রিক বিশ্বায়নের প্রথম যুগ শুরু হয়) প্রচন্ড বিতর্ক/ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। এই বিতর্ক বা সমালোচনা শুরু হয় যখন অ্যাডাম স্মিথ তার বিখ্যাত "দি ওয়েলথ অব দি ন্যাশন (১৭৭৬)" বইটি প্রকাশ করেন। অ্যাডাম স্মিথ তার বইয়ে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বলেন, মার্কেন্টালিজম একটা ভুল তত্ত্ব।
তার বিভিন্ন যুক্তির একটি ছিলো- একটি রাষ্ট্র তার প্রয়োজনের সকল কিছু উতপাদন করতে সক্ষম হয় না- যদি হয়ও, তবে অন্য দেশ হতে তা আমদানি করলে খরচ যত কম হয় (পণ্যের দাম কম হবে) উৎপাদিত পণ্যের দাম হবে তুলনামূলক বেশি। অ্যাডাম স্মিথের এই যুক্তিকে পরবর্তীতে আরও স্পষ্ট করেন আধুনিক তুলনামূলক অর্থনীতির জনক ডেভিড রিকার্ডো। তার তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্ব বইয়ে যা মুক্তবাজার তত্ত্বের অন্যতম ভিত্তি।
তবে নানান সমালোচনা থাকলেও, মার্কেন্টালিজম দর্শন বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে উপযোগি অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, বিশেষত মন্দা বা অর্থনৈতিক দেউলিয়া প্রেক্ষাপটে। তাই আন্তর্জাতিক অঅর্থনৈতিক পরিক্রমা অনুধাবনে IPE -এর প্রথম তত্ত্ব: মার্কেন্টালিজমের অবশ্যই গুরুত্ব বহন করে।
ভাবানুবাদ:
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মূল বই:
International Relations: The Key Concepts
By- Martin Griffith, Tarry O'Callagahan & Steven C. Roach


No comments