Header Ads

Header ADS

Trade Liberalization: অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার নানারূপ


Trade Liberalization: অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার নানারূপ 

স্বাধীন/ অবাধ/ মুক্ত বিশ্ব বাণিজ্য বলতে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে আমদানিকারক কোন রাষ্ট্র (ধরুন যুক্তরাষ্ট্র), অন্যরাষ্ট্রের পণ্যকে (ধরুন জাপান) , নিজের (যুক্তরাষ্ট্রের) বাজারে প্রবেশে অবাধ সুযোগ প্রদান করে, এবং সেক্ষেত্রে অন্যরাষ্ট্রের (জাপানি) পণ্যের উপর কোনরূপ শুল্ক ও অ-শুল্ক মাসুল (Tariff ও Non-Tariff Barrier) আরোপ করেনা। 

অন্য রাষ্ট্রের (ইন্দোনেশিয়ার) পণ্যকে নিজের বাজারে প্রবেশের অবাধ সুযোগ (যুক্তরাষ্ট্রের) সরকার এককভাবে অথবা কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা (WTO) বা চুক্তির (GATT) আদলে অথবা  আঞ্চলিক সংস্থা (ASEAN) বা আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (AFTA) অনুসারে দিতে পারে। 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক/ ব্যবস্থাপক বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) মতে, যখন কোন রাষ্ট্র নিজের বাজারে অন্য রাষ্ট্রের পণ্য প্রবেশের সমুদয় বাধা (শুল্ক ও অ-শুল্ক কর) বাতিল/ প্রত্যাহার করবে- তখন সে WTO'র মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার অংশীদার হবে। 

এই নিবন্ধে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিবর্তন ও এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারণ ও সম্ভাব্য ফলাফল আলোচিত হবে। 


মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার উন্মেষ: 

উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে আরাম্ভ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা অবদি ইউরোপের প্রথম শ্রেণীর/ শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালু ছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে পারস্পারিক অবাধ বাণিজ্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল, যাকে ঐতিহাসিকরা বিশ্বায়নের প্রথম অধ্যায়/ ধাপের হিসেবে চিহ্নিত করেন। 

তবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপীয়ান অর্থনৈতিক অবস্থা খুব নাজুক হয়ে পড়ে, এবং ইউরোপীয়ান মহামন্দায় গোটা ইউরোপের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার পতন ঘটে। মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৩৪ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সমন্বিত বাণিজ্য চুক্তি আইন (Reciprocal Trade Agreement Act) পাশ হয়। এই আইন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী GATT প্রতিষ্ঠা ও GATT-এর রাউন্ডগুলোর ভিত্তি/ নেগোশিয়েশনের প্রধান পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। 

তবে, GATT-এর প্রথম পাঁচটি রাউন্ডে শুধু শুল্ক হ্রাসের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু, উন্নত রাষ্ট্র শুল্ক হার কমালেও, অন্য রাষ্ট্রের পণ্য নিজের বাজারে প্রবেশের শর্ত হিসেবে Non Tariff Barrier ও Anti-Dumping Duties আদায় করত। ১৯৬০ পরবর্তী GATT- এর রাউন্ডগুলোয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনে শুল্কের বাহিরে Non-Tariff Barrier ও Anti-Dumping সহ অন্যান্য যাবতীয় কর যা GATT-এর সদস্যদের অবাধে পারস্পারিক বাজারে প্রবেশে বাধা দেয় তা হ্রাসে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

উন্নয়নশীল দেশগুলোয় মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা তেমন জনপ্রিয়/ কার্যকর হয়নি। কারণ, বৃহৎ/ উন্নত রাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানি করা কিছুটা সম্ভব হলেও, বহুজাতিক কম্পানি/ বিদেশি রাষ্ট্রের পণ্যের বিপরীত উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীন শিল্প প্রতিষ্ঠান খুবই দুর্বল হওয়ায় নিজেদের বাজারে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিদেশি পণ্য অবাধে প্রবেশের সুযোগ দেয় না। তবে, উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেদের অর্থনৈতিক বিকাশে আঞ্চলিক পর্যায়ে Preferential Trade Agreements- PTAs কে বেশি উপযোগি মনে করে। যেমনঃ আসিয়ান।

১৯৯০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) নীতি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে অবাধ বাণিজ্য নীতি/ মুক্ত বাজার ব্যবস্থা নবরূপ লাভ করে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক সম্পূর্ণ রূপে বাতিল করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ, রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি বিবেচনায় নিজেদের বাজার উন্মুক্তকরণে কিছু বাধা (Tariff ও Non-Tariff) রেখে দিয়েছে- যদিও তা রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রে ভিন্ন। অর্থাৎ, বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তুলনায় উন্নত রাষ্ট্রের কম শুল্ক আরোপ করে [যত বেশি শুল্ক আরোপ তত বেশি অভ্যন্তরীন বাজারে অন্যদেশের পণ্য প্রবেশ সম্ভবনা কমে যাওয়া]। 


"অবাধ বাণিজ্য" কথাটি কেন এল?

Trade Liberalization- কতিপয় অর্থনীতিবিদের কাছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরশ পাথর হলেও, কিছু রাজনীতিবিদ যারা অর্থনীতিকে রাজনীতির দৃষ্টিতে দেখে (Political Economy), তাদের নিকট অবাধ বাণিজ্যকে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের ও দলের স্বার্থ বিরোধী মনে হয়। তাদের ভাষায় সমাজের কয়েকটি সেক্টর, বিশেষত স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান এই মুক্ত বাণিজ্য নীতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, কারণ স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান মুক্ত বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না। 

তাই রাজনীতির অর্থনীতি (Political Economy) সমর্থক নীতি নির্ধারকরা এমন একটি মডেল অনুসরণ করতে চায় যেখানে এই ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ থাকবে। কারণ, ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে নীতি নির্ধারকদের উপর চাপ দেয় মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে (নির্বাচনে ভোট বা আর্থিক সাহায্য পেতে) সংরক্ষণশীল বাজার নীতি গ্রহণ করতে।  যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলকে স্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চাপ দেয় চীনের সস্তা পণ্য আমদানি কমাতে, না হলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর কড়া শুল্ক আরোপ করে। প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর কড়া শুল্ক আরোপ করে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়।  

যাহোক, উদারনৈতিক অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, নীতি-নির্ধারকরা স্বীয় রাজনৈতিক স্বার্থেই অবাধ বাণিজ্য নীতিকে কোণঠাসা করে রাখেন। কারণ, দেশীয় ক্ষতিগ্রস্থ গোষ্ঠি তখন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেয়। অবাধ বাজার ব্যবস্থার সমর্থকরা দাবী করেন যে এই সংরক্ষণ নীতি কিছু প্রতিষ্ঠানকে বা গোষ্ঠিকে সুযোগ দিলেও ভোক্তাদের কোন উপকারে আসে না। অন্যদিকে অবাধ বাণিজ্য দেশের বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা ও পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়, যা ভোক্তাদের জন্য বেশি উপযোগি। 

রাজনীতির অর্থনীতির (political economy) ভাষায়, মুক্ত বাণিজ্য প্রসারের যে আন্তর্জাতিক প্রয়াস তা অনেকক্ষেত্রে হেজমনের (মহাশক্তির) ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের আদর্শ বিবেচনায় গড়ে ওঠে। 

যেমন: আন্তর্জাতিক সম্পর্কে একটি প্রচলিত কথাঃ মুক্ত বাণিজ্য প্রসারে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি হেজমন থাকা আবশ্যক। এই হেজমন তার মিত্রদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, তার উপর নির্ভরশীল দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রন, এবং তার অধীনে নিরাপত্তা জোট শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নিজের আদর্শ, মূল্যবোধ ও স্বার্থ বিবেচনায় বাণিজ্য-ব্যবস্থাকে উন্মুক্ত করবে- অথবা বাণিজ্যে "অবাধ নীতি"-কে একটি আদর্শ/ স্টান্ডার্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। 

এছাড়াও, মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থা- বহুজাতিক কম্পানিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়। ফলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান একটি দাবী: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারে মুক্ত বাজার অর্থনীতি বাস্তবায়ন। যেহেতু বহুজাতিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা ফার্মের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বাণিজ্য ব্যবস্থা বিকাশে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়েছে। Washington Consensus এর অন্যতম উদাহরণ। 

এছাড়াও, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, এই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো- নিজ দেশের সরকারের সাথে লবি বা তদবির করে, যাতে তার সরকার/ রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের বাজার অর্থনীতিতে একধরণের প্রভাব সৃষ্টি করে, যাতে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্য উক্ত দেশের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শুল্ক মওকুফের সুযোগ পায়। এভাবেই বহুজাতিক কোম্পানি, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে বিদেশী পণ্য দিয়ে স্থানীয় বাজার দখল করে এবং যখন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় হার মানে, তখন স্থানীয় বাজারকে অধিক হারে উন্মুক্ত করতে বাধ্য করে। 


রাষ্ট্র কাঠামো ও বাণিজ্য ব্যবস্থা 

একটা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো রাষ্ট্রের বাণিজ্য কী অবাধ (শুল্ক বিহীন) না সংরক্ষণশীল (অধিক শুল্কসহ) হবে তা নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। গণতন্ত্রহীন রাজনৈতিক কাঠামো অনেক ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়। 

তবে, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো গণতান্ত্রিক হলে বাণিজ্য উন্মুক্তকরণের পথ সুগম হয়। কারণ, যে দেশগুলো গণতান্ত্রিক, সেখানে যত বেশি বাণিজ্য প্রতিযোগিতা বাড়বে, শ্রমিকদের কাজের সুযোগও বৃদ্ধি পাবে এবং মাথাপিছু আয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। যেমনঃ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আসিয়ান গঠনের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রকে একটা শর্ত হিসেবে আরোপ করে। আসিয়ানভুক্ত দেশ গণতান্ত্রিক হওয়ায় তাদের পারস্পারিক বাণিজ্যের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং বিশ্ব বাজারের সাথে আসিয়ানকে সম্পৃক্ত করার পথ সহজ হয়েছে। 


WTO ও অবাধ বাণিজ্য 

এছাড়াও, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) মত আন্তর্জাতিক সংস্থা বাণিজ্য শুল্ক হার হ্রাস সংক্রান্ত বিধি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেও আবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে পারে। এরূপ প্রতিষ্ঠান মুক্ত বাণিজ্য সংক্রান্ত ধারণা (idea) বিশ্বব্যাপী প্রচার করতে পারে। বস্তুত, কোনো আইডিয়া রাষ্ট্রের আচারণে তখনই ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, যদি তার বিপরীতে শক্ত প্রতি-আইডিয়া (counter-idea) না থাকে। 

যেমনঃ উনবিংশ শতকের শেষার্ধে "শুল্ক মুক্ত অবাধ বাণিজ্য সকলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জরুরি" এই ধারণাটির প্রসার ঘটা শুরু হয়। প্রথমে ইউরোপের তৎকালীন হেজমন ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য ধারণাকে গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য শক্তিরাও ধারণাটিতে প্রভাবিত হয়। আবার এই একই ইউরোপীয়ান শক্তিগুলো, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও গ্রেট ডিপ্রেশনের প্রভাবে মুক্ত বাণিজ্য নীতি পালটে সংরক্ষণশীল (Mercantilism) নীতি গ্রহণ করে। 

কিন্তু, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুনরায় নতুন বাণিজ্য চুক্তি "GATT ও পরবর্তী WTO" মুক্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি/ সমৃদ্ধি অর্জনকে গ্রহণযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করতে থাকে। পরবর্তীতে, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেমন: বিশ্ব ব্যাংক (WB) ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) তাদের ঋণ প্রদান শর্তে মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থাকে যুক্ত করে। 

যেমনঃ ২০২৬ সালে বাংলাদেশ অনুন্নত দেশের পর্যায় থেকে উন্নয়ন দেশের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হবে। তখন থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণে পূর্বের তুলনায় বাংলাদেশকে অনেক বেশি শর্ত মানতে হবে, যার অন্যতম হবে বাংলাদেশের অভ্যান্তরীন বাজারে বিদেশি পণ্যের অবাধ সুযোগ।


অবাধ বাণিজ্যের (Trade Liberalization) প্রভাব কতটুকু?

Trade Liberalization বা অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রবর্তণ যে কারণেই হোক, অবাধ বা মুক্ত বাণিজ্য প্রতিটি রাষ্ট্র/ সমাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এই প্রভাবের ফলে সমাজে দুটি শ্রেণীর উদ্ভব হয়। যথাঃ বিজেতা (Winners) এবং পরাজিত (Loosers)। 

কারণ, মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে নামেমাত্র- ফলে সম্পদের অসম বন্টন লক্ষিত হয়- একপক্ষ অতিরিক্ত সম্পদশালী হয়, অন্যপক্ষ কোনভাবে বেঁচে থাকে। যেমনঃ অবাধ বাণিজ্যের ধারক যুক্তরাষ্ট্রের সমাজেও এই দুইটি শ্রেণী পাওয়া যায়। যেখানে মাত্র এক শতাংশ মানুষের কাছে রাষ্ট্রের নব্বই শতাংশ সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে। ফলে আর্থিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার এই অসমরূপ সরকারকে বাধ্য করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে, এবং আয় পূণঃবন্টন করতে। 

এছাড়াও, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের ভাষায়, মুক্ত বাজার/ বাণিজ্য ব্যবস্থা সামগ্রিকভাবে কোন রাষ্ট্রের সক্ষমতাকে হ্রাস ঘটাতে পারে এবং অন্যের প্রতি নির্ভরশীল করতে পারে। এছাড়াও, যে কম্পানিগুলো মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগে কোন রাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করে, তারা তাদের অর্জিত মুনাফা তাদের মূল রাষ্ট্রে নিয়ে যায়- এবং ঐ রাষ্ট্রের কোন কল্যাণমূলক কাজে সাহায্য করে না। 

এছাড়াও, মুক্ত-বাণিজ্য ব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো/ প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ, অবাধ বাণিজ্য, রাষ্ট্র ক- কে, রাষ্ট্র-খ এর উপর নির্ভরশীল করে। রাষ্ট্র-খ যেহেতু অবাধ বাণিজ্যকে প্রমোট করে, তাই রাষ্ট্র-ক কেও তার অর্থনীতিকে রাষ্ট্র-খ এর মুক্ত বাজার অর্থনীতির আঙ্গিকে পরিবর্তন করতে হয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র-ক এর ভিতরে বেসরকারীকরণ প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং সরকারি ভর্তুকী/ প্রণোদনা প্রভৃতি বন্ধ হয়ে যায়। এবং এই কাঠামোগত পরিবর্তন বজায় রাখতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে/ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এলিটদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 


উপসংহারঃ 

অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থা আধুনিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পুজি করে গড়ে উঠেছে। উন্নত দেশের পুজিবাদী আদর্শের অনুরূপ বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিক্রমা গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তবাজার অর্থনীতি যাত্রা শুরু। উন্নত দেশের সাথে উন্নয়নশীলের অসমতা ও নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে নেতিবাচক অর্থে। তবে, সমালোচনা সত্বেও বর্তমানের বিশ্বায়নের যুগে, অবাধ বাণিজ্য ব্যবস্থার বাহিরে একাকী থাকার সুযোগ খুব কম রাষ্ট্রেরই রয়েছে। বস্তুত, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অধিক নির্ভরশীলতা থেকে বাচানো কতদিনই বা সম্ভব হবে তা বলা দূরহ, অন্তত যখন বাংলাদেশ নিজের টেকসই উন্নয়নকে বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অবাধ বাণিজ্য সুযোগ প্রদানের শর্তে ঋণ গ্রহণ করছে, যা বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য আবশ্যিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। 





লেখক: 

বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 



যে বইগুলোর সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ
  1. INTERNATIONAL RELATIONS: The Key Concepts (By- Martin Griffiths, Terry O'Callaghan and Steven C. Roach) 
  2. Key Concepts in International Relations (By- Thomas Diez, Ingvild Bode, Aleksandra Fernandes da Costa) 
  3. International Relations: The Key Concepts (By- Steven C. Roach, Alexander D. Barder) 
  4. International Encyclopedia of Political Science (By- Badie, Bertrand) 


  


 




  


No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.