Header Ads

Header ADS

সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে (Foreign Director Investment-FDI) কী গরিবি হাঁটিবে?

সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগে (Foreign Director Investment-FDI) কী গরিবি হাঁটিবে?  


Foreign Direct Investment (FDI) 


Foreign Direct Investment (FDI) কী?


Foreign Direct Investment (FDI) or Foreign Investment  (বাংলায়) সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বা বৈদেশিক বিনিয়োগ। যেখানে একটি রাষ্ট্র (ধরুন চীন) অন্য একটি রাষ্ট্রে (ধরুন বাংলাদেশ) পুঁজি, দক্ষ-কর্মশক্তি, প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি সম্পর্কিত দক্ষতা বৃদ্ধি প্রভৃতি বিনিয়োগ করে। 

এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র (চীনের) প্রধানত দুইটি উদ্দেশ্যে গ্রহীতা রাষ্ট্রে (বাংলাদেশে) বিনিয়োগ করে।যথাঃ (ক) গ্রহীতা রাষ্ট্রের (বাংলাদেশের) উপার্জন শক্তি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে গ্রহীতা রাষ্ট্রের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, এবং (খ) গ্রহীতার (বাংলাদেশের) সমৃদ্ধ অর্থনীতি থেকে বিনিয়োগের শর্তানুযায়ী মুনাফা লাভ করা। 
 
বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রধানত দুইভাবে হয়ে থাকে। যথাঃ (ক) স্থায়ী সম্পত্তি বিনিয়োগ (Fixed Asset Investment) এবং (খ) দাফতরিক বিনিয়োগ (Portfolio Investment)। 

স্থায়ী সম্পত্তি বিনিয়োগে, বিনিয়োগকারী তার দেওয়া বিনিয়োগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চায়। ফলে স্থায়ী সম্পত্তি বিনিয়োগ করে। বিভিন্ন উৎপাদন প্লান্ট, কল-কারখানা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি স্থায়ী বিনিয়োগের উদাহরণ। যেমনঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কোরিয়ার উন্নয়ন প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল বা KEPZ এর উদাহরণ দেওয়া যায়। KEPZ এর বিনিয়োগের সিংহভাগই আসে কোরিয় থেকে, এবং বিনিয়োগ হিসেবে ইপিজেডের উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি থেকে শুরু করে দরকারি অনেক কিছুই কোরিয়া স্থায়ী সম্পত্তি হিসেবে বিনিয়োগ করে। ফলে, কেইপিজেডের উপর কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রণ বেপজার থেকে অধিক। 

দাফতিরক বিনিয়োগে বৈদেশিক রাষ্ট্রের কোন খাতে বিনিয়োগ করা হয়। বৈদেশিক রাষ্ট্রের শেয়ারবাজার,  অবকাঠামো-উন্নয়নে অংশীদারিত্ব, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রভৃতি দাফতরিক বিনিয়োগের উদাহরণ। যেমনঃ বাংলাদেশে সার কোম্পানি, সিমেন্ট কোম্পানি, ব্রিজ নির্মান, হাইওয়ে রাস্তা ও ফ্লাইওভার নির্মান প্রভৃতি ক্ষেত্রে চীন ও জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে থাকে। 

FDI- এর প্রেক্ষাপট:

বৈদেশিক বিনিয়োগ কোন নতুন আবিষ্কার/ ঘটনা নয়। বস্তুত, ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিলো বৈদেশিক বিনিয়োগ। তবে, গত কয়েক দশকে, উন্নত রাষ্ট্রে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

২০১০ সাল নাগাদ মার্কিন ডলার মূল্যে FDI যেকোন সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়াও, বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান ও উৎপাদন কারখানায় বিনিয়োগের পরিমান ক্রমশই বেড়েছে। 

সাম্প্রতিক বিশ্বায়নের যুগে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের কোন প্রতিষ্ঠান কোন পণ্য এককভাবে তৈরী করে না, বরং দেশীয় ও বহিঃদেশীয় প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের সমন্বয়ে পণ্য উৎপাদন হয়। যেমন: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কথা যদি বলেন, এখানে পোশাক তৈরির কাঁচামাল আসে চীন থেকে, বোতাম ও সুতা আসে অন্য কোন একটি দেশ থেকে, প্রস্তুত হয় বাংলাদেশে, এবং বিক্রি হয় উন্নত বিশ্বের কোম্পানির ব্রান্ডে। 

তবে, সবক্ষেত্রে সমানভাবে FDI আসে না। কিছু প্রাথমিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমনঃ খনির তেল, কৃষিজ সরঞ্জাম প্রভৃতিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ক্রমহ্রাসমান। কারণ এই পণ্যের বাজার, স্বাভাবিক পণ্যের ন্যায় স্থিতিশীল নয়, অনেকক্ষেত্রেই। 
 
যখন কোন প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক কোন রাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে তার পিছনে বিবিধ কারন থাকে। যেমনঃ এই বিনিয়োগ তার প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সম্পদ বা কাঁচামালের যোগান বাড়িয়ে দেয়; উৎপাদন খরচ কমে আসে; পণ্য বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারে; সহজে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষক করা যায়; অথবা সমজাতীয় অন্যান্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া যায়। 

যে দেশ থেকে বেশি FDI আসে? 


অধিকাংশ FDI আসে Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD) সংস্থার অধীনে থাকা সদস্যদেশ থেকে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৬০-১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৮৫ শতাংশ এসেছে OECD সংস্থার সদস্যদেশ থেকে, বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড  এবং কানাডা থেকে। 

ঠিক একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের FDI- এর ৬৫ শতাংশ কমে গিয়ে বৈশ্বিক বিবেচনায় ১৬ শতাংশ হয়। যেখানে জাপানের FDI প্রায় ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বৈশ্বিক FDI বিবেচনায় ২১ শতাংশ হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৮০'র দিকে যুক্তরাষ্ট্রের 'হেজমনি' স্ট্যাটাস বিলুপ্ত হওয়ার পিছনে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিলো। 

এছাড়াও, ১৯৭০'র দশক থেকে তৃতীয় বিশ্বে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে যায়। যেমনঃ ১৯৯৪ সালে, বৈশ্বিক বিনিয়োগের মাত্র ১.৪ শতাংশ পায় আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত পূর্ব এশিয়া পায় ১.৬ শতাংশ, এবং লাতিন আমেরিকা পায় প্রায় ১১ শতাংশ। 

তবে, এশিয়ার নতুন শিল্পোন্নয়ন ও উদীয়মান অর্থনীতি বিবেচনায় প্রায় ২০ শতাংশ বৈশ্বিক FDI যায় এশিয়ায়। যদিও আসিয়ান অঞ্চলের ১৯৯৭-৯৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষিতে FDI 'র পরিমাণ আবারও কমতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে, আসিয়ান ও দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোয় FDI এর পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। 

১৯৭০ এর দশকে FDI একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, এই সময়ে লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শুরু হয়। এই শাসন ব্যবস্থায় অনেক উন্নত দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে সমাজতান্ত্রিক শাসকেরা জাতীয়করণ করে নেয়। 

এই জাতীয়করণের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ চিলির সাল্ভাদর আলেন্দের শাসনকাল। আলেন্দে যখন গণতান্ত্রিকভাবে চিলির ক্ষমতায় আসেন, তখন আমেরিকান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ITT Incorporation এবং Anaconda Copper কে আলেন্দে জাতীয়করণ করে নেয়। 

একজন সমাজতান্ত্রিক হিসেবে আলেন্দে যুক্তরাষ্ট্রের শোষণের বিপক্ষে প্রতিবাদ স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণের প্রচেষ্টা চালায়। যার ফলাফল ছিলো ভয়ানক। ধারণা করা হয়, আলেন্দের সামরিক প্রধান অগাস্তো পিনোশেৎ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আলেন্দেকে হত্যা করে চিলির ক্ষমতা দখল করে। ফলে, আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো আগের রূপ ফিরে পায়।      

FDI- নিয়ে কীসের এত সমালোচনাঃ 


লম্বা সময় ধরে FDI কে নিয়ে যে বিতর্কটি চলছে তা হল FDI কি আসলে দেশের অভ্যন্তরীন উন্নয়ন বিশেষত কর্মসংস্থান ও উপার্জন বৃদ্ধির সহায়ক নাকি FDI দেশের সম্পদ বাহিরে নিয়ে যাওয়ার এক সহজ উপায়? 

এই বিতর্কে FDI-এর পক্ষে থাকা দলটি বলেন যে আসলে FDI একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যেমনঃ FDI কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রাজস্ব ও কর লাভে রাষ্ট্রকে সাহায্য করে, প্রযুক্তিগত জ্ঞানে রাষ্ট্রের নাগরিকদের দক্ষ অর্থাৎ মানব সম্পদে পরিণত করে ইত্যাদি। এভাবে একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়িত হয়। 

তবে, এই বিতর্কে FDI-এর বিপক্ষ দলের ভাষায় বিনিয়োগ গ্রহীতা রাষ্ট্র থেকে সম্পদ ও অর্থ আহরণ করে বিনিয়োগকারী নিজ দেশে নিয়ে যায়। তাদের ভাষায়, গ্রহীতা রাষ্ট্রের ক্রমাগত বিনিয়োগ প্রীতি পরোক্ষভাবে বিনিয়োগকারীদের উপর একধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি করে। 

বিপক্ষ দলের মতে, বিনিয়োগের সাহায্যে যে উন্নয়ন দেশে হয় সেখানে অসমতা দেখা যায়, অর্থাৎ, অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাঝেও বৈসাদৃশ্য লক্ষণীয় হয়ে ওঠে। কারণ সম্পদ সমাজের মুষ্টিমেয় জনগণের হাতে চলে যায়। এছাড়াও, যেহেতু বিনিয়োগ কখনো স্থায়ী ভিত্তিতে সেভাবে হয় না, তাই বিনিয়োগের ঘাটতিতে দেশের অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব সৃষ্টি হতে পারে। 

এছাড়াও, গ্রহীতা রাষ্ট্রকে সবসময় তার দেশে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়। একাজে অনেক সময় গ্রহীতা রাষ্ট্রকে অন্য একটি গ্রহীতা রাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হল বিনিয়োগকারীকে প্রদত্ত বিভিন্ন সুবিধা। অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া সুবিধা গ্রহীতা রাষ্ট্রের জন্য লাভের চেয়ে লোকসানের কারণ বেশি হয়, অর্থাৎ, আত্মঘাতী হতে পারে। 

FDI-এর বিপক্ষ দলের শেষ যুক্তিটি হল, বিনিয়োগের ফল টেঁকসই হয় না, কারণ এখানে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার দিকে খেয়াল রাখা হয় না।  যেমন ধরুন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির (Multinational Corporations-MNCs) কথা। MNCs- তাদের উৎপাদনের প্রয়োজনে পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। 

কিন্তু সে বিবেচনায় কোন প্রণোদনা MNCs গ্রহীতা রাষ্ট্রকে দেয় না। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের বিপরীতে এই শহরের পরিবেশ যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা দেখে MNCs এর প্রভাব পরিবেশের জন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে কতটা তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


উপসংহারঃ 


সমালোচনা অনেক থাকলেও FDI-এর গুরুত্ব গ্রহীতা রাষ্ট্রের কাছে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগের সাহায্যে দেশের আর্থিক উন্নয়নের স্বপ্ন গ্রহীতারা এখনো দেখে। পাশাপাশি, বিনিয়োগের পরিধিও ক্ষেত্র বিশেষে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কোভিড-১৯ পরবর্তীতে, FDI-এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে। 

যেমন জাতিসংঘের সংস্থা UNCTAD এর দেওয়া তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালে বিশ্বে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যা পূর্বের (২০২৩) তুলনায় ২ শতাংশ কমে গিয়েছে। এছাড়াও, বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক সাহায্যের পরিধিও বাড়ছে। তবে, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশে বৈদেশিক সাহায্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকলেও, সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ পরিমাণ ক্রমহ্রাসমান। 




ভাবানুবাদকঃ 
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়  

 

মূল বই: 
International Relations: The Key Concepts 
By- Martin Griffith, Tarry O'Callaghan & Steven C. Roach
    

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.