Header Ads

Header ADS

অনিশ্চিত ট্রাম্পে কী নিশ্চিত হইবেন পুতিন?

ট্রাম্প মিয়া যেহেতু আসিয়া পড়িয়াছেন, যুদ্ধ-বন্ধের তাগিদে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ডাকিয়া হয়তো বলিতে পারেন, "চল বহুত হইয়াছে, ইউক্রেনের (কিয়েভের) পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চটজলদি করা যাক"। অন্যদিকে, রাশিয়াকে (কাছে ডাকিয়া) বলিতে পারেন, "পুতিন (দোস্ত আমার), কালক্ষেপণ না করিয়া তেহরানের সহিত মস্কোর সামরিক সম্বন্ধের ইতি টানিয়া দাও দেখি।"  


অনিশ্চিত ট্রাম্পে (Trump) কী নিশ্চিত হইবেন পুতিন (Putin)? 



Trump and Putin

অনিশ্চিত ট্রাম্পে কী আবারও মজিবে পুতিন? আবারও কী একই পথে হাঁটিবে? আবারও কী পুতিনের হিসাব ভুল হিসাবে রূপ লইবে? সময়ই তা বলিবে। তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি বা যুদ্ধ-বন্ধ/বিরতি চুক্তি যে আসিতেছে তা লইয়া কিঞ্চিত সন্ধিহান নহি। ট্রাম্প মিয়া যেহেতু আসিয়া পড়িয়াছেন, যুদ্ধ-বন্ধের তাগিদে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ডাকিয়া হয়তো বলিতে পারেন, "চল বহুত হইয়াছে, ইউক্রেনের (কিয়েভের) পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চটজলদি করা যাক"। অন্যদিকে, রাশিয়াকে (কাছে ডাকিয়া) বলিতে পারেন, "পুতিন (দোস্ত আমার), কালক্ষেপণ না করিয়া তেহরানের সহিত মস্কোর সামরিক সম্বন্ধের ইতি টানিয়া দাও দেখি।" 

গত আঁট নভেম্বর, বিখ্যাত সম্পাদক এলোন পিনকাস "Was Trump’s Victory Really a Good Day for Putin?" শিরোনামে হারেজ পত্রিকায় একখানা বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধ লিখিয়াছিলেন। আমি তাহার (ভুলভাল সাধু চয়নে) অনুবাদের চেষ্টা করিয়াছি। যদিও, শিরোনামের বিষয়বস্তুর বিস্তর বুঝিতে আমাদিগকের আবশ্যিকভাবে উক্ত শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ পড়িতে হইবে।  

ট্রাম্প মিয়া আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে জিতিল সাত দিন অতিবাহিত হয় নাই, তন্মধ্যে পুনরায় ট্রাম্প শাসনের বৈদেশিক নীতি কী হইতে পারে তা লইয়া বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা অন্বেষী (বুদ্ধিজীবী) মহল বিস্তর আলাপ-বয়ান-বিশ্লেষণ বা ভবিষ্যৎবাণী প্রচার করিয়া ফিরিতেছে, তন্মেধ্যে আমিও কিন্তু সামিল আছি। 

তবে, ট্রাম্প মিয়ার দ্বিতীয় পর্ব লইয়া আমার কী অভিমত জানেন? আমার ধারণায় যাহা আসিতেছে তাহা হইলোঃ নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের তরফ থেইকা বৈদেশিক নীতি সম্পর্কিত, যেমনঃ ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কী হইবে?,আমেরিকান মিত্রদের লইয়া আমেরিকার ভবিষ্যৎ কী হইবে?, জাতিসংঘের কী আদৌ প্রয়োজন রইয়াছে?, রাশিয়া-ইউক্রেন-চীন-মধ্যপ্রাচ্য লইয়া আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ কেমন হওয়া দরকার ইত্যাদি যে নানান বয়ান বা বলিতে পারেন যে প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের তরফ থেইকা আমরা পাইয়াছি সেগুলোকে যদি বাস্তব ধরিয়া লই তাহা হইলে আমাদের আলোচনা বা বিশ্লেষণ শুধু বালখিল্যতায় রূপ নিবে তা-ই নয়, সে বিশ্লেষণ বা অভিমত ভুল হইবার সম্ভাবনা কম নহে। 

ট্রাম্প মিয়ার অপ্রত্যাশিত আচারণের প্রবণতা কিন্তু মারাত্মক কিসিমের বেশি। “আমেরিকা-ই আগে (America First)” ট্রাম্পের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক আদর্শ (তবে মনস্ত্বাত্ত্বিক আদর্শ বা লক্ষ্য কিনা তাহা বুঝিতে পারা অত সহজ নয়)। একই সাথে ট্রাম্প ওয়াশিংটন ভিত্তিক নানান বুদ্ধিজীবী মহলের বৈদেশিক নীতির নানান ছলচাতুরীর ঘোর বিরোধী, এজন্য–ই হয়তো ট্রাম্পকে ঘিরিয়া তেমন বুদ্ধিজীবী মহল গড়ে উঠিতে দেখা যায় নাই (হয়তো ইহাই গ্লোবাল বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা অন্বেষীদের ট্রাম্প মিয়ার প্রতি এতো বিরাগের কারণ)। তবে, ট্রাম্প মিয়ার এরূপ অদ্ভুত আচারণকে আমি আবার খারাপ কিছু হিসেবেও ভাবি না। 

যদিও, ট্রাম্প সাহেবের আগমনে শুভেচ্ছার স্বাগতমের বদলে কেমন যেন একটা দুঃশ্চিন্তা ও ভয়ের আবহে ট্রাম্পকে বিশ্ববাসী (ঐ বুদ্ধিজীবী মহল) গ্রহণ করিতেছে, তবে, ট্রাম্পের নিকট ঐসকল আচারণের থোড়াই মূল্য রইয়াছে! তবে, কিছু মানুষের নিকট ট্রাম্পের এহেন (অনিশ্চিত) আচারণ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক বলিয়া মনে হয়। তাহারা বলেন, গত দফায় উত্তর কোরিয়াকে যেরূপে ট্রাম্প মিয়া চাপে রাখিয়াছিলেন, যেরূপে কোরিয়া সংকটের সমাধানের প্রস্তাব তুলিয়াছিলেন তাহা আমেরিকান বৈদেশিক নীতি পরিচলনের গন্ডির বাহিরে থেইকা হয়েছিলো। বিগত সময়ে খানিক অর্থনৈতিক অবরোধ ছাড়া রিপাবলিক বা ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্টরা কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি আনয়নে কতটুকুই বা গুরুত্ব দিয়াছিলেন? 

তবে, ট্রাম্প মিয়ার দ্বিতীয় পর্বে একটা বিষয় পরিষ্কারভাবে বুঝা যাইতেছেঃ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে আবারও ভাবিয়া দেখা বা তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনয়নে যাহা তিনি প্রস্তাব বা (আরব-মুসলিম ভোটারদের) প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন তা বাস্তবায়ন করিবার জন্য তাহার উপর যাবতীয় বৈদেশিক চাপ ও আবদার আসিতে থাকিবে, কিন্তু তিনি করিবেন ঠিক উলটো, তিনি প্রথমে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিবেন ইউক্রেন যুদ্ধে। 

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প মিয়াকে নিয়া যে বয়ানটি প্রচলিত আছে, বা দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিনের তরফ থেইকা যে বড়সড় ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা বার্তা পাইয়াছেন, এবং গতবারে ট্রাম্প-পুতিনের যে দোস্তি-দোস্তিভাব, তাহা বিবেচনায় বুদ্ধিজীবীরা হয়তো ভাবিয়া বসিয়া আছেন যে ট্রাম্প মিয়া জিতিলো মানে তো ভ্লাদিমির পুতিন-ই জিতিল! ইউক্রেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলা ও স্বাধীন ভূখন্ড দখল করিয়া হজম করিতে ট্রাম্পের দ্বিতীয় আগমন পুতিনকে নানান ঝামেলা হইতে বাঁচাইয়া, নতুন সুযোগের বন্দবস্ত করিয়া দিবে পুতিনেরও হয়তো একই বিবেচনা। অনেক বিশারদের চোখে পুতিন-ট্রাম্পকে সহদোর হিসেবে মনে হইয়া থাকে, ঠিক যেন দুইজনে ধ্বংসের দূত!

ভ্লাদিমির পুতিনের চোখে এখন অনেক কিছুই ধরা পড়িতে পারে। পুতিন হয়তো দেখিতে পাইতেছে ইউক্রেনকে নিয়া আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝে বড় এক ক্যাচাল বাধিল বলিয়া! পুতিন হয়তো এমন কিছুও দেখিতে পাইতেছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তীতে রাশিয়ার বুকের উপর আমেরিকা-ইউরোপের যে বিরাট অবরোধের বোঝা (তাহার দোস্ত) ট্রাম্প মিয়া হয়তো টানিয়া নামাইবেন। পুতিন হয়তো আরও একধাপ আগাইয়া দেখিতে পাইতেছেন যে তার সকল মাথাব্যাথার কারণ ন্যাটোকে লইয়া ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কে আবারও বুঝে এই ফাটল বাঁধিল। এত কিছু দেখিয়া পুতিন হয়তো ভাবিতেছেন, আহ! আমার ভাবনার নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা আবারও জাগিয়া উঠিলো বলে! 

রাশিয়ার মাথায় পুরনো মুকুট- রাশিয়ার হারানো সাম্রাজ্য- সোভিয়েতের সে বিশ্বজোড়া আধিপত্যদের পথ পুতিনকে আরও আঞ্চলিকভাবে, বিশেষ করিয়া পূর্ব ইউরোপে প্রভাব বিস্তারে অনুপ্রাণিত করিতে পারে। পুতিনকে বাঁধা দেওয়ার প্রধান দ্বাররক্ষকেরও (জো বাইডেন) পরিবর্তন ঘটিয়াছে, পুতিনের কল্পিত দোস্ত আসিয়াছে। পুতিন হয়তো বলিয়া ফিরিতেছে, “মেরা দোস্ত (ট্রাম্প) আ গেয়া! আব বাপ কা, দাদা কা, ভাই কা, সাবকা বাদলা লেগা ভ্লাদিমির পুতিইইইন!”

জো বাইডেন আসলেই ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়, অন্তত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিবেচনায় তাহা বলিলে ক্ষতি কী? বাইডেনের কাছে আমেরিকার বৈশ্বিক মোড়লগিরি আগে, আর ট্রাম্প মিয়া মোড়লগিরির আগে রাখিতে চায় আমেরিকার নিজস্ব স্বার্থকে (আমেরিকান ফার্স্ট)। ট্রাম্প মিয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাতে অনাগ্রহী, বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে অ-মনোযোগি, যুক্তরাষ্ট্রের সম্পাদিত চুক্তি নিয়াও সন্ধিহান, কখনো এ চুক্তি করিতেছে, কখনো সব ছাড়িয়া আসিয়া পরিতেছে এবং গোটা বিশ্বে তা লইয়া চিল্লাপাল্লা বাধিয়া যাইতেছে। গতবারের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্প মিয়ার সরিয়া আসা, এবং গালফ রাষ্ট্রের সাথে নতুন করিয়া সামরিক ও জ্বালানি চুক্তি করা তাহার বড় উদাহরণ হইয়া থাকিবে।

ট্রাম্প মিয়ার ভাষায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আমেরিকার মোড়লগিরি আমেরিকার জন্য নানান ক্ষতি ডাকিয়া আনিয়াছে, যুদ্ধ, বেকারত্ব, অবৈধ অভিবাসন, অর্থনৈতিক ধ্বস আরও কত কী।  ট্রাম্প মিয়ার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতিতে গোটা বিশ্বের জায়গা তেমন নাই, হেজমনি ধারণাকে ধরিয়া রাখার আগ্রহও তার নাই, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আওড়ানো নানান মূল্যবোধের মূল্যও তাহার নিকট মূল্যহীন। ট্রাম্পের নিকট চীনই যত নষ্টের গোড়া, আমেরিকার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গতবার প্রেসিডেন্ট হইয়া ট্রাম্প চীনের সহিত বাণিজ্য যুদ্ধ আরাম্ভ করিয়াছিলো, এখনো তার রেশ কাটেনাই, হয়তো যুদ্ধের সূচনা আবারও বাধিতে পারে। 

২০২২ সাল অব্দি ইউক্রেন লইয়া পুতিনের কৌশলকে অনেকে এমনকি পুতিন নিজেও অতীব দক্ষ ও কার্যকর বলিয়া প্রবোধ দিয়া আসিতেছিলেন। তবে, ট্রাম্প মিয়ার যে অনিশ্চিত আচার-আচারণ, পুতিন হয়তো আরও একবার ভূল সিদ্ধান্ত বা মিথ্যা প্রবোধে নিজেকে সান্ত্বনা দিবেন। ট্রাম্প মিয়াকে সবাই মাথায় চড়াইয়া রাখিয়াছিলেন যেদিন তিনি বলিলেন, মাত্র ‘এক দিনে’ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঠান্ডা করিয়া দিবেন। কিন্তু, ট্রাম্প মিয়া হয়তো বুঝিয়া থাকিবেন যে যদি তিনি বা আমেরিকান প্রশাসন দ্রুতবেগে কিয়েভের বাকী অংশ বাঁচাইতে রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধের চাপ দিতে থাকেন, বা যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে আমেরিকার নিজের ইচ্ছেমত রাশিয়ার উপর হইতে তেল ও ব্যাংকিং অবরোধ তুলিয়া নিতে চান তা হইলে গোটা ইউরোপ ও মিত্রের নিকট আমেরিকার দেওয়া প্রতিশ্রুতির মূল্য ও সংকল্প মাঠে মারা পড়িবে। ফলে তিনি দুই দলকে ডাকিয়া যুদ্ধ বন্ধের একটা চুক্তি করিতে চাইবেন। 

তবে, যুদ্ধ বিরতি চুক্তি সম্পাদন তখনই সম্ভব হইবে যখন দুই পক্ষের আলাপচারিতায় শান্তির একটি রূপরেখা প্রণীত হইবে। ইউক্রেন ইহা ভালো করিয়া বুঝিতেছে তাহারা যতই চেষ্টা করুক কোনভাবেই তাহারা ২০২২ সালের ইউক্রেনের মানচিত্রে ফিরিয়া যাইতে পারিবে না। আরও যত যুদ্ধে জড়াইবে হাতে থাকা অঞ্চলগুলোকেও হারাইবে। আবার তাহারা যদি এই যুদ্ধ বিরতি চুক্তিতে যাইতে চায় তাদের কতেক অঞ্চলকে রাশিয়ার বলিয়া মানিয়া লইতে হইবে, ক্রাইমিয়া লইয়া ভবিষ্যতে কোন প্রশ্ন তুলিতে পারিবো না, এবং দীর্ঘদিনের জন্য জাপানের মত “অ-যুদ্ধ নীতি” চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে হইবে, এর সকল কিছুই হইবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এবং যুক্তরাষ্ট্র হইবে এই চুক্তির একটি পর্যবেক্ষক পক্ষ। ইউক্রেন যদি রাজি না হইতে চায়, ট্রাম্প মিয়া হয়তো জেলেনেস্কিকে ডাকিয়া ফাপর দিয়া বলিতে পারে, শোন বৎস, যাহা বলিতেছি শুধু করিয়া যাও, নতুবা আমেরিকান হইতে সামরিক সহায়তার কথা ভূলিয়া যাও। নিজের কথা ভাবো, আমেরিকার কথা ভাব, চুক্তি মানিয়া লও।  

ইউক্রেনকে চাপিয়া কাজ করাইয়া লওয়ার বিপরীতে ট্রাম্প ইউক্রেনকে ইইউ-এর অংশ করিয়া লইতে এবং কিয়েভকে জলদি অধিগ্রহণ করিয়া যুদ্ধবিরতিতে চুক্তি সম্পাদন করিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলিতে পারেন। আবারও একই সময়ে ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সাথে লইয়া রাশিয়ার উপরে আরোপিত অবরোধ প্রশমিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করিতে পারেন, তবে তাহার বিনিময়ে পুতিনকে মালদোভা ও বাল্টিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে নন-এগ্রেশন চুক্তি অর্থাৎ, ভবিষ্যতে এই দুই জায়গায় রাশিয়া কোনরূপ সামরিক আগ্রাসন চালাইবে না সে প্রতিশ্রুতি পুতিনকে দিতে হইবে। যদিও বাল্টিক দেশগুলো ন্যাটোর অংশ, তাই সংকট ও সন্দেহ থাকিয়াই যাইবে পুতিনের। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হইলো ইরানের সহিত রাশিয়ার সাম্প্রতিক করা সামরিক চুক্তি হইতে পুতিনকে সরিয়া আসিতে হইবে। 

কথাগুলো শুনিয়া বিচক্ষণ ও কার্যকর মনে হইলেও, সব কিছু নির্ভর করিবে পুতিন ও জেলেনেস্কি কী টাম্পের দেখানো পথা হাঁটিবে নাকি হাঁটিবে না তাহার উপর। ইউক্রেন এহেন চুক্তিতে যাইবে না হয়তো, কারণ এই চুক্তি ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয় স্বাধীনতাকামী জনগণের জন্য অপমানজনক। এক্ষেত্রে ইইউ ও ন্যাটোর তরফ থেইকা ইউক্রেনের জন্য প্রতিশ্রুত ৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে জব্দ প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের অধিকারের উপর ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নির্ভর করিবে। তবে, পুতিন তাহার পূর্বের চাহিদা থেকে থোড়াই সরিয়াছে! এখনো একই কথাঃ ন্যাটোর ব্যাপারে স্থায়ী সমাধান চাই পুতিনের, রাশিয়ার উপরে চাপানো অবরোধ নামানো চাই। যুদ্ধ বিরতি চুক্তিকে এগিয়ে নিতে ট্রাম্পকে এগুলো ভূলে গেলো চলিবে না। 

ন্যাটো কে লইয়া ট্রাম্প মিয়াও কম চিন্তিত নন। একদিকে ইউরোপ ন্যাটো নিয়া ট্রাম্পের (কটু) কথা শোনে, অন্যদিকে দেখে রাশিয়া-ই তো তাহাদের বৃহৎ হুমকি; আবার, ট্রাম্প মিয়ার কাছে পুতিন তাহার আত্মার-আত্মীয়, জিগার কা দোস্ত! এরই মধ্যে ঘটে গেছে নতুন কিছু, উত্তর কোরিয়ার সৈন্য পুতিনের পক্ষে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে অংশ লইয়াছে, এবং ইরান থেকে অনেক অস্ত্রের (মিসাইল ও ড্রোন) যোগানও রাশিয়ায় আসিতেছে। এসকল ঘটনা ট্রাম্প যদি না জানিয়াও থাকেন, ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট ট্রাম্পের কানে তাহা পৌঁছানোর চেষ্টায় কমতি রাখেন নাই।   

ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় সংকটে! একদিকে আমেরিকার যে প্রেসিডেন্ট হইলো সে রাশিয়াকে ইইউ যেভাবে হুমকি হিসেবে দেখিয়া থাকে তেমনি না দেখিয়া বন্ধুর মতন দেখে। আবার ট্রাম্প মিয়া ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা লইয়া প্রশ্ন তোলেন। সাবেক সোভিয়েত দেশ কেন ন্যাটোতে ঢুকিবে এই নিয়া ট্রাম্পের সমালোচনা বা প্রশ্নের কমতি নাই। অনেক বুদ্ধিজীবীরা বলিতেছে, ছে! ছে! এমন করিলে কি চলে? এতে কী আমেরিকান মান থাকে? আমেরিকার উপরে কী কেউ আর নির্ভর করিবে? কিন্তু ট্রাম্প মিয়া ন্যাটো নিয়া কেন ক্ষেপিবে না? ন্যাটোর ৩২ টি দেশের ২৩ টি দেশ মিলিয়া ন্যাটো খরচের মাত্র ২ শতাংশও দেয় না। খরচের যোয়াল তো আমেরিকারই টানিতে হয়। ট্রাম্প মিয়া কেনো বলিবে না? মিয়ার কথায় তো যুক্তি রইয়াছে ইইউ কী তা বুঝিয়াও বোঝে না। ইইউ বোঝে, কিন্তু অবুঝ হইয়া থাকিতে চায়, নিজেদের নিরাপদ রাখিতে চায় অপরের ঘাড়েচরে।

বৃহৎ পরিসরের কথা ভাবিলে, ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং ফিলিপাইন লইয়া ট্রাম্প মিয়ার অনিশ্চিত বৈদেশিক নীতি দেখা যাইতে পারে। তবে, এ অনিশ্চিত বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য হইবে আমেরিকান বিশ্বব্যবস্থাকে নতুনরূপে গড়িয়া তোলা। তবে, পূর্বের ন্যায় ট্রাম্পের আমলেও চীনের সহিত যুক্তরাষ্ট্রের রেষারেষি চলিতে থাকিবে। চীনের প্রতি ট্রাম্প মিয়ার নেতিবাচক মনোভাবে সে রেষারেষি হয়তো সংঘাতেও রূপ নিতেও পারে বৈকি! চীন-ট্রাম্পের রেষারেষি লইয়া পরে একদিন আলাপ হইবে।

যদি ন্যাটো চক্রে ফিরিয়া আসি, ট্রাম্প ইইউকে (চুপিস্বরে) বলিতে পারে এবার ধীরে ধীরে নিজেদের সামরিক ক্ষমতা নিজেরা বাড়াও, আর ন্যাটো যদি রাখিতেই চাও, সাবেক সোভিয়েতদের, বিশেষ করিয়া রাশিয়ার সীমান্তবর্তীদের বাদ দাও, বাজেট বাড়াও। তাহলেই রাশিয়ার সহিত দূরত্ব বজায় রাখতে পারবা। ট্রাম্প আরও একধাপ এগিয়ে জার্মানি ও ফ্রান্স কেন্দ্রিক ইইউ গড়ে তুলিবার কথা বলিতে পারেন। কারণ, ব্রিটেনের অনুপস্থিতিতে কৌশলগত ও সক্ষমতার বিবেচনায় তাহারাই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পথ দেখাইতে পারে। তাই, ইউক্রেন যাত্রায় যুদ্ধ-বিরতি ও ন্যাটোর ভবিষ্যৎকে ঘিরিয়া ট্রাম্প মিয়ার বৈদেশিক নীতির প্রথম যাত্রা হইবে ইহাতে সন্দেহ কিঞ্চিত। 



ভাবানুবাদক:

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 

  

মূল লেখকঃ Alon Pinkas

মূল লেখাঃ Was Trump's Victory Really a Good Day for Putin?



   



    



  


   





  


  


 


   

 


No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.