আফগানিস্থানে সোভিয়েতঃ উষ্ণ জলের দিকে রাশিয়ার যাত্রা (পর্ব ৩)
ইউক্রেনে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ সংকট ও তার আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে পুতিন নিজেই উল্লেখ করেছেন, “ইউক্রেনের পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন যে রাশিয়ার আর বসে থাকার সুযোগ ছিলো না। আপনি যদি কোন স্প্রিং এর দন্ডকে শক্তি দিয়ে চেপে রাখে, যখন তা মুক্ত হবে তার আঘাতের গতি হবে অধিক। আপনাকে সবসময়ই তা মনে রাখতে হবে।”
উষ্ণ জলের দিকে রাশিয়ার যাত্রা
![]() |
গত শতকের শেষে সোভিয়েতের আর্থ-সামাজিক ভঙ্গুরতা এবং আফগানিস্তানের পর্বতের গোলক ধাধায় সোভিয়েতের পরাজয় সোভিয়েতের পতনকে নিশ্চিত করে। পতনের পর সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার পূর্বের অবস্থায় রাশিয়া ফেডারেশন চলে যায়। ফেডারেশন থেকে বাল্টিক ও ককেশাস অঞ্চলের দেশগুলো হাত ছাড়া হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমনে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সরকার সমর্থন করে।
এই আক্রমনের বিরোধীতাকারীদের সমাজতন্ত্র বিরোধী মুসলিম সন্ত্রাসী/ গেরিলা বলে প্রচার করা হতে থাকে। তবে, সাধারণ আফগানিদের নিকট মার্কসবাদ ও লেনিনবাদী আদর্শ আকর্ষণ করতে পারে নি। রাশিয়ার জন্য আফগানিস্তান দুই কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিলোঃ আফগানিস্তান ব্যবহার করে রাশিয়া উষ্ণ পানিতে পৌঁছাতে চেয়েছিলো, এবং পশ্চিমাদের থেকে নিরপত্তা বিবেচনায় আফগানিস্তানকে একটি বাফার হিসেবে ব্যবহার করা।
সোভিয়েতের আফগানিস্তান দখলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিলো উষ্ণ ভারত মহাসাগর। কারণ, তখনকার উগ্র-জাতীয়তাবাদীরা যেমন ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি সোভিয়েত শাসকদের চাপ দিতে থাকে এই আক্রমনের। তিনি বলেন, “ সুযোগ এসেছে, রাশিয়া এবার ভারত মহাসাগরের গরম জলে নিজেদের জুতা ধৌত করবে।” কারণ রাশিয়ার এই বিশাল ভূখন্ডের প্রায় সম্পূর্ণটাই বরফ, শীত ও ঠান্ডার সাথে সম্পর্কিত। তাই আন্তর্জাতিক পরিসরে বাণিজ্য পরিচালনায় রাশিয়ার জন্য উষ্ণ পানির সংস্পর্ষ পাওয়া খুবই জরুরি।
যেমন রাশিয়তার আর্কটিক বন্দরগুলো যেমনঃ মুরমানস্ক বছরের মাসের পর মাস বরফে জমাট থাকে; একইভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাশিয়ার সর্ববৃহত সমুদ্র বন্দর ভ্লাদিভস্তকও বছরে চার থেকে পাঁচ মাস বরফে আচ্ছাদিত থাকে। যখন ব্যবহারের উপযোগি হয় রাশিয়া তার বাণিজ্যের জন্য জাপান সাগরের উপর নির্ভর করে যা সম্পূর্ণভাবে জাপান নিয়ন্ত্রিত।
“উষ্ণ পানির খোলা সমুদ্র”- এর স্বপ্ন রুশ সাম্রাজ্যের জাররা অনেক আগে থেকেই দেখে আসছে। সর্বশেষ সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে সে স্বপ্নের ইতি ঘটেছে। পশ্চিমা সমালোচকরা আফগান যুদ্ধকে “রাশিয়ার ভিয়েতনাম” নামে অভিহিত করেন। এছাড়াও, কান্দাহার ও হিন্দুকুশ পর্বতের জটিল গোলকধাঁধা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে এটা আবারও প্রমাণ করলো আফগানিস্থান হল সাম্রাজ্যবাদীদের গোরস্থান!
উষ্ণ পানির খোলা সমুদ্র না থাকা রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে বেদনার গল্প। বিশেষত উত্তর ইউরোপীয় ঘেষা রাশিয়ার সীমান্তের জন্য এটি এক কৌশলগত দুর্বলতা। অনেক বিশেষজ্ঞ বলে থাকেন, রাশিয়া একটি দুর্বল শক্তি হত যদি না তার পর্যাপ্ত তেল ও গ্যাস থাকতো। যাহোক, সে দুর্বলতার কথা বিবেচনা করে রুশ জার পিটার দ্যা গ্রেট ১৭২৫ সালে তার অধীনস্থদের কনস্টান্টিনোপল ও ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়ার তাগিদ দেন। তিনি বলতেন, “কনস্টান্টিনোপল ও ভারতের ভূখণ্ড যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সে বস্তুত গোটা বিশ্বকে শাসন করবে। তাই যুদ্ধে লিপ্ত হও অটোম্যানদের সাথে, পারস্যের সাথে এবং যত শীগ্র সম্ভব রাশিয়ার দিকে যাও।”
যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলো, এটি পনেরোটি ভাগে বিভক্ত হল। ভৌগোলিক অবস্থানের কাছে সোভিয়েত আইডিওলোজির পরাজয় ঘটলো। এশিয়া ও ইউরোপের মানচিত্র নতুনভাবে সৃজিত হল যেখানে ভৌগোলি পার্থক্য নিয়ে গড়ে ওঠা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও আইনের ধারণা কিভাবে একে অন্যের থেকে পৃথক। এর মাঝে তাজিকিস্তান একটু আলাদা কারণ স্টালিন নিজের স্বার্থে তাজিকিস্তানের সীমানাকে এমনভাবে অংকন করেছেন যে সেন্ট্রাল এশিয়ার প্রতিটি দেশেই তাজিকদের একটি বড় অংশ রয়ে যায়, আবার অন্যদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকেও তাজিকিস্তানে নিয়ে আসা যায়।
সোভিয়েত আমল গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে, যেমন অনেক কূটনীতিক ও সামরিক কুশলীরা করেছেন, সোভিয়েত অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশের সীমারেখা ও জনসংখ্যা এমন ভাবে সেট করা হয়েছে যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরও ঐ দেশের উপর রাশিয়া ফেডারেশনের প্রভাব বিস্তার এখনো জারি আছে। এদের উপর ওয়ারশ প্যাক্টের প্রভাবও রয়েছে। এই পনেরোটি দেশকে বিশ্লেষকরা তিনভাগে ভাগ করেছেন। যথা: পশ্চিমাপন্থি, রাশিয়াপন্থি এবং নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
এই গ্রুপের উজবেকিস্তান, আজারবাইজান ও তুর্কেমিনিস্তানকে নিরপেক্ষ দেশের লিস্টে রাখা হয়। এর অন্যতম কারণ এই তিনটা দেশের সাথে রাশিয়া বা পশ্চিম কারোরই কোন সামরিক জোট চুক্তি নেই। এছাড়াও, এই তিনটি দেশ নিজেদের জ্বালানি নিজেরাই উৎপাদন করে। ফলে বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতার ব্যানারে পশ্চিমা বা রাশিয়ার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রাষ্ট্রগুলো জড়ায় না।
অন্যদিকে, কাজাখস্তান, কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান, আর্মেনিয়া ও বেলারুশকে রাশিয়া পন্থি দেশের লিস্টে রাখা হয়। এই দেশগুলোর জ্বালানি নির্ভরতা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। এদের মাঝে কাজাখস্তান সবচেয়ে বড় দেশ যে রাশিয়ার সাথে কূটনীতিক ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। এছাড়াও, কাজাখস্তানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রুশ গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে। পাচ দেশের মাঝে তাজিকিস্তান বাদে বাকী সকলে রাশিয়ার নেতৃত্বে ইউরেশিয়ান অর্থনৈতিক ইউনিয়ন নামক অর্থনৈতিক জোটের অংশ৷ তবে এই পাচটি দেশ রাশিয়ার সাথে কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিইটি অর্গানাইজেশন (CSTO) নামক সামরিক জোটের অংশ। এই মৈত্রীর হাত ধরে কিরগিস্তান, তাজিকিস্তান ও কাজাখস্তানে রাশিয়ার সৈন্য ও সেনানিবাস রয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত কিছু দেশ পূর্বে ওয়ারশ প্যাক্টের অংশ থাকলেও, স্বাধীনতা লাভের পর তাদের কতেক ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত হয়েছে এবং কতেক ন্যাটো সামরিক জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই লিস্টে রয়েছে পোলান্ড, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া,চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, আলবেনিয়া এবং রোমানিয়া। সোভিয়েত ইউনিয়ন যে উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো সে উদ্দেশ্য ও সমর্থনের সামান্যই এই রাষ্ট্রগুলোর কপালে জুটেছিলো।
তবে তিনটি দেশ যথা: ইউক্রেন, রোমানিয়া এবং মলদোভা দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্ত হতে চেয়েছে, তবে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী হওয়ায় রাশিয়ার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও, এই তিন দেশে রুশ ভাষাভাষীর একটা বড় অংশের মানুষ বসবাস করে, রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শক্তিশালী রাশিয়া সমর্থক গোষ্ঠীও রয়েছে। ফলে ন্যাটোতে যোগাদানের প্রশ্নে যেকোনো সংঘাত ও যুদ্ধের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বর্তমান রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই একই প্রেক্ষাপটে হয়েছে।
পুতিন ন্যাটোর সামরিক বিস্তার থেকে রাশিয়ার সীমান্ত রক্ষায় ইউক্রেনকে সবসময় বাফার হিসেবে রাখতে চেয়েছে। এজন্য ইউক্রেনের শাসকগোষ্ঠীদের ভিতর তার অনুগামী তৈরি করেছে। কারণ এই ইউক্রেনের সমতল ভূমি ব্যবহার করে ন্যাটো খুব সহজে রাশিয়ার সীমান্তে আঘাত হানতে পারে। এক্ষেত্রে পুতিন ইউক্রেনকে এটা বলেও চাপ দেয় না যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তিতে যেতে হবে। ইউক্রেন নিরপেক্ষ থাকবে, ন্যাটো বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে না এটাই পুতিনের স্পষ্ট কথা। এছাড়াও, রাশিয়াকে ইউক্রেনের উষ্ণ পানির বন্দর সেভাস্তেপোল ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। যুদ্ধের পরপরই পুতিন এই বন্দর সহ ইউক্রেনের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহর দখলে নেয়।
যুদ্ধের আগে পর্যন্ত রাশিয়ার জ্বালানির উপর ইউক্রেনের নির্ভরশীলতাও ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানে সচেতন করেছে। যখন জেলেনেস্কি ক্ষমতায় এসে ন্যাটোতে ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ আনেন, তখন থেকেই রুশ-ইউক্রেন সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়। ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান একদিক থেকে যেমন রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোর উপস্থিতিকে জানান দেবে, অন্যদিকে রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ রুট কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার প্রবেশে বড় বাধা সৃষ্টি করবে। এরূপ ভূরাজনৈতিক সমীকরণের পরেও ইউক্রেন আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যের স্বার্থে ন্যাটোতে যোগদানে ইচ্ছা প্রকাশ করে, ফলে ইউরোপে বড় আকারে আরও একটি যুদ্ধের অবতারণা ঘটে।
ভ্লাদিমির জেলেনিস্কির আগে ইউক্রেনের ক্ষমতায় ছিলো ভিক্টর ইয়ানিকোভিচ। তিনি রাশিয়া ও পশ্চিমের সাথে সাজুয্য বজায় রেখে চলতে। একদিকে তিনি পশ্চিমের নেতাদের সাথে সৌহার্দ্য বজায় রাখাতেন, অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতি অনুগত হয়ে থাকতেন। ইয়ানিকোভিচের এগুণের জন্য তিনি পুতিনের প্রিয় পাত্র ছিলেন। তবে ইয়ানিকোভিচ যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি করতে চেয়েছেন, তখনই পুতিনের মাঝে সন্দেহ বাসা বাধে।
রাশিয়ার এলিট রাজনীতিবৃন্দ নিম্নোক্ত সহজ সমীকরণে বিশ্বাসী: রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দেয়। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের পরপরই তারা ন্যাটো সামরিক জোটে অংশগ্রহণের পায়তারা শুরু করে। আর তারা যদি ন্যাটোতে ঢুকে যায়, তবে রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে যা মোটেও রাশিয়া মেনে নিবে না। এই সমীকরণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইয়ানিকোভিচ বুঝতে পারে যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার পথ বন্ধ করতে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকে। চাপে বেসামাল হয়ে ইয়ানিকোভিচ ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার আবেদন খারিজ করে, এবং রাশিয়ার সাথে সামরিক চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু সাধারণ ইউক্রেনের অধিবাসীরা ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাশিয়ার এহেন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের তীব্রতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ইয়ানিকোভিচকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে হয়।
এ আন্দোলনকে পরোক্ষ সমর্থন যুগিয়েছিলো জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। তারা ইউক্রেনে রাশিয়া বিরোধী একটি শক্তিশালী বিরোধীদল গঠনের নিমিত্তে আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে এসেছে। তাদের প্রথম পছন্দের ছিলেন ইউক্রেনের সাবেক বক্সিং এ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন যিনি পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় হন- ভিটালি ক্লিটসকো। পশ্চিম থেকে ইউক্রেনের বিরোধী দলকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছিলো। এছাড়াও, ইউক্রেনের পশ্চিমপন্থিদের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পশ্চিমা বয়ান তৈরির প্রশিক্ষণ পাশাপাশি পশ্চিমা গণতন্ত্রের চর্চা প্রদান করে।
ইউক্রেনের শহরগুলো সংঘর্ষ ও হাতাহাতি চলতে থাকে, যা ক্রমেই বেড়ে চলে। পূর্ব ইউক্রেনীয়রা ইয়ানিকোভিচকে রক্ষায় মাঠে নামে। পশ্চিম ইউক্রেনের শহরগুলোয় আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে, যার মূল লক্ষ্য ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার প্রভাব দূরীকরণ।
২০১৪ এর মাঝ ফেব্রুয়ারি নাগাদ পশ্চিম ইউক্রেনীয় শহরগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। অত:পর ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ইয়ানিকোভিচ ইউক্রেন থেকে পালাতে বাধ্য হয়। রাশিয়া বিরোধী শক্তি, অর্থাৎ পশ্চিমাপন্থিরা (যাদের কিছু ফ্যাসিস্টপন্থিও বলা হয়) ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে। এই পতনে রাশিয়ার আঞ্চলিক স্বার্থে বড় আঘাত হানে। ফলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় রুশ ভাষাভাষীদের সমর্থনকে পুজি করে পুতিন ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে।
ক্রাইমিয়া দখলের বাহানা ছিলো ক্রাইমিয়ার রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষা করা, তবে আদতে মূল লক্ষ ছিলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র বন্দর সেভাস্তিপোল দখলে নেওয়া। ইউক্রেনে চলতে থাকা অভ্যন্তরীণ সংকট ও তার আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে পুতিন নিজেই উল্লেখ করেছেন, “ইউক্রেনের পরিস্থিতি রাশিয়ার জন্য এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন যে রাশিয়ার আর বসে থাকার সুযোগ ছিলো না। আপনি যদি কোন স্প্রিং এর দন্ডকে শক্তি দিয়ে চেপে রাখে, যখন তা মুক্ত হবে তার আঘাতের গতি হবে অধিক। আপনাকে সবসময়ই তা মনে রাখতে হবে।”
ভাবানুবাদক:
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মূল বই:
Prisoners of Geography: Ten Maps That Explain Everything about the World.
লিখেছেন:
Tim Marshall,
A former foreign correspondent for Britain's Sky News Television


.jpg)

No comments