রাশিয়ার জ্বালানী ও রুশ ভাষী ইউরোপিয়ান (শেষ পর্ব)
![]() |
| Russian celebrate National Days |
রাশিয়া ইতিমধ্যে মলদোভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে যার নাম ট্রান্সনিস্ত্রিয়া (Transnistria)। অঞ্চলটি মলদোভার পূর্বদিকের দ্নিনেস্টার নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত যার অপর তীরে ইউক্রেন। জোসেফ স্ত্যালিনের শাসনকালে বিচক্ষণতার সাথে অনেক রুশ ভাষাভাষীদের সোভিয়েতের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় এ ট্রান্সনিস্ত্রিয়া অঞ্চলেও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পাঠিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে ক্রাইমিয়া অঞ্চলের তাতার অধিবাসীদের অন্য অঞ্চলে বিতাড়িত করেছিলেন।
মলদোভা যদিও আশা করেনি আবারও রাশিয়ার এত কাছাকাছি পৌঁছতে হবে তাদের। রাশিয়ার ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণ, মলদোভার উপর রাশিয়ার অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়াও, ত্রানসিস্ত্রিয়ার টালমাটাল অবস্থা মলদোভা সরকারের উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করছে, যাতে মলদোভা ইইউ বা ন্যাটো কোনটিতে অংশ নিতে না পারে।
এছাড়াও, রাশিয়ার উপর প্রয়োজনীয় জ্বালানির জন্য মলদোভা অনেকাংশে নির্ভর। এর শস্য রপ্তানির বড় বাজার পূর্ব ইউরোপ ও রাশিয়া। এছাড়াও, মলদোভায় তৈরি ওয়াইনের বড় বাজার রাশিয়া, তবে এ বাজারের পরিধি ওঠানামা করে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কোন দিকে পরিচালিত হচ্ছে তার উপর।
মলদোভার পাশে, কৃষ্ণ সাগরের তীর ঘেষে ইউরোপের জনপ্রিয় ওয়াইন উৎপাদক রাষ্ট্র জর্জিয়ার অবস্থান। মলদোভা ও ইউক্রেনের মত জর্জিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এ মূহুর্তে রাশিয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এর প্রধানত দুইটি কারণ রয়েছে। যথা: (১) ২০০৮ সালে রাশিয়া-জর্জিয়া যুদ্ধে জর্জিয়া একটি বড় অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বর্তমানে জর্জিয়ার আবখাজিয়া (Abkhazia) এবং দক্ষিণ ওশেটিয়া (South Ossetia) অঞ্চল দুটি সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রাধীন। (২) জর্জিয়া ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ ককেশাস পার্বত্যভূমিতে।
এই অঞ্চলের পাশে, অর্থাৎ, আর্মেনিয়া রাশিয়ার কয়েকটি সেনানিবাস রয়েছে, যেখানে পর্যাপ্ত সৈন্য ও গোলাবারুদ রয়েছে। রাশিয়া জর্জিয়াকে একটি বাফার অঞ্চল হিসেবে রাখতে চায়। কিন্তু জর্জিয়ার বাকী অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়তো সে বিবেচনায় পুতিনের পরিকল্পনায় থেকে থাকবে। বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের তীব্রতা ও ভয়াবহতা জর্জিয়ার জন্য হয়তো পুতিনের পক্ষ থেকে একটা সিগনাল যাতে জর্জিয়া ন্যাটোর দিকে পা না বাড়ায়। ২০০৮ পরবর্তী জর্জিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিও এই রাজনৈতিক সমীকরণকে বিবেচনায় পরিচালিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
অধিকাংশ জর্জিয়া অধিবাসী চাইতো জর্জিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ করতে, কিন্তু ২০০৮-এর যুদ্ধের তীব্রতায় সে চিন্তা থেকে তারা সরে আসে। জনগণের চাপে ততকালীন জর্জিয়ান প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলি (Mikhail Saakashvili) আমেরিকার শরণাপন্ন হয়, যুক্তরাষ্ট্র জর্জিয়াকে ন্যাটোভুক্ত করার আশা দিলেও, যুদ্ধে আক্রান্ত হওয়ার পর সেভাবে সহযোগিতা করেনি। ক্ষতি যা হওয়ার সব জর্জিয়ার-ই হয়েছে।
২০১৩ সালে জর্জি মার্কগভালেসভিলি জর্জিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। জর্জি প্রথম থেকেই রাশিয়াপন্থি সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিতে থাকে। জর্জিয়া-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে ইউক্রেন সেভাবে শিক্ষা নেয় নি, তারাও পশ্চিমাদের উপর নির্ভর করে ন্যাটোভুক্ত হতে চেয়েছে, তারা বুঝতে চায়নি মস্কো কাছে, ওয়াশিংটন বহুদূরে। ফলাফল একই হল: ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো ইউক্রেনের সকল ক্ষেত্র, রাশিয়ার করতলগত হলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যার প্রতি পুতিনের দীর্ঘদিনের নজর ছিলো।
পারমাণবিক ও আধুনিক মরণাস্ত্রের সং্খ্যানুপাতে রাশিয়ার সবচেয়ে এগিয়ে, পাশে রয়েছে শক্তিশালী সেনা ও বিমানবাহিনী। তবে এসবের পাশেও রয়েছে কৌশলি অস্ত্র তেল ও গ্যাস। যুক্তরাষ্ট্রের পর, রাশিয়াই বিশ্বের দ্বিতীয় একক প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী দেশ, এবং এ সৌভাগ্যটি অস্ত্র হিসেবেও পুতিন ব্যবহার করে আসছে। রাশিয়ার সাথে যত ভালো সম্পর্ক, ততই কম মূল্যে মিলবে রাশিয়ার জ্বালানি, উদাহরণ হিসেবে বাল্টিক দেশগুলোর তুলনায় ফিনল্যান্ড অনেক সস্তায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে।
রাশিয়ার এ অস্ত্রের ভয় গোটা ইউরোপই পায়, বিশেষত শিল্পোন্নত পশ্চিমা ইউরোপ। তবে অনেক ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে, সস্তায় এবং চাহিদা মাফিক জ্বালানির বিপরীতে টেকসই জ্বালানি সোর্স খুঁজে পাওয়া দূরহ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সে উদাহরণ আমরা দেখেছি, কিভাবে ফ্রান্স ও জার্মানির মত শিল্পোন্নত দেশ প্রথম থেকে রাশিয়ার আক্রমণের ব্যপারে সেভাবে প্রতিরোধ জানায়নি।
ইউরোপের প্রধানতম জ্বালানি গ্যাস ও খনিজ তেলের প্রায় এক- চতুর্থাংশ (প্রায় ২৫ শতাংশ) আসে রাশিয়া থেকে। কিন্তু যে দেশগুলোর রাশিয়ার সীমান্তবর্তী তারা আরও অধিকহারে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করে। ফলে ঐদেশগুলোর বৈদেশিক নীতিতে রাশিয়ামুখী একটা প্রভাব থাকে।
যেমন: লাটভিয়া, স্লোভাকিয়া, ফিনল্যান্ড, এবং এস্তোনিয়া প্রায় সম্পূর্ণ (১০০%) জ্বালানি রাশিয়া থেকে গ্রহণ করে। চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়া, এবং লিথুনিয়ার ৮০ শতাংশ জ্বালানি আসে রাশিয়া থেকে। অস্ট্রিয়া, গ্রীস ও হাংগেরির ৬০ শতাংশ রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি করে। জার্মানির প্রায় অর্ধেক জ্বালানি আসে রাশিয়া থেকে, পাশাপাশি রাশিয়ায় জার্মান বিনিয়োগ রয়েছে বড় অংকের।
ফলে, জর্জিয়া যুদ্ধ, ক্রাইমিয়া দখল ও বর্তমানের ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তীতে ব্রিটেন থেকে -রাশিয়া ক্ষেত্রে যে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়, জার্মানির ক্ষেত্রে তেমনটি নেই। এমনকি ব্রিটেনের প্রায় ১৫ শতাংশ জ্বালানি রাশিয়া থেকে আসে। তবে ব্রিটেনের জ্বালানির বিকল্প রয়েছে।
পূর্ব ইউরোপ থেকে রাশিয়ার জ্বালানি পশ্চিমে যাওয়ার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইন রয়েছে। এই পাইপলাইনের কতকের ভিতর দিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হয়, আর কতকের ভিতর দিয়ে তেল। তবে ভূ-কৌশলগত দিক বিবেচনায় রাশিয়া হতে যাওয়া গ্যাসলাইনগুলো অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর দিকে, বাল্টিক সাগর হয়ে রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন চলে গেছে, যা সরাসরি জার্মানির সাথে যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও, ইয়ামাল পাইপলাইনের মাধ্যমে পোলান্ড, জার্মানি ও বেলারুশে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। দক্ষিণের ব্লু স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে কৃষ্ণ সাগর হয়ে তুরস্কে রাশিয়ার গ্যাস পৌঁছায়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাউথ স্ট্রিম চালু ছিলো যা কৃষ্ণ সাগর হয়ে অস্ট্রিয়া, হাংগেরি, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও ইতালিতে গ্যাস সরবরাহ করতো।
ক্রাইমিয়া দখলের পরও পুতিন আশ্বাস দিয়েছিলো, সাউথ স্ট্রিম চালু রেখে পশ্চিম ইউরোপ ও বলকান অঞ্চলে রাশিয়ার জ্বালানি সরবারাহ নিশ্চিত করবে। তবে, ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বুলগেরিয়াকে পার্শ্ববর্তী ইউরোপীয় দেশগুলো চাপ দেয় যাতে সাউথ স্ট্রিম পাইপলাইন বুলগেরিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহার না করে এগোয়। বুলগেরিয়ার এহেন সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসেবে পুতিন তুরস্কের সাথে সাউথ স্ট্রিম নিয়ে কথা বলেন। তুর্কি স্ট্রিম নামে সাউথ স্ট্রিমের নতুন নামকরণ করা হয়।
২০০৫ থেকে ২০১০ সালে, রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের দর নিয়ে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার জটিলতার প্রেক্ষিতে রাশিয়া তার সাউথ স্ট্রিম এবং তুর্ক স্ট্রিম প্রজেক্টকে ইউক্রেনের বাহিরে নিয়ে যায়। ফলে, ইউক্রেনের সাথে সম্পর্কিত, অর্থাৎ ইউক্রেন ট্রানজিট থেকে যে আঠারোটি দেশ রাশিয়ার সস্তা জ্বালানি গ্রহণ করতো সেখানে গ্যাসের সরবারহ কমে যায়, এবং তাদের অভ্যন্তরীন বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, ইউরোপের যে দেশগুলো রাশিয়ার সাউথ স্ট্রিম থেকে জ্বালানি আমদানি করতো তারাও ২০১৪ সালের ক্রাইমিয়া অধিগ্রহণে রাশিয়াকে সমালোচনা করতে শুরু করে, অনেকে অর্থনৈতিক অবরোধও দেয়।
বস্তুত, আমেরিকা ইউরোপীয়, বিশেষত পশ্চিমা ইউরোপীয়দের জন্য পারস্পারিক সুবিধা নীতি প্রদান করে। ইউরোপ সস্তায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি চায় এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি এই সস্তা জ্বালানি আমদানির সুযোগে রাশিয়া যেন তাদের বৈদেশিক নীতিকে প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকও সজাগ রাখার চেষ্টা এ দেশগুলো করে। এক্ষেত্রে আমেরিকা তাদের বেশি সহযোগিতা করে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে ইউরোপকে জ্বালানির ব্যবস্থা করে দেয় মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য অনেক সোর্স থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের শেল গ্যাস অধিকহারে উৎপাদন করে, কিন্তু নিজের ব্যবহারের পরও অনেক শেল গ্যাস উদ্ধৃত্ত থেকে যায় যার অধিকাংশ চলে যায় ইউরোপে।
শেল গ্যাসকে ইউরোপে বাজারজাত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরলীকরণ করে, তারপর আটলান্টিকের পূর্ব পাশে, অর্থাৎ পশ্চিম ইউরোপে পাঠায়। ফলে পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ সমুদ্র বন্দরগুলোয় এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে, এবং কার্গো জাহাজ সেখানে আমেরিকার এলএনজি খালাস করে। পড়ে ইউরোপ সেই তরকগ্যাস ব্যবহারযোগ্য গ্যাসে রূপান্তর করে। আমেরিকার সাথে ইউরোপের কিছু দেশের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও জ্বালানি আমদানির চুক্তি বা এগ্রিমেন্ট রয়েছে, অনেক দেশের সাথে চুক্তিগুলো দীর্ঘমেয়াদী, এবং সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি টার্মিনাল বৃদ্ধির দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমনঃ পোলান্ড ও লিথুনিয়া বড় এলএনজি টার্মিনাল তৈরি করছে।
অন্যকিছু দেশ যেমনঃ চেক রিপাবলিক পাইপলাইনের সাহায্যে এই টার্মিনাল থেকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা শুধু আমেরিকা থেকেই জ্বালানি পাবে না, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানিও একই পাইপলাইন থেকে আসবে। ফলে, অনেকের ধারণা রাশিয়া তার সস্তা জ্বালানিকে অধিক দিন আর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।
ইউরোপের ভূখন্ড ছাড়িয়ে রাশিয়ার জ্বালানি লাতিন আমেরিকায়ও পৌছে এবং উক্ত অঞ্চলে রাশিয়ার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তিও ব্যপক, বিশেষত ভেনুজুয়েলার ক্ষেত্রে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়াও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে রাশিয়ার অস্তিত্বকে পোক্ত করেছে, যা ক্রমে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার নৌ প্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে, রাশিয়া ঐদেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। তাই পুতিন হয়তো বলবে এত সস্তায় পাইপলাইনের গ্যাস থাকতে ইউরোপীয় দেশগুলো এলএনজি’র উপর কেন নির্ভরতা বাড়াতে চায়। পুতিন হয়তো গোমড়া মুখ করে বলবে, “আমি তোমাদের কী এমন ক্ষতি করেছি।”
বস্তুত, এলএনজি রাশিয়ার সস্তা ও অধিকারে সরবারহকৃত জ্বালানি গ্যাসের জায়গা দখল করতে পারবে না। কিন্তু, এই জ্বালানির দ্বারা রাশিয়া যেভাবে আমদানিকারক দেশের বৈদেশিক নীতিতে প্রভাব ফেলে সে হার প্রশমিত করতে পারে। রাশিয়াও বিকল্প খুঁজছে। দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নির্ভর অর্থনীতিকে টেঁকসই করাতে এখন নতুন পাইপলাইন তৈরির চিন্তা করছে, এবং চীন ও ভারতের কাছে কমমূল্যে জ্বালানি রপ্তানি করছে। ভূগোল ভিত্তিক অর্থনৈতিক যুদ্ধ ও প্রযুক্তির সাহায্যে ভৌগলিক সঙ্কট উৎরে যাওয়ার মোক্ষম এটি।
এছাড়াও, আর্কটিক চক্রে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি পূর্বের তুলনায় সবচেয়ে বেশী, এবং উপস্থিতির বদৌলতে রাশিয়া প্রায়শই গ্রীনল্যান্ডের ভূখণ্ডে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকেও ইংগিত দিয়ে থাকে। তবে, সোভিয়েত পতনের পর আফ্রিকার প্রতি রাশিয়ার মনোযোগ কমে গিয়েছিলো যে সুযোগটি চীন নিয়েছে। তবে, চীনের পাশাপাশি বর্তমানে আফ্রিকার বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী শাসনের সাথে পুতিনেত সখ্যতা গড়ে উঠেছে এবং তাদের রাশিয়া সামরিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামও দিয়ে সহায়তা করছে যা ইউরোপ ও আমেরিকাকে আফ্রিকা নিয়ে আবারও ভাবিয়ে তুলেছে।
ভাবানুবাদক:
বদিরুজ্জামান
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মূল বই:
Prisoners of Geography: Ten Maps That Explain Everything about the World.
লিখেছেন:
Tim Marshall,
A former foreign correspondent for Britain's Sky News Television


No comments