Header Ads

Header ADS

ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ আদর্শবাদ ও প্রথম ডিবেট

ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ আদর্শবাদ ও প্রথম ডিবেট (পর্ব ৪) 


Woodrow Wilson's League of  Nations

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের প্রথম বছরগুলো উইড্রো উইলসনের (Woodrow Wilson) আদর্শবাদের আদলে পরিচালিত হয়। প্রথম যুদ্ধের ধ্বংসলীলা ও মানুসিক ক্ষত সাড়িয়ে উঠার প্রয়োজনে উইলসন প্রদত্ত যুদ্ধ বিরোধী আদর্শবাদ এবং জাতিপুঞ্জের ধারণা ইউরোপীয়দের মাঝে আশার সঞ্চার ঘটায়। এহেন কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯১৯ সালে উইলসনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। 

একটি কার্যকরি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে জাতিপুঞ্জ (League of Nations) আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রভাব বিস্তার করে। পারস্পারিক সঙ্কট ও বিরোধ নিরসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লেভেলে আলাপ আলোচনা জোরেশোরে চলতে থাকে। 

তবে, সকল দেশের নিকট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি শান্তি ও নিরাপত্তা ক্ষেত্র হিসেবে তখনো গৃহীত হয়নি, বরং তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শক্তির খেলা হিসেবেই গ্রহণ করে। তাদের এরূপ মনোভাবের প্রেক্ষাপটও ছিলো শক্ত। যেমনঃ জাতিপুঞ্জ সক্রিয় থাকা স্বত্বেও কিভাবে জাপান চীনের মাঞ্ছুরিয়া অঞ্চল দখল করে? ইতালি আবেসিনিয়া ও লিবিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করে? জার্মানি পুনরায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ পায়? প্রভৃতি। 

বৃহৎ শক্তির পারস্পারিক সহযোগিতা ও সৌহার্দে যে জাতিপুঞ্জ গড়ে ওঠে, সেই সম্পর্কে রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ফলে, উইলসনীয় আদর্শবাদ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের যে সিলেবাস নির্ধারিত সূচনা হয়েছিলো, বৃহৎ শক্তির নয়া সম্পর্কের দরুন সে সিলেবাসে নতুন নতুন কনসেপ্ট ও দর্শনের সংযোজন ঘটতে শুরু করে।
 
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (IR) অধ্যায়ণে নতুন নতুন লেখক নতুন নতুন ধারণার সন্নিবেশ ঘটাতে শুরু করে। নতুন লেখকদের একদল নিজেদের রাজনৈতিক দর্শন "রিয়েলিজম"-এর (Realism) অনুসারী বলে প্রচার করেন (Realism কী তা পরের অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে)। এই রিয়েলিস্ট লেখকেরা যুদ্ধ বা সংঘাত নিরসনে আন্তর্জাতিক সংস্থার (যেমনঃ জাতিপুঞ্জ) ভূমিকাকে এক বাক্যে প্রত্যাখ্যান করেন। 

রিয়েলিস্ট ঘরনার লেখকদের মাঝে ফ্রেড্রিক স্কুম্যান (Fredrick L. Schuman), ফ্রাংক সাইমন্ডস (Frank H. Simonds), এবং জেমস সোতে’ল (James T. Shotwell) প্রমুখ  ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যেভাবে উইলসনীয় উদারবাদী দর্শন (Liberal Internationalism/ Liberalism) অনুসারে পরিচালিত হচ্ছিলো, রিয়েলিস্ট লেখকদের লেখনিতে সে উদারবাদী দর্শনের নানা সমালোচনা ফুটে ওঠে।

উদারবাদী দর্শনের মূলকথা হলঃ মানুষ শান্তিপ্রিয় জীব, ফলে মানুষের সমন্বয়ে যে রাষ্ট্রের সূচনা, এবং সে রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পারিক যে সম্পর্ক বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সে সম্পর্ক পরিচালনায় মানুষ সবসময় শান্তিকে বেছে নেয় (Liberalism দর্শন নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)। 

রিয়েলিস্ট লেখকেরা উদারবাদের একদম বিপরীত একটি বয়ান সামনে নিয়ে আসেন। তাদের ভাষায়, মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর (Self-interest)। মানুষ সবসময় আত্ম-অহমিকায় (Ego/ Egoism) ভোগে। মানুষের স্বার্থপরতা তার আত্ম-অহমিকারই (Egoism) ফল। 

যেভাবেই হোক মানুষ তার অহমিকাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, কারণ এরূপে মানুষ অন্যের উপর তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, এবং এই ক্ষমতার হাত ধরেই মানুষের স্বার্থ হাসিল হয়। তবে, মানুষ যেহেতু সকলেই স্বাধীন, তাই অন্যের উপর নিজের আত্ম-অহমিকা প্রতিষ্ঠা পরস্পর কলহের সূত্রপাত ঘটাতে পারে, বিশেষ করে অন্য মানুষটি যখন একই ক্ষমতাসম্পন্ন। 

মানুষের সমন্বয়ে যে রাষ্ট্র গঠিত হয় সেখানেও এই একই সমীকরণ অনুসারিত হয়। অর্থাৎ, রিয়েলিস্টদের ভাষায়, রাষ্ট্রের পারস্পারিক সম্পর্ক পরিচালনের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের উপর তার ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেক্ষেত্রে সংঘাত বা যুদ্ধ একটি আবশ্যিক বিষয়। কারণ এই সংঘাত বা যুদ্ধের মাধ্যমেই রাষ্ট্র তার ক্ষমতা প্রদর্শন করার সুযোগ পায়, এবং এই ক্ষমতা প্রদর্শনই উক্ত রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ আদায়কে নিশ্চিত করে। 

আমেরিকান লেখক রেইনহোল্ড নেইবুহর (Reinhold Niebuhr) ১৯৩২ সালে প্রকাশিত তার Moral Man and Immoral Society গ্রন্থে মানুষ ও রাষ্ট্রের আচারণের পার্থক্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মানুষ কিছুক্ষেত্রে শান্তিপ্রিয় ও যৌক্তিক। তবে, মানুষের সমন্বয়ে যে সমাজ বা রাষ্ট্র গঠিত হয় তার শাসন কাঠামো পরিচালনে উক্ত গুণ তেমন কার্যকরি নয়। কারণ, অনেকক্ষেত্রে মানুষের কাছে যা নৈতিক বা আদর্শিক বা যৌক্তিক, রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ আদায় বিবেচনায় রাষ্ট্রকে তার বিপরীতও করতে হতে পারে। 

এছাড়াও, নেইবুহর বলেন, আদর্শবাদীরা এবং রোমান্টিক ঘরনার মানুষেরা এটা কদাচিৎ বুঝার চেষ্টা করেছেন যে মানুষকে সমাজবদ্ধ বা রাষ্ট্রের অধীনে বসবাসের প্রয়োজনে তার হিংস্র চরিত্রের প্রকাশ ঘটাতে হয়েছে, অর্থাৎ, জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে যুদ্ধ ও সংঘাতে জড়াতে হয়ে থাকে। এই জাতীয় স্বার্থ ঐ সমাজের মানুষের সমন্বিত আত্ম-অহমিকার (egoism) এক বহিঃপ্রকাশ।    

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট বৃদ্ধি পেতে থাকে, বিশেষত যে রাষ্ট্রগুলো উদারবাদী আদর্শ গ্রহণ করেনি তাদের ভিতর। তখন ইহুদীদের বিরুদ্ধে ইউরোপে পুনরায় নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে শুরু করে, বিশেষ করে নাৎসি জার্মানে। 

অনেক ইহুদী ব্রিটেন ও আমেরিকায় অভিবাসন করেন। অভিবাসী ইহুদীদের মধ্যে রিয়েলিস্ট ঘরনার লেখকও ছিলেন যেমনঃ জন হার্জ (John Harz) এবং হ্যান্স মরগেন্থু (Hans J Morgenthau), উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছিলেন। 

১৯৩০ দশকের শেষে, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরনল্ড ওলফার বলেন যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণ এখন দুটি মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যার প্রথমটি জন লক (John Locke)  ও ভাতেলের (Vatell) উদারবাদী (liberalism) আদর্শের অনুসারী, এবং দ্বিতীয়টি হবস (Hobbes) ও ম্যাকিয়াভেলির Machiavelli) রিয়েলিজম (Realism) বা বাস্তবাদী আদর্শের অনুসারী। 

আরনল্ড ওলফার দুটি মেরুতে ভাগ করলেও, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনের দার্শনিক ভিত্তি কী উদারবাদী হবে না বাস্তববাদী হবে এই বিতর্কের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাক্ষা দিয়েছেন ব্রিটিশ অধ্যাপক এডওয়ার্ড হ্যালেট কার (E. H. Carr)। ১৯৩০ এর শেষ দিকে, তিনি ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করেন। 

তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠ্যক্রমের বিকাশকে বৈজ্ঞানিক বিচারে দুইটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথম ভাগটিতে তিনি আদর্শবাদের ভিত্তিতে গড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কথা বলেছেন, যাকে তিনি ইউটোপিয়ান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বলেছেন। কারের মতে, এই ইউটোপিয়ান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাতিপুঞ্জের ধারণা থেকে।

দ্বিতীয় ভাগটির সূচনা ঘটে ১৯৩০ এর দশকে, যখন রিয়েলিস্ট ঘরনার লেখকেরা রিয়েলিজমকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মূল দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উড্রো উইলসনের উদারবাদকে নানাভাবে সমালোচনা শুরু করেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠ্যক্রমের প্রথম মহা বিতর্কের (লিবারেলিজম বনাম রিয়েলিজম) সূচনা ঘটেঃ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সম্পর্ক কি উদারবাদের ভিত্তিতে হবে? না বাস্তবাদী জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় হবে? 

১৯৩৯ সালে প্রকাশিত ই এইচ কারের বিখ্যাতThe Twenty Years’ Crisis গ্রন্থে কার এই দুটি ধারাকে বিস্তারিতভাবে উদাহরণ সমেত উপস্থাপন করেছেন। এই গ্রন্থটি সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিবিধি অনুধাবনে অন্যতম প্রভাবশালী গ্রন্থ, এবং কার অনেকটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্রন্থের গবেষণাকে উপস্থাপন করেছেন।
         
ফরাসি দার্শনিক অ্যালেক্সান্ডার কোজেভ (Alexandre Kojeve) ই এইচ কার-এর থেকে আলাদা বয়ান উপস্থাপন করেন। যেভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে ই এইচ কার ইংরেজি ভাষাভাষী বয়ানকে প্রভাবিত করেছিলেন, অ্যালেক্সান্ডার কোজেভও ফরাসী দার্শনিকদের প্রভাবিত করেছিলেন। 

কোজেভ ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি ফরাসি বিপ্লবকে একটি ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করেন, কারণ এই বিপ্লবের ফলে ইউরোপে এনলাইটেনমেন্ট দর্শনের (যেমনঃ যুক্তি, মুক্তি, অধিকার, সমতা প্রভৃতি) প্রসার ঘটে। ১৯৯২ সালে মিশেল ফুঁকো যেমনটি ইতিহাসের সমাপ্তির কথা বলেছেন তার বিখ্যাত The End of History and the Last Man গ্রন্থে, কোজেভও মনে করতেন ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে।

তবে, কোজেভের সমালোচকদের ভাষায় পৃথিবীর ইতিহাস সর্বদা দার্শনিক মতাদর্শের বিতর্কের দরুন প্রভাবিত হয়েছে, যেক্ষেত্রে তিনটি মতাদর্শের বিতর্ক বেশি প্রভাব বিস্তার করেছেঃ উদারতাবাদ, কমিউনিজম এবং ফ্যাসিবাদ। তবে, দুই মহাযুদ্ধের অন্তবর্তী কালের একদম শেষের দিকে উদারতাবাদ ও বাস্তববাদের পাশাপাশি আরও কিছু দর্শনের আগম ঘটে। 

যেমনঃ যুদ্ধ ও শান্তিকে উদারতাবাদ ও বাস্তববাদের বয়ানের আলোকে না দেখেন সমাজতান্ত্রিক ও কমিউনিস্ট দেশগুলো ভিন্নভাবে দেখে। এই ধারার অনুসারীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে মার্ক্সবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতিকে (Political Economy) বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে।  এক্ষেত্রে নিকোলাই বুখারিন (Nikolai Bukharin) এবং ভ্লাদিমির লেনিনের সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব (The Theory of Imperialism) দ্বারা তারা বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন। 

আবার, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও ফ্যাসিজমে বিশ্বাসী দেশগুলো সোস্যাল ডারউনবাদকে (Social Darwinism) অনুসরণ করতেন। সোস্যাল ডারউনবাদের ভাষায় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার প্রয়োজনে একটি রাষ্ট্র শক্তি অর্জনে বেশি মনোযোগি হবে এবং নিজের রাষ্ট্রের পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজনে অন্যের ভূখন্ড দখল নিবে। হিটল্যারের নাৎসিবাদ ও মুসলিনির ফ্যাসিবাদ সোস্যাল ডারউনবাদী আদর্শের আদলে গড়ে উঠেছিলো, যার ফলাফল হিসেবে ধ্বংসাত্মক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে। 







ভাবানুবাদঃ

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 



মূল বইঃ

International Encyclopedia of Political Science

মূল লেখকঃ

Torbjorn L. Knutsen

Norwegian University of Science and Technology (NTNU)

Trondheim, Norway






প্রথম পর্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/history%20of%20international%20relations%20in%20bangla%20part%20I.html?m=1


দ্বিতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস (যুদ্ধ ও শান্তি)

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/international%20relations%20history%20in%20bangla.html


তৃতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রতিষ্ঠা

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/Origin%20of%20IR%20Department%20in%20Bangla.html


৪র্থ পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ আদর্শবাদ ও প্রথম ডিবেট

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/first%20debate%20in%20IR%20in%20Bangla.html?m=1








No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.