Header Ads

Header ADS

আচরণবাদ বনাম ঐতিহ্যবাদঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বিতীয় বিতর্ক

আচরণবাদ বনাম ঐতিহ্যবাদঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বিতীয় বিতর্ক 

Second Debate in IR

রিয়েলিজম ও উদারবাদী দর্শনের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণের গতিপথ প্রবাহিত হলেও, কোন পদ্ধতিতে উক্ত তত্ত্বের দ্বারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ব্যক্ষা করা হবে তা তখনো নির্ধারিত হয়নি। এই শূন্যতাকে ঘিরে স্নায়ুযুদ্ধকালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠের নতুন (দ্বিতীয়) মহা বিতর্ক হিসেবে আচরণবাদ (Behaviorism) ও ঐতিহ্যবাদের (Traditionalism) আগমন ঘটে। 

উল্লেখ্য, Behaviorism এবং Traditionalism শব্দদ্বয়ের প্রতিশব্দ হিসেবে যথাক্রমে আচরণবাদ ও ঐতিহ্যবাদকে ব্যবহার করা হলেও, ইংরেজি কনসেপ্ট হিসেবে Behaviorism এবং Traditionalism সমাজবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে ব্যপক অর্থ বহন করে। যেখানে ঐতিহ্যবাদ ইতিহাসকে প্রাধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিবিধির গুণগত (Qualitative) দিক বিশ্লেষণ করার কথা বলে, আচরণবাদ তথ্য-উপাত্তকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রের বাহ্যিক আচারণের সংখ্যাতাত্ত্বিক (Quantitative) দিক বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব যেমনঃ রিয়েলিজম ও উদারবাদ প্রধাণত ঐতিহ্যবাদকেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে। নিজ নিজ তত্ত্ব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেমন হবে তা বিশ্লেষণের (Interpretation) জন্য রিয়েলিস্ট ও উদারবাদী তাত্ত্বিকরা প্রজ্ঞা (Wisdom), দর্শন (Philosophy), আইন (Law) ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে (Historical Contexts) প্রধান উপজীব্য হিসেবে বিবেচনা করতেন। অর্থাৎ, রিয়েলিস্টরা ইতিপূর্বের রিয়েলিজম দর্শন, শক্তির ইতিহাস ও শক্তি কেন্দ্রিক ঐতিহাসিক প্রথা ও লেখনির উপর ভিত্তি করে তাদের রিয়েলিজম তত্ত্বকে সাঁজান। লিবারেলিজম তত্ত্বও একই নিয়ম অনুসরণ করে।  

কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে, উক্ত প্রথাগত ঐতিহ্যকে অনুসরণের বদলে সংঘাত ও যুদ্ধ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও তার সংখ্যাগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপথকে আন্দাজ করার চেষ্টা করা হয়। এই নতুন পদ্ধতিতে বলা হয়ঃ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের সাহায্যে রাষ্ট্রের আচরণের ধরন বুঝা যাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সংঘাত নিরসন করা যাবে বা এমনকি সংঘাতে জড়িয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থ আদায়ও করা যাবে। অর্থাৎ, সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণই রাষ্ট্রের আচরণকে বিশ্লেষণের সুযোগ করে দিবে।    

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে আচরণবাদকে প্রথম পরিচিত করান কুইয়েন্সি রাইট (Quincy Wright)। কয়েক শতকের যুদ্ধ সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন রাইট এবং সে তথ্য-উপাত্তকে একত্র করে সংখ্যাতত্ত্বের আলোকে ব্যাক্ষা করেন। এই বিরাট কর্মযজ্ঞকে তিনি ১৯৪১ সালে তার The Study of War গ্রন্থে উল্লেখ করেন। গ্রন্থটি নানা চিত্র, চার্ট, টেবিল প্রভৃতি তথ্যে পূর্ণ ছিলো যার সাহায্যে রাইট শক্তি কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতি কেমন হয়ে থাকে এবং হতে পারে তা বিশ্লেষণ করেন। 

রাইট যে সংখ্যাতত্ত্বের ধারনার প্রচলন ঘটান তা সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। এই সংখ্যাতত্ত্বের সমর্থকেরা নিজেদের বিহেভরিস্ট (Behaviorist) বা আচরণবাদী হিসেবে আখ্যা দেন। ফলে, প্রথাগত লেখকেরা যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক ও গুণগত পদ্ধতি অনুসরণ করতেন তাদের সাথে আচরণবাদীদের মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়।  

কুইয়েন্সি রাইট (Quincy Wright) আচরণবাদের সূচনা ঘটালেও ডেভিড সিঙ্গার (J. David Singer) ও হেডলি বুলের (Hedley Bull) হাতে আচরণবাদ (Behaviorism) বনাম ঐতিহ্যবাদ (Traditionalism) “মহা বিতর্ক (Great Debate)”- এ রূপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপক ডেভিড সিঙ্গার নিজেকে একজন আচরণবাদী (Behaviorist) হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। সিঙ্গার Correlates of War Project নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেন যার অধীনে তিনি যুদ্ধ ও সংঘাত সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত একাট্টা করেন। 

অন্যদিকে, অক্সফোর্ড ও লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্সের অধ্যাপক হেডলি বুল ছিলেন প্রভাবশালী ঐতিহ্যবাদী (Traditionalist)। বুলের আরও একটি পরিচয় রয়েছে, তিনি ছিলেন British Committee on International Relations-এর সদস্য। এই কমিটি সমসাময়িক উদারবাদ ও বাস্তববাদ তত্ত্বের বিকল্প হিসেবে English School of Thought নামে একটি নতুন তত্ত্ব প্রণয়নের প্রচেষ্টা চালায়। 

English School of Thought তত্ত্বটি বহুলাংশে আন্তর্জাতিক আইনের জনক হুগো গ্রোসিয়াস (Hugo Grotius)- এর আইন ও সমাজ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। তত্ত্বটি সংঘাত বা বিরোধের তুলনায় সহযোগিতা ও আইনসিদ্ধ কাঠামোকে গুরুত্ব দেয়। পরবর্তীতে এই তত্ত্বের আলোকেই নতুন ইউনিয়ন হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি এক ইউরোপীয় সমাজের পথে যাত্রা করে।      

ডেভিড সিঙ্গার (J. David Singer) ও হেডলি বুলের (Hedley Bull) আচরণবাদ  (Behaviorism) বনাম ঐতিহ্যবাদ (Traditionalism) বিতর্কটি প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের পদ্ধতিগত বিতর্ক (Methodological Debate) হিসেবে থাকলেও, ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য অনেক বিষয় এই বিতর্কের সাথে যুক্ত হয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কী আদও একটি পাঠ্যক্রম হওয়ার যোগ্যতা রাখে? এবং রাখলে তাকে কিভাবে মূল্যায়ণ করতে হবে?, ইত্যাদি ছিলো সেরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

এ প্রশ্নের উত্তরে ঐতিহ্যবাদীরা বলেন ঐতিহাসিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ (Historical Interpretation) পূর্বক অবশ্যয়ই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি পাঠ্যক্রম- জ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা (Field of Knowledge) হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, আচরণবাদীদের ভাষায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে অবশ্যই তাকে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে (Objective Scientific Study) পরীক্ষিত হতে হবে, এবং সে পরীক্ষায় সফল হতে হবে।  

কেনেথ ওয়ালজ ১৯৫৯ সালে রচিত তার বিখ্যাত Man, the State, and War গ্রন্থে এই বিতর্কগুলোকে তুলে ধরেন। ওয়ালজ মানুষ, রাষ্ট্র ও যুদ্ধ বিষয়ে বিভিন্ন দার্শনিক, রাষ্ট্রনায়ক ও স্ট্রাটেজিস্টদের মূল কথাগুলোকে তার এই বইয়ে উল্লেখ করেছেন, যা সত্যিই চমৎকার একটি কাজ। তিনি পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন এই বইয়েঃ উক্ত মনীষী, রাষ্ট্রনায়ক ও স্ট্রাটেজিস্টদের বক্তব্যের সুর অনুযায়ী সে বক্তব্যকে বিভিন্ন তত্ত্বে ভাগ করেন, এবং সেগুলোকে আবার তিনটি আলাদা স্তরেঃ ব্যক্তি, সমাজ/ রাষ্ট্র, এবং সিস্টেমে বিভক্ত করেন, যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে উক্ত তিনটি স্তর থেকেই বিশ্লেষণ (level of analysis) করা যায়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণকে ও তত্ত্বকে অবশ্যই এই তিন স্তরব্যাপী (three level of analysis) বিশ্লেষণের যোগ্যতা রাখতে হবে।

ওয়ালজের বই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে এবং জ্ঞানের শাখা হিসেবে বিকশিত হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যে যথেষ্ট রাজনৈতিক কনসেপ্ট ও আইডিয়ার (বর্তমান ও ঐতিহাসিক) সন্নিবেশ ঘটেছে সে দিকটিও তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেন। ওয়ালজের মত মার্টিন ওয়াইটও (Martin Wight) একই কথা বলেছেন। ওয়াইট ছিলেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্সের অধ্যাপক। ওয়াইটের ভাষায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে তিন ধরণের চিন্তা/ দর্শনের দেখা মেলেঃ বাস্তববাদ (realism), যুক্তিবাদ (rationalism), এবং বিপ্লববাদ (revolutionism) [উল্লেখ তিনটি ইংরেজি কনসেপ্টের যে বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহৃত হয় তা পূর্ণাঙ্গ নয়, কারণ ইংরেজি কনসেপ্ট হিসেবে তারা প্রত্যেকেই ব্যপক অর্থ বহন করে]। 

কনসেপ্ট তিনটি একই সাথে তিন ধরণের দর্শনের কথাও বলে যাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি/ অন্তর্জ্ঞান (ontology) একে অন্যের থেকে ভিন্ন, এবং এই ভিন্নতার দরুন তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে। যেমনঃ রিয়েলিজমের দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক হল শক্তির খেলা এবং যে খেলায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা/ জাতীয় স্বার্থ নির্দিষ্ট করতে পারে; যুক্তিবাদের দৃষ্টিতে মানুষ সহজাতভাবে যুক্তিবাদী বা রেশোনাল এবং যুক্তিবাদী হওয়ায় মানুষ তার ও তার সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থে সংঘাতের বদলে শান্তির দিকে ফিরে যেতে চায়- সংঘাত/ যুদ্ধের বদলে সহযোগিতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়; এবং বিপ্লববাদী দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের আদর্শের জায়গা থেকে উদ্ভূত হয়, অর্থাৎ বিপ্লববাদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে “সঠিক ও ভুল”-এর দৃষ্টিতে দেখা হয়, এবং পুরাতনকে পরিবর্তন করে একটি শান্তিপূর্ণ, সাম্য ও সৌহার্দে ভরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনের স্বপ্ন দেখা হয়। ওয়াইটের ভাষায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের বাস্তবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হয়েছিলো থমাস হবসের লেখনি থেকে; যুক্তিবাদের সূচনা হয়েছিলো হুগো গ্রোসিয়াসের আইন ও সমাজ বিষয়ক লেখনি থেকে, এবং বিপ্লববাদের সূচনা হয়েছিলো ইমান্যুয়েল কান্টের স্থায়ী শান্তিতত্ত্ব থেকে। 

১৯৬০ এর দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বিতীয় মহা বিতর্কের পুনরায় চালু হয়। ওয়ালজ ও ওয়াইট উভয়েই ছিলেন আচরণবাদী, এবং তাদের প্রভাবশালী লেখনিতে দ্বিতীয় বিতর্কের ডামাডোল অনেকটাই শান্ত হয়েছিলো। তবে, ১৯৬০ এর দশকে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, বিশেষ করে অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্মেষ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে বিজ্ঞানকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে। ফলে, পুর্বতন আচারণবাদীদের তালিকায় নতুন নতুন বিজ্ঞানীদের নাম লিপিবদ্ধ হতে থাকে, যারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কাঠামো অনুসারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও বিশ্লেষণ করতে শুরু করে।  

তবে, এই বিজ্ঞানীরাও দুইটি দলে বিভক্ত ছিলেন। এদের প্রথম দল আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নিরাপত্তা ইস্যুকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। এই বিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠে নিরাপত্তা অধ্যায়নকে (security studies) সংযোজনের কথা বলেন। এই বিজ্ঞানীদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলো আমেরিকান বিমান বাহিনীর গবেষণা প্রতিষ্ঠান RAND Corporation, এবং আল্বার্ট ওহলস্টেটার (Albert Wohlstetter) ও থমাস স্কেলিং (Thomas Schelling) তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী গবেষক ছিলেন। 

দ্বিতীয় দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন সমাজ বিজ্ঞানীরা, যারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও শান্তির উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। এই দলভুক্তদের মধ্যে কেনেথ বলডিং (Kenneth Boulding) এবং সমাজবিজ্ঞানী জোহান গুলতাং (Johan Galtung) ছিলেন সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। পূর্ববর্তী লেখকদের প্রদত্ত শান্তির ধারণাকে এই নতুন প্রজন্মের সমাজবিজ্ঞানীরা চ্যালেঞ্জ করেন এবং নতুন করে পিচ মুভমেন্টের সূচনা ঘটান। এই মুভমেন্টের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিলো পারমাণবিক অস্ত্রের বিরোধিতা করা এবং নতুন গবেষণা ক্ষেত্রে হিসেবে শান্তি অধ্যায়নের (Field of Peace Research) শুরু করা। 

১৯৬০ পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত এই আচরণবাদীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণের গতিপথকে আরও বৈচিত্রময় করেছেন। যদিও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তারা একই ধরণের পদ্ধতি (বৈজ্ঞানিক/ সংখ্যাতাত্ত্বিক গবেষণা পদ্ধতি) অনুসরণ করতেন, তবে তাদের বিশ্লেষণের ফলাফল স্বতন্ত্র ছিলো, কারণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে তারা তাদের স্বতন্ত্র অন্তর্দৃষ্টি (ontology) দিয়ে দেখতেন। 

এই ভিন্নতার ফলে তারা রিয়েলিজম বা উদারবাদের মত একধরনের নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কথা বলতেন না, বরং তাদের গবেষণার ফলাফল তাদের বিশ্লেষণকে নির্দিষ্ট করতো। অর্থাৎ, সহযোগিতার মাধ্যমেই যে শান্তি আসবে এবং শক্তি প্রতিযোগিতাই যে যুদ্ধের শঙ্কা বাড়িয়ে দেবে এধরনের বয়ানকে আচরণবাদীরা ততক্ষণ গ্রহণ করতে চান না, যতক্ষণ না সে বয়ান কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল হিসেবে আবির্ভূত হয়। 

এভাবেই স্নায়ুযুদ্ধের একটা লম্বা সময় যাবত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে ঐতিহ্যবাদীদের (Traditionalist) সাথে আচরণবাদীদের (Behaviorist) বিতর্ক চলতে থাকে। 




ভাবানুবাদঃ

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 



মূল বইঃ

International Encyclopedia of Political Science

মূল লেখকঃ

Torbjorn L. Knutsen

Norwegian University of Science and Technology (NTNU)

Trondheim, Norway






প্রথম পর্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/history%20of%20international%20relations%20in%20bangla%20part%20I.html?m=1


দ্বিতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস (যুদ্ধ ও শান্তি)

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/international%20relations%20history%20in%20bangla.html


তৃতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রতিষ্ঠা

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/Origin%20of%20IR%20Department%20in%20Bangla.html


৪র্থ পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ আদর্শবাদ ও প্রথম ডিবেট

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/first%20debate%20in%20IR%20in%20Bangla.html?m=1


৫ম পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ রিয়েলিজম ও দ্বিতীয় বিতর্কের প্রেক্ষাপট 
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/Cold%20War%20and%202nd%20debate%20in%20IR%20in%20Bangla.html 

৬ষ্ঠ পর্বঃ আচরণবাদ বনাম ঐতিহ্যবাদঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বিতীয় বিতর্ক 
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/second%20great%20debate%20in%20IR.html



No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.