Header Ads

Header ADS

English School of Thought: আইন ও শৃঙ্খলায় গড়া নতুন সম্পর্ক

 English School of Thought: আইন ও শৃঙ্খলায় গড়া নতুন সম্পর্ক


English School of Thought আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের অন্যতম একটি তত্ত্ব। তবে, তত্ত্বটি একাডেমিক দুনিয়ায় খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কী শক্তি কেন্দ্রিক পরিচালিত হবে না শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হবে? তা নিয়ে রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম তত্ত্বের মধ্যকার চলমান বিতর্ক নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে English School of Thought তত্ত্বটির আগমন ঘটে। তত্ত্বটি শুধু বিতর্ক নিরসনেই গুরুত্ব দেয় না, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণায় কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিৎ হবে সে বিষয়টি নিয়েও ব্যবহারবাদীদের (Positivist) সাথে বিতর্কে জড়ায়। উল্লেখ্য, যেখানে ব্যবহারবাদীরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের যেকোন গবেষণা বা কোন ঘটনা বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক ও নির্মোহ পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেন, English School of Thought তত্ত্বের অনুসারীরা উক্ত ক্ষেত্রে প্রথাগত ঐতিহ্যবাদকে অনুসরণের কথা বলে যে পদ্ধতিটি গড়ে উঠেছে ইতিহাস, দর্শন, আইন ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মেশালে।

English School of Thought- এর প্রেক্ষাপটঃ

তত্ত্ব হিসেবে English School of Thought- তত্ত্বটি বিকাশের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে। ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের সূচনা হলেও, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বগুলোঃ রিয়ালিজম ও লিবারেলিজম আমেরিকান লেখক, রাজনীতিবিদ ও সামরিককর্তাদের একধরণের চিন্তার ফসল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠে যুক্ত হয়। এছাড়াও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থা এবং আমেরিকার সাহায্যে সে অবস্থার পুনর্গঠনের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে ইউরোপীয়দের বড় কোন অবদান নজরে আসছিলো না, বিশেষকরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বের ক্ষেত্রে। ফলে, আমেরিকান তত্ত্বের বাহিরে গিয়ে ইউরোপীয়রা, বিশেষ করে ব্রিটেনের পন্ডিতেরা নতুন একটি তত্ত্ব রচনা করেন যা বৈশিষ্ট্যগতভাবে ছিলো ইউরোপীয় এবং স্বতন্ত্র। এর অন্যতম কারণ, আমেরিকান তাত্ত্বিকদের প্রণীত রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম তত্ত্বদুটি মূলত রাষ্ট্রের ক্ষমতা, স্বার্থ, এবং সংঘাতের, মুক্তবাণিজ্য, নৈরাজ্য প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিলো, যা অনেক ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞদের কাছে অতিসরলীকৃত এবং একমাত্রিক বলে মনে হয়েছিল। আদতে, এই তত্ত্বের নামের ভিতরেই (English School of Thought) তত্ত্বটির স্বতন্ত্ররূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে আমেরিকান তত্ত্বের প্রভাব ও বিতর্কের বিকল্প হিসেবে ১৯৫০ এর দশকে British Committee on the Theory of International Politics নামে একটি বুদ্ধিজীবী সংগঠনের উদ্ভব হয়। এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বে একটি নতুন এবং সমৃদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা, যা আমেরিকান তত্ত্বের সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করতে পারে। এই কমিটি English School of International Relations তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কমিটির প্রধান ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন হেডলি বুল (Hedley Bull), মার্টিন উইট (Martin Wight), এবং অ্যাডাম ওয়াটসন (Adam Watson)। তারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শুধুমাত্র ক্ষমতা ও সংঘাতের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা, নিয়ম, এবং প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেন। এই কমিটির কাজের ফলাফল হিসেবে English School of International Relations বা English School of Thought তত্ত্বের বিকাশ ঘটে, যা আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society) ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। উল্লেখ্য, প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society) ধারনাটির পরিচয় মেলে চার্লস ম্যানিং (Charles Manning) ও মার্টিন উইটের (Martin Wight) লেখায়।

কমিটির অধীনে ধারাবাহিকভাবে মিটিং চলতে থাকে, এবং সেখানে শুধু কমিটির একাডেমিকই নয়, কমিটির বাহির থেকেও বিভিন্ন একাডেমিক ও নেতৃবৃন্দ যুক্ত হন। এভাবে একটি স্বতন্ত্র ধারণা হিসেবে English School of Thought তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করতে কমিটি বেশ কিছু নিবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশ করে। কিন্তু, তত্ত্ব হিসেবে English School of Thought- এর পরিধি কতটুকু হবে? রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম থেকে কোন কোন কনসেপ্টকে গ্রহণ করা হবে? এবং কোনগুলোকে বাদ দেওয়া হবে? তা নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। মজার বিষয় হলো, কমিটির বাহিরের সদস্য হওয়া স্বত্বেও, ই এইচ কার এবং চার্লস ম্যানিং প্রদত্ত আইডিয়ার প্রভাবে কমিটিতে চলমান মতানৈক্যে ঐক্য আসতে শুরু করে।

 English School of Thought- তত্ত্বের বিবর্তনের ধারাঃ

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব হিসেবে English School of Thought-এর বিবর্তনের ধারা আমাদের জানা উচিৎ, এবং সেক্ষেত্রে আমরা ওলে ওয়েভার (Ole Wæver) প্রদত্ত বিবর্তনের ধারাকে অনুসরণ করতে পারি। ওয়েভার চারটি ধাপে English School of Thought- তত্ত্বের যাত্রাপথকে ভাগ করেছেন। যথাঃ

(১) প্রথম ধাপ শুরু হয় ১৯৫৯ সালে, British Committee on the Theory of International Politics নামে একটি বুদ্ধিজীবী কমিটির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই কমিটি ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিলো। এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি বাটারফিল্ড (Butterfield) এবং উইটের (Wight) যৌথ সম্পাদনায় Diplomatic Investigations নামক গ্রন্থ প্রকাশ করা। এই সময়ে কমিটির যাবতীয় বুদ্ধিদীপ্ত কাজের কেন্দ্রে ছিলো আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society) গঠনে মনোযোগী হওয়া, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব রচনার পছন্দসই পদ্ধতি হিসেবে আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society) গঠনের পদ্ধতি অনুসরণ করা।

(২) ১৯৬৬ সাল থেকে English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় এবং এই দ্বিতীয় ধাপের বিবর্তন ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বজায় থাকে। এই সময়ে ইংলিশ স্কুল অব থটের দুটি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়:

(ক) হেডলি বুল ১৯৭৭ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ The Anarchical Society রচনা করেন। এই গ্রন্থে বুল দেখানোর চেষ্টা করেন কিভাবে ও কিরূপে পশ্চিমা আন্তর্জাতিক সমাজের উদয় হয়েছে। তিনি দেখান যে, আন্তর্জাতিক সিস্টেম যদিও নৈরাজ্যেভরা (Anarchical), অর্থাৎ কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ববিহীন, তবুও রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society) বিদ্যমান, যা নিয়ম (Laws), প্রতিষ্ঠান (Institutions), এবং সাধারণ মূল্যবোধের (Common values) ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

(খ) English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশে মার্টিন উইটের Systems of States নামক গ্রন্থটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গ্রন্থের মাধ্যমে উইট ঐতিহাসিকভাবে আন্তর্জাতিক সমাজের অস্তিত্ব ও প্রাসঙ্গিকতাকে আরও বিশদভাবে তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা (যেমন, প্রাচীন গ্রিস, রেনেসাঁস ইউরোপ) পরীক্ষা করে দেখান যে, আন্তর্জাতিক সমাজের ধারণা কেবল আধুনিক যুগেরই নয়, বরং ঐতিহাসিকভাবেও বিদ্যমান ছিল।

শুধু হেডলি বুল ও উইট-ই নয়, এই সময়ে তরুণ প্রজন্মের লেখকরাও English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশে তাদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন, বিশেষ করে তরুণ গবেষক ভিনসেন্টের ১৯৭৪ সালের বই Nonintervention and International Order আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দুনিয়ায় সাড়া ফেলে দেয়। অত্র বইয়ে ভিনসেন্ট দেখান যে, আন্তর্জাতিক সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হস্তক্ষেপ না করার নীতি (Non-intervention Policy) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই গ্রন্থটি ইংলিশ স্কুল অব থট তত্ত্বকে আরও সমৃদ্ধ করে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই তত্ত্বের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

(৩) English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশে তৃতীয় ধাপ ১৯৭৭-১৯৯২ সাল অবদি বিস্তৃত ছিলো। এই ধাপে “আন্তর্জাতিক সমাজ” ধারণাটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আরও প্রাধান্য বিস্তার করে, এবং ইউরোপের নতুন প্রজন্মের কাছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে এই তত্ত্বটি খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হতে থাকে। নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণে English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশের পথ আবারও উন্মোচিত হয়। কারণ, এই তত্ত্বের মূল সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ, হেডলি বুলের মৃত্যুর পরপরই ১৯৮০ সালের মাঝামাঝিতে বৃটিশ কমিটির নিয়মিত সভা বন্ধ হয়ে যায় এবং এভাবেই ইংলিশ স্কুল অব থট তত্ত্বের প্রবক্তা ব্রিটিশ কমিটির সমাপ্তি ঘটে।

তবে, ব্রিটিশ কমিটি English School of Thought- তত্ত্বের যে বীজ বপন করেছিলো তার প্রধান ফল ছিলো ১৯৮৪ সালে হেডলি বুল এবং ওয়াটসন সম্পাদিত The Expansion of International Society নামক বইটি। এই বইয়ের পথ ধরে ১৯৯২ সালে ওয়াটসন তার বিখ্যাত The Evolution of International Society গ্রন্থটি রচনা করেন। এই গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে তুলনামূলক ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করা। নতুন প্রজন্মের লেখক ভিনসেন্টের প্রধান প্রধান বইগুলি, যেমনঃ Foreign Policy and Human Rights (১৯৮৬), এবং Human Rights and International Relations (১৯৮৬) এই সময়কালে প্রকাশিত হয়।

এছাড়াও, সমসাময়িক কিছু সম্পাদিত গ্রন্থ, যেমনঃ  ডি. বি. মিলার এবং আর. জে. ভিনসেন্ট সম্পাদিতঃ Order and Violence: Hedley Bull and International Relations (১৯৯০); হেডলি বুল, বেনেডিক্ট কিংসবারি এবং অ্যাডাম রবার্টস সম্পাদিতঃ Hugo Grotius and International Relations (১৯৯০); মাইকেল ডোনেলান রচিতঃ The Reason of States (১৯৭৮); জেমস মেয়াল রচিতঃ The Community of States (১৯৮২); এবং কর্নেলিয়া নাভারি রচিতঃ The Condition of States (১৯৯১); এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ মনোগ্রাফ: মেয়ালের ১৯৯০ সালের Nationalism and International Society, এবং ডোনেলানের ১৯৯০ সালের Elements of International Political Theory ইত্যাদি English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশের পথকে প্রসারিত করে।

(৪) English School of Thought- তত্ত্ব বিকাশের সর্বশেষ ধাপটি ১৯৯২ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চলমান। এই ধাপটি সম্পূর্ণরূপে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে উঠেছে এবং পূর্বের ব্রিটিশ কমিটি থেকে স্বতন্ত্র ও যোগাযোগশূন্য। এই নতুন প্রজন্মের আন্তর্জাতিক সমাজ তত্ত্ববিদেরা English School of Thought- তত্ত্বের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের অন্যন্য তত্ত্ব ও ধারনার  (উদাহরণস্বরূপঃ Neorealism, Regionalism, Constructivism, Globalization) সাথে সামাঞ্জস্য তৈরির চেষ্টা করেন। এই সামঞ্জস্যের প্রচেষ্টা প্রথম শুরু হয় ১৯৯২ সালে Millennium জার্নালের বিশেষ সংখ্যা Beyond International Society প্রকাশের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় বি. এ. রবার্টসন ১৯৯৮ সালে International Society and the Development of International Relations Theory নামক গ্রন্থ সংকলন করেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ Bary Buzan- এর ভাষায়, English School of Thought- তত্ত্বের এই চতুর্থ ধাপটি পূর্ববর্তী তিনটি প্রজন্মকে একই সুতোয় গাথতে সক্ষম হয়েছে এবং তা নতুন প্রজন্মের মাঝে এখনো প্রাণবন্ত হয়ে রয়েছে। তবে, এটি সত্য যে, English School of Thought- তত্ত্বটি শক্তি প্রতিযোগিতা কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নকে সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি।

 English School of Thought- তত্ত্বের মূল কথা কী?

১৯৯৫ সালে European Journal of International Relations নামক জার্নালে Neorealism and the English School: A Methodological, Ontological and Theoretical Reassessment শিরোনামে ব্রিটিশ কমিটির অন্যতম সদস্য রিচার্ড লিটল একটি নিবন্ধ লেখেন। সে নিবন্ধে লিটল English School of Thought- তত্ত্বকে তিনটি ভাগে ভাগ করেনঃ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা (International System), আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society), এবং বিশ্বসমাজ (World Society)। লিটল উল্লেখ করেন যে, এই তিনটি মূলকথার আগমন ঘটেছে কতিপয় দার্শনিকের মতাদর্শ থেকেঃ হবস ও ম্যাকিয়াভেলির বাস্তববাদ (Political Realism) থেকে আন্তর্জাতিক সিস্টেম ধারণাটি এসেছে; এবং হুগো গ্রোসিয়াস ও ইমান্যুয়েল ক্যান্টের উদারতাবাদ (Liberal Internationalism) থেকে আন্তর্জাতিক সমাজ ও বিশ্বসমাজ ধারণাটি এসেছে।

লিটলের এই বিভাজনকে কিছুটা সমর্থন করেন মার্টিন উইট তার বিখ্যাত International Theory: The Three Traditions গ্রন্থটি রচনা করেন, এবং এখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে, বিশেষত এই পাঠ্যক্রমের তত্ত্ব বিশ্লেষণে তিনটি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহারে জোর দেনঃ বাস্তববাদ (Realism), যুক্তিবাদ (Rationalism), ও বিপ্লববাদ (Revolutionism)। লিটল ও উইট উভয়ের প্রদত্ত পন্থা অনুসারে আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব হিসেবে English School of Thought- তত্ত্বকে নিম্নোক্তভাবে ব্যাক্ষা করতে পারি।

 ক। আন্তর্জাতিক সিস্টেম (International System)

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথম দুই তত্ত্বঃ লিবারেলিজম ও রিয়েলিজমের মত English School of Thought- তত্ত্বও আন্তর্জাতিক সিস্টেম কনসেপ্টকে তার তাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত করে নেয়। রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম তত্ত্বের মত English School of Thought- তত্ত্বও এটা স্বীকার করে নেয় যে আন্তর্জাতিক সিস্টেম তৈরি হয় সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমন্বয়ে, এবং এই রাষ্ট্রগুলো শুধু নিজেদের নিরাপত্তা ও স্বার্থ নিয়ে চিন্তিত। এটি আদতে রিয়েলিজম তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দু, যা বিকশিত হয়েছে ম্যাকিয়াভেলি ও থমাস হবসের সার্বভৌম রাষ্ট্র ও নৈরাজ্যে ভরা প্রাকৃতিক পরিবেশের (State of Nature) কনসেপ্ট থেকে। English School of Thought- তত্ত্বও আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে একটি নৈরাজ্যপূর্ণ সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করে, তবে রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম তত্ত্ব যেভাবে এই নৈরাজ্য থেকে সমাধানের কথা বলেছে, English School of Thought- তত্ত্ব তা থেকে স্বতন্ত্র পন্থার কথা বলে।  

খ। আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society)

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে English School of Thought- তত্ত্বের এক অনবদ্য অবদান হল “আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society)”-এর ধারণা। ধারণাটি উদ্ভূত হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনের জনক হুগো গ্রোসিয়াসের দার্শনিক চিন্তা থেকে। আন্তর্জাতিক সমাজ কনসেপ্টে আন্তর্জাতিক সিস্টেমের প্রতিটি রাষ্ট্রের পরিচিতি (Common Identitity) ও কমন চাহিদাকে (Common Interests) প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের (Institutionalization) কথা বলা হয়। আন্তর্জাতিক সমাজ কনসেপ্টটি বিকশিত হয় উইটের যুক্তিবাদী (Rationalism) রাজনৈতিক চিন্তাকে পুঁজি করে। English School of Thought- তত্ত্বের ভাষায়, আন্তর্জাতিক সিস্টেমের প্রতিটি রাষ্ট্র হবে রেশনাল বা যৌক্তিক, এবং এই যৌক্তিকতার দরূন তারা আন্তর্জাতিক সিস্টেমের বিদ্যমান নৈরাজ্য প্রশমনে কমন আদর্শ (Ideaology), মূল্যবোধ (Values), আইন (Rules) ও প্রতিষ্ঠান (Institutions) গড়ে তুলবে। এই বিধিবদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আন্তর্জাতিক সিস্টেমের প্রতিটি রাষ্ট্রকে তাদের আচরণে লাগাম টানতে বাধ্য করবে যাতে সে রাষ্ট্রগুলো মিলে একটি আন্তর্জাতিক সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

গ। বিশ্বসমাজ (World Society)

English School of Thought- তত্ত্বে বিশ্বসমাজ (World Society) ধারনাটির জন্ম ইমান্যুয়েল কান্টের হাত ধরে। বিশ্বসমাজ ধারণাটি রাষ্ট্র কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিপরীতে ব্যক্তি, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠন এবং এমনকি বৈশ্বিক জনসংখ্যার সামগ্রিক সামাজিক পরিচয়কে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে বিবেচনা করে। রাষ্ট্রের বাহিরে এরূপ নতুন আঙ্গিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নের প্রয়োজনীয়তা বিপ্লববাদ (Revolutionism) দর্শন থেকে উদ্ভূত হয়েছে। অর্থাৎ, জাতীয় নাগরিকত্ব (Political Citizenship) ধারনার বিপরীতে বিপ্লববাদ সার্বজনীন বিশ্বনাগরিকত্ব (cosmopolitanism) কনসেপ্টকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুক্ত করে।

বিশ্বনাগরিকত্বের ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রথাগত জাতীয় নাগরিকত্বের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। অর্থাৎ, জাতীয় নাগরিকত্বের ভিত্তিতে যে সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, এবং সে সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমন্বয়ে যে আন্তর্জাতিক সিস্টেম তৈরি হয়েছে বিশ্বনাগরিকত্ব/ বিশ্বসমাজ ধারণাটি সে বয়ানকে চ্যালেঞ্জ করে । বিশ্বসমাজ ধারণাটি মূলত একধরনের নৈতিক/ আদর্শিক (Normative) রাজনৈতিক তত্ত্ব। এটি মানবিক মূল্যবোধ, ন্যায়বিচার এবং বৈশ্বিক নাগরিকত্বের ধারণাকে প্রাধান্য দেয়। এটি উদারনীতিবাদ (Liberalism), মানবাধিকার (Human Rights) এবং বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের (Justice) মতো ধারণাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।  


চিত্র ১: English School of Thought তত্বের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

 English School of Thought- তত্ত্বে “আন্তর্জাতিক সমাজ” ধারণাটি বিকাশে প্রতিষ্ঠানের (Institutions) ভূমিকাকে অতি জরুরি হিসেবে দেখানো হয়। তত্ত্বানুসারে, প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে কিছু আদর্শ, মূল্যবোধ, আইন ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ের দীর্ঘমেয়াদি অনুশীলনের ভিতর দিয়ে। আন্তর্জাতিক সমাজের সহায়ক এই প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা যত বেশি হবে, আন্তর্জাতিক সমাজের “ছায়া প্রতিষ্ঠান (Psudo-Institution)” বা 'দ্বিতীয় সংগঠন (Secondary Institution)' হিসেবে বিবেচিত “আন্তর্জাতিক সংগঠন (International Organizations)”-এর কার্যকারিতাও তত বৃদ্ধি পাবে।

International System এবং International Society-এর মধ্যে পার্থক্যঃ

আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা (International System) এবং আন্তর্জাতিক সমাজ (International Society)-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বিধায় কোন নির্দিষ্ট রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্কের ধরণ এবং বৈশিষ্ট্যও অনেকক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। যেমনঃ ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক যেমনটি ছিলো, ইউরোপীয়দের সাথে অটোমান সাম্রাজ্যের সম্পর্ক কিন্তু তেমন ছিলো না, সেখানে একটি মৌলিক পার্থক্য ছিলো। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক পরিচালনের ক্ষেত্রে নিজেদের এক ইউরোপীয় সমাজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করতো।

অন্যদিকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো এবং অটোমান সাম্রাজ্যের মধ্যকার সম্পর্ক পরিচালনে আন্তর্জাতিক সিস্টেমের সমীকরণ অনুসরণ করা হতো, অর্থাৎ, ইউরোপীয় ও অটোমান দুটি সত্ত্বা হিসেবে আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে প্রভাবিত করতো। একইভাবে, বর্তমানেও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পারিক সম্পর্ক পরিচালনে নিজেদেরকে একটি আন্তর্জাতিক সমাজের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তুরস্কের (একটি অ-সদস্য রাষ্ট্র) মধ্যে চলমান সম্পর্ক ঠিকই আন্তর্জাতিক সিস্টেম অনুসরণ করে পরিচালিত হয়।

তবে, কিছু পন্ডিতদের ভাষায়, যদিও আন্তর্জাতিক সিস্টেম ও আন্তর্জাতিক সমাজের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, তবে সে পার্থক্য অত গভীর নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক সিস্টেমের মাঝেও একটি সমীকরণ অনুসারে শক্তির রাজনীতি পরিচালিত হয়, এই সিস্টেমের অংশ প্রতিটি সদস্য সে বয়ানকে মাথায় রেখে সিস্টেমের সমীকরণ অনুসারে তাদের বৈদেশিক নীতি সাঁজায়। আবার, আন্তর্জাতিক সমাজ ধারনাটির মধ্যেও সিস্টেমের প্রবণতা থাকতে পারে, অর্থাৎ সেখানেও শক্তি প্রতিযোগিতা, অর্থনৈতিক শোষণ ইত্যাদি চলতে পারে যা সমাজের অংশীদারদের স্বার্থকে ব্যহত করতে পারে। ফলে, আন্তর্জাতিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সিস্টেমের মাঝে যে পার্থক্যটি দেখা যায় তাকে অনেক বিশেষজ্ঞ একটি দুর্বল বা 'পাতলা' (thin) আন্তর্জাতিক সিস্টেম ও আন্তর্জাতিক সমাজ হিসেবে উল্লেখ করেন।

English School of Thought and European Union

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপের শিল্পোন্নত ছয়টি রাষ্ট্রঃ জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, এবং, লুক্সেমবার্গ (বেনেলাক্স রাষ্ট্র) মিলে একটি অর্থনৈতিক জোট তৈরি করে। সে জোটের সম্প্রসারণের চুরান্তরূপ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নামের আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্ভব। অর্থনৈতিক জোট হয়ে কাজ করার প্রয়োজনে একে অন্যের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তন আনার দরকার পরে, যাতে তাদের জোটের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়। পরবর্তীতে হেডলি বুল এবং ব্রিটিশ কমিটি অফ ইন্টারনেশনাল রিলেশন কমিটির লেখনিতে প্রভাবিত হয়ে এই রাষ্ট্রগুলো সিদ্বান্ত গ্রহণ তারা নিজেদের পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির স্বার্থে কিছু সাধারণ আইন ও প্রথা অনুসরণ করবে এবং প্রতিষ্ঠানের বিধি মতাবেক তাদের আচারণবিধি সাজাবে। এরূপ মতৈক্য আধুনিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভীত রচনা করেছিলো। সময় যত পেরিয়েছে, এই জোটের সাথে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো যুক্ত হওয়া শুরু করে। একইভাবে অত্র ছয় রাষ্ট্রের মত, নতুনদেরও এই জোটে যুক্ত হতে জোটের যে স্বাভাবিক আইন, প্রথা ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক মতৈক্য রয়েছে সেগুলোকে অনুসরণ করতে হয়।

আন্তর্জাতিক সমাজ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি অপশনই রেখেছেঃ ইউনিয়নের কিছু নিয়ম এই ইউনিয়নের সদস্যদের মানতে হবে, আবার এই ইউনিয়নের সদস্যরাও তাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনায় নিজস্ব নীতি অনুসরণ করতে পারবে। ইউনিয়নের যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্র কিছুক্ষেত্রে যেমন: বাণিজ্য, পরিবেশ, প্রতিযোগিতা নীতি) তাদের স্বার্বভৌমত্বে ছাড় দিয়ে সাধারণ নিয়ম ও নীতি মেনে চলবে, আবার অন্যক্ষেত্রে (যেমন: প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি) সদস্যরা নিজেদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে।

উদাহরণ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কথা বলা যেতে পারে, যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রিক বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, আবার প্রতিরক্ষার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ন্যাটোর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বজায় রাখে। তবে, এর বাহিরেও, ইউরোপের যেকোন রাষ্ট্রের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্তরাজ্যের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সবচেয়ে জোরালো। এর পরে রয়েছে ফ্রান্স ও জার্মানি। এমনকি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতিকে ইইউ একভাবে দেখে, আবার ইউনিয়নের সদস্যরা অন্যভাবে দেখে। যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও ইরাক আক্রমনে ব্রিটেন ও আরও কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র সমর্থন দিলেও, ফ্রান্স, জার্মান এই যুদ্ধের সমালোচনা করে। হেডলি বুলের আন্তর্জাতিক সমাজ ধারণাটি রাষ্ট্রগুলোকে এভাবে একটি কমনগ্রাউন্ড দেয়, যাতে সে একদিকে কোন আন্তর্জাতিক সমাজের অংশ হতে পারে, আবার অন্যদিকে নিজের রাষ্ট্রের স্বার্থ অনুযায়ী বৈদেশিক নীতিও সাঁজাতে পারে।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমাজে যে কনসেপ্ট দুটির অবতারণা হয়ঃ Solidarity বা সংহতি এবং Pluralism বা বহুত্ববাদ। Solidarity বা সংহতি মূলনীতি অনুসারে ইইউ-এর সদস্যরা একে অপরকে সমর্থন করবে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সাধারণ মূল্যবীধ্যের ভিত্তিতে একত্রে কাজ করবে; এবং, Pluralism বা বহুত্ববাদ সকল সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ইইউ সমাজকে ধরে রাখবে, সেখানে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে, যা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ কেন্দ্রীক শক্তির রাজনীতি থেকে আলাদা।

এছাড়াও দুটি মূলনীতিকে পুঁজি করে ক্রমে ইউরোপীয় কাস্টমস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিকাশ হয়েছেঃ Order বা শৃঙ্খলা এবং Justice বা ন্যায় বিচার। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি সমাজ হিসেবে বিকশিত হওয়ার প্রয়োজনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপে যুদ্ধকেন্দ্রিক সিস্টেমের যে নৈরাজ্য সেখানে শৃঙ্খলা আনয়নের প্রয়োজন ছিল। English School of Though তত্ত্বের অন্যতম কেন্দ্রীয় ধারণা ছিলো আইনশূন্য সিস্টেমে বিধিবদ্ধ আইন ও প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে শৃঙ্খলা আনয়ন করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ইউনিয়ন হিসেবে বিকাশের প্রয়োজনে ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে যা ইউরোপের নৈরাজ্যের বিপরীতে একটি শৃঙ্খলিত আন্তর্জাতিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।

এক্ষেত্রে সে শৃঙ্খলিত আন্তর্জাতিক সমাজকে টিকে থাকতে হলে, অগ্রসর হতে হলে সে সমাজের মাঝে ন্যায় বিচারের (Justice) উপস্থিতি একান্ত কাম্য। এই বৈশিষ্ট্য যেকোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিকাশের ক্ষেত্রেও অন্যতম প্রধান নিয়ামক। ইউরোপীয় ইউনিয়নও নিজেকে একটি আন্তর্জাতিক সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, ইউনিয়নের ভিতরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাকে খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই ন্যায় বিচার শুধু রাজনৈতিক নয়, এখানে অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক এবং আইনি বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত।

উদারবাদী গণতন্ত্র, উদারবাদী বিভিন্ন মূল্যবোধ ও আদর্শ ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পথকে আরও উন্মোক্ত করে তোলে। ন্যায় বিচারের কল্যাণে সমাজে বৈষাম্যের অবসান ঘটে থাকে, যা সমাজের প্রতি নাগরিকদের আরও আগ্রহী করে তোলে। একইভাবে, ছয়টি রাষ্ট্রের সহযোগে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যাত্রা হয়, সেখানে বৈষাম্যহীন একটি ইউনিয়ন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি বৈষাম্যহীন আন্তর্জাতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য সদস্যরাও এই ইউনিয়নে যুক্ত হয়।

English School of Though তত্ত্ব অনুসরণ করে ইউরোপ নিজেকে যেভাবে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে, নিজেদের সংকটগুলো যেভাবে মোকাবিলা করেছে, যে সকল নীতি ও মূল্যবোধের আদলে নিজেদের একটি আন্তর্জাতিক সমাজের অন্তর্ভুক্ত করেছে তা ক্রমেই অন্যান্য অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে, এবং তারাও এরূপ সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং উঠছেও, বিশেষ করে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও আসিয়ানের কথা আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারি। এভাবেই, তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠে তার স্বতন্ত্ররূপ ধরে রেখেছে এবং বিকল্পরূপে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনের গুরুত্ব তুলে ধরছে যেখানে আইন, শৃঙ্খলা ও প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে, যার বড় উদাহরণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন।  

 


অনুবাদক

- বদিরুজ্জামান

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

 

 

 

 

 


No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.