Header Ads

Header ADS

স্নায়ুযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ ইতিহাসের সমাপ্তি নাকি সভ্যতার সঙ্কট

 স্নায়ুযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ ইতিহাসের সমাপ্তি নাকি সভ্যতার সঙ্কট  

IR in the 21st Century

১৯৯০-এর দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠ্যক্রম নতুন নতুন কনসেপ্ট (Concept) ও আইডিয়ায় (Ideas) বৈচিত্রময় হয়ে ওঠে। প্রথাগত উৎসের (Traditional IR) বাহিরেও, সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের বহুবিদ শাখা আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে তাদের পাঠ্যক্রম ও বিশ্লেষণে যুক্ত করে। নব্য-প্রাতিষ্ঠানিকবাদ (Neo-Institutionalism), জেন্ডার তত্ত্ব (Gender Theory), সংস্কৃতি অধ্যায়ণ (Cultural Studies), নৃবিজ্ঞান (Anthropologic Study), ঔপনিবেশোত্তর পাঠ (Post-Colonial Study), এবং নতুন ঘরনার সমালোচনা তত্ব (Literary Criticism) তন্মধ্যে অন্যতম। 

তবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণের যে প্রথাগত ধারণা ও আইডিয়াগুলো রয়েছে, বিশেষ করে যুদ্ধ, শান্তি, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ও বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রভৃতি কেন্দ্রিক পরিচালিত প্রথাগত আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে স্নায়ুযুদ্ধত্তোর এই নতুন কনসেপ্ট ও আইডিয়াগুলো সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। এই প্রভাবিত না করতে পারার অন্যতম কারণঃ "আন্তর্জাতিক সিস্টেম নৈরাজ্যপূর্ণ"- এই বয়ানটি পুনরায় চালু করা বলা যাতে নতুন মহাশক্তি তার/ তাদের  ক্ষমতার লড়াই অব্যহত থাকতে পারে। 

কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তীতে যখন দ্বিমেরু বিশ্বরাজনীতির ইতি ঘটে তখন আন্তর্জাতিক সিস্টেমের ধরণ কেমন ছিলো?আবার, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর একই পরিমানের সামরিক শক্তিধর হিসেবে সোভিয়েতের উত্তরসূরী রাশিয়ার আবির্ভাবের পরও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাদাভাবে এমন কোন শক্তি ছিলো যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে অনেক পিছে ফেলে বিশ্বরাজনীতির একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে পেরেছিলো? এবং, যুক্তরাষ্ট্রের সে ধরণের শক্তি সিস্টেমের অন্য রাষ্ট্রগুলো কেন সমীহ করতে শুরু করলো?

প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদ জোসেফ নাই-ই (Joseph Nye) ১৯৯০ সালে রচিত তার বিখ্যাত Bound to Lead গ্রন্থে উক্ত প্রশ্নের ব্যাক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। Nye-এর ভাষায় সোভিয়েত পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে পেরেছিলো তার জ্ঞান, বিজ্ঞান, শাসন ও জীবনযাপন সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়ার মাধ্যমে।এগুলোকে একত্রে জোসেফ soft power হিসেবে নামকরণ করেছেন। Nye-কে অনুসরণ করে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা বিশারদেরা যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র ক্ষমতাধর হওয়ার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের গোটা বিশ্বের উপর যে আইডিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক স্যামুয়েল পি হান্টিংটন (Samuel P. Huntington) ১৯৯৩ সালে রচিত তার বিখ্যাত The Clash of Civilizations গ্রন্থে একটি নতুন বয়ান সামনে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটবে, যে অধ্যায়ের কেন্দ্রে থাকবে সভ্যতা ও ধর্ম (বিশ্বাস) কেন্দ্রিক পারস্পারিক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত।  ঠিক একই সময়ে আমেরিকান সমরবিদ ও কৌশলী রবার্ট কাপলান (Robert D. Kaplan) ১৯৯০, ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালে যথাক্রমে Soldiers of God, Balkans Ghosts, ও The Ends of the Earth শিরোনামে তিনটি রিপোর্ট তৈরি করেন। হান্টিংটনের তত্ত্বকে অনুসরণ করে কাপলান এই রিপোর্ট তিনটি প্রকাশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি দেখান যে আন্তর্জাতিক সংঘাতের কেন্দ্রীয় কারণ হল ধর্মীয় বিশ্বাস ও জাতিগত পরিচিতি। রবার্ট কাপলান ও হান্টিংটনের এরূপ বিশ্লেষণকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দুনিয়ায় আবারও বিতর্কের জন্ম হয়।

ভবিষ্যৎ সংঘাত ও যুদ্ধ হবে ধর্ম বিশ্বাসকে পুঁজি করে, হান্টিংটনের এরূপ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা। হান্টিংটনের সভ্যতার সঙ্কট বয়ানের পরিবর্তে ফুকিয়ামা বলেন স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তিতে আন্তর্জাতিক সিস্টেমে যুদ্ধ ও সংঘাত সৃষ্টির অনুষঙ্গেরও ইতি ঘটেছে। তাই এখন Modernism বা আধুনিকতাকে টেঁকসই করার পথ হলঃ উদারবাদী গণতান্ত্রিক পথের অনুসরণ করা। তিনি বলেন স্নায়ুযুদ্ধে কমিউনিজমের ইতি ঘটেছে এবং বিপরীত পক্ষ হিসেবে উদারবাদী গণতন্ত্র আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। 

ফুকিয়ামা বলেন উদারবাদী গণতন্ত্রের মাধ্যমে যুক্তি, অধিকার, স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণকে প্রভাবিত করছে। এছাড়াও উদারবাদী গণতন্ত্র ধর্ম, জাতীয়তাবাদ এবং অন্যান্য দার্শনিক মতাদর্শকে ইতিহাসের ভাগাড়ে নিক্ষেপ করেছে। ১৯৯২ সালে তার রচিত বিখ্যাত The End of History and the Last Man গ্রন্থে ফুকিয়ামা দাবী করেন যে আদর্শগত বিতর্ক (Ideological Debates) যুগের সমাপ্তি ঘটেছে; শুধু স্নায়ুযুদ্ধেরই সমাপ্তি ঘটেনি, ইতিহাসেরও ইতি ঘটেছে। ফুকিয়ামার এরূপ বয়ান আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাড়াকে শক্তভাবে নাড়িয়ে দেয়, এবং অনেক লেখক ফুকিয়ামার শ্বরে কথা বলতে শুরু করেন। 

ব্রুস রাসেট (Bruce Russett) তন্মধ্যে অন্যতম, তবে তিনি ফুকিয়ামার মত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক পদ্ধতি ব্যবহার না করে তার বিপরীতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা চালান। ব্রুস ১৯৯৩ সালে রচিত তার Grasping the Democratic Peace নামক গ্রন্থের মাধ্যমে দাবী করেন যে উদারবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংঘাত ও যুদ্ধের সম্ভাবনা কম থাকে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সংঘাতের বদলে পরস্পর বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেয়; এই বাণিজ্য তাদের মধ্যে পারস্পারিক নির্ভরশীলতা (interdependency) তৈরি করে; এবং উভয়ের জন্য একটি সাধারণ লক্ষ্য (common interests) নির্ধারণ করা সহজ হয়। এরূপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে ব্রুস মনে করেন। ব্রুসের লেখার হাত ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে গণতান্ত্রিক শান্তি (Democratic Peace) নামে আরও একটি নতুন কনসেপ্ট যুক্ত হয়। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন এই বিতর্কে একদল ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা ও ব্রুস রাসেটের গণতান্ত্রিক শান্তি কনসেপ্টকে সমর্থন দেন। এই সমর্থনের অন্যতম কারণ স্নায়ুযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট, অর্থাৎ, স্নায়ুযুদ্ধত্তোরকালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে যুদ্ধ ও সংঘাত সংখ্যা অনেক কমে যাওয়া। অন্যদিকে, বিতর্কে যারা হান্টিংটন এবং কাপলানের দলে ছিলেন তারা উল্লেখ করেন যে পশ্চিমে যুদ্ধ ও সংঘাতের সংখ্যা হয়তো হ্রাস পেয়েছে, তবে প্রাচ্যের এমন অনেক অঞ্চল রয়েছে যেখানে যুদ্ধ ও সংঘাত এখনো বিদ্যমান। তারা বলেন, প্রাচ্যের এই সংঘাত ও যুদ্ধ কিছুক্ষেত্রে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সাথে সম্পর্কিত; কিছুক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী প্রাচ্যনীতির সাথে সম্পর্কিত; এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সংঘাত ও যুদ্ধ জাতীয় ও ধর্মীয় পরিচয়ের সাথে জড়িত।

স্নায়ুযুদ্ধকালে না হলেও, স্নায়ুযুদ্ধোত্তরকালে পশ্চিমা শক্তির কাছে প্রাচ্যের এহেন সংঘাত ও যুদ্ধ একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে, এই উদ্বেগ প্রাচ্যের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য নয়, এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছিলো প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলকে ঘিরে। অর্থাৎ, তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে- মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও সংঘাত চলছিলো। পশ্চিমা রাষ্ট্রনায়করা আশঙ্কা করেছিলেন যে এরূপ সংঘাত ও যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল উত্তোলন এবং এর সুগম পরিবহনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্য প্রধানত মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চল, ফলে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছিলেন যে এরূপ সংঘাত অত্র অঞ্চলে ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে নতুন চরমপন্থার জন্ম দিতে পারে। সেইসাথে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেন অত্র অঞ্চলে সংঘাতের অন্যতম কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অনুপস্থিতি। এরূপ পরিস্থিতে, গৃহযুদ্ধের সূচনা হতে পারে, এবং এমনকি অত্র অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্র এবং অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMDs) বিস্তারও ঘটাতে পারে। 

একাডেমিক মহলে যখন প্রাচ্যের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে এরূপ আলাপচারিত চলছে, সে সময় ৯/১১ ঘটে। ফলে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আক্রমন চালায় এবং তালেবান সরকারকে সরিয়ে তাদের আদর্শ অনুসারী হামিদ কারজাইকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসায়। এখানেই সব থেমে যায়নি, গণতান্ত্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে; "War on terror (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ)" ব্যানারে জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাক আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে বুশের যুক্তি ছিলো যে ইরাকের স্বৈরাচারী শাসক সাদ্দাম হোসেনের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (Weapons of Mass Destruction-WMD) মজুদ রয়েছে এবং তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসবাদের অন্যতম সমর্থক।  

তবে, ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র (WMD) পাওয়া যায়নি। সাদ্দাম হোসেনের সাথে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সংযোগের সত্যতা মেলেনি। বিশ্বের অনেক বিশেষজ্ঞ, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের (IR) বিশেষজ্ঞরাও অন্তর্ভুক্ত, উল্লেখ করেন যে বুশ প্রশাসন ইরাক আক্রমণ করেছিলঃ হয় আতঙ্ক বা বিভ্রান্তির ফলে, অথবা মধ্যপ্রাচ্যের তেলের মজুদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা হিসেবে। কারণ যাই হোক না কেন, ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকার দূরবর্তী, ব্যয়বহুল ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধগুলো আমেরিকার soft power-কে নষ্ট করেছে এবং বিশ্বরাজনীতিতে আমেরিকার দুর্বল অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে। এবং লক্ষ লক্ষ নিরীহ ইরাকি ও আফগানি এই যুদ্ধে নিহত হন যা আমেরিকাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত করে, এবং ভিয়েতনামের মত আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্যর্থ যুদ্ধের তকমা আমেরিকাকে বয়ে বেড়াতে হবে। 

স্নায়ুযুদ্ধোত্তর বিশ্বরাজনীতে আমেরিকার যে একচ্ছত্র প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, একবিংশ শতকে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার অবৈধ আক্রমন ও লক্ষ লক্ষ প্রাণের আহতি আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আমেরিকাকে গণতান্ত্রিক উদারবাদী রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে। বিশেষ, প্রাচ্যে আমেরিকাকে একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরতে থাকেন। 

মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ায় সংঘাত ও যুদ্ধ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়নে নতুন শক্তি বিতর্কের সূত্রপাত করে। বিশ্বের মহাশক্তিগুলি—রাশিয়াকে বাদ দিয়ে—মধ্যপ্রাচ্যের তেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে, এবং তাদের এই নির্ভরতা তাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয় । এছাড়াও, জীবাশ্ম জ্বালানির অব্যাহত ব্যবহার পরিবেশগত নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসাবে দেখা দেয়। অর্থাৎ, বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে তেল পোড়ানোর ফলে যে পরিমাণে কার্বন গ্যাস নির্গত হয় তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে এবং তার ফলেই বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে।

এত সমালোচনা বা বিশ্বরাজনীতিতে দুর্বল অবস্থান সত্ত্বেও বুশের দ্বিতীয় মেয়াদেও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ বিবেচিত হত। কিন্তু, যে সফট পাওয়ারের জোড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে একচ্ছত্র ক্ষমতাধর বলা হত তা অনেকটা হ্রাস পায় এবং প্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির প্রতি সমালোচনা বেড়েই চলে। ২০০৭-০৮ এর অর্থনৈতিক মহা মন্দায় আমেরিকা গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়। এই মন্দার প্রভাবে বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে আমেরিকার একচ্ছত্র ভাবমূর্তি ধসে পড়ে। 

বিশ্বরাজনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতি প্রেক্ষাপটে আমেরিকার এরূপ পরিবর্তন পর্যাবেক্ষণ করে আমেরিকান স্কলার ফরিদ জাকারিয়া ২০০৭ সালে তার বিখ্যাত দ্য পোস্ট-আমেরিকান ওয়ার্ল্ড নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। জাকারিয়া তার বইয়ে আমেরিকারর একচ্ছত্র ক্ষমতার সমাপ্তির বিষয়টিকে ব্যাক্ষা করেন এবং বলেন যে একমেরু (Unipolar) বিশিষ্ট্য বিশ্বরাজনীতিতে পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। মহামন্দা পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা হবে বহু-মেরু (Multipolar) বিশিষ্ট্য বিশ্বরাজনীতি, যেখানে আমেরিকার পাশাপাশি চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদির মত আরও নতুন নতুন আঞ্চলিক শক্তির উত্থান ঘটবে। 

বর্তমানে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অভাবনীয় উন্নতি বিবেচনায় চীনকে আমেরিকা পরবর্তী হেজমন (Hegemon) বা মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে বিবেচনা করা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার এটাও বলছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আবারও শক্তি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে, যাকে তারা স্নায়ুযুদ্ধের দ্বিতীয় সংস্করণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। বিশেষ করে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt and Road Initiative- BRI) নামক মহা পরিকল্পনার সূচনার পরপরই এরূপ বিতর্কের সূচনা হয়, এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি (Indo-Pacific Strategy) নামক মহা কৌশলপত্র (Grand Strategy- IPS) উপস্থাপন এবং সেখানে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে চীনের উত্থানকে দমানোর (Contain) চেষ্টা চলছে। এভাবেই, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যায়ণে শক্তি ও স্বার্থ বিষয়ক বাস্তববাদ তত্ত্বকে (Realism, Neorealism) আবারও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। 



ভাবানুবাদঃ

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 



মূল বইঃ

International Encyclopedia of Political Science

মূল লেখকঃ

Torbjorn L. Knutsen

Norwegian University of Science and Technology (NTNU)

Trondheim, Norway






প্রথম পর্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/history%20of%20international%20relations%20in%20bangla%20part%20I.html?m=1


দ্বিতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাস (যুদ্ধ ও শান্তি)

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/international%20relations%20history%20in%20bangla.html


তৃতীয় পর্বঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রতিষ্ঠা

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/Origin%20of%20IR%20Department%20in%20Bangla.html


৪র্থ পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ আদর্শবাদ ও প্রথম ডিবেট

https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/first%20debate%20in%20IR%20in%20Bangla.html?m=1


৫ম পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ রিয়েলিজম ও দ্বিতীয় বিতর্কের প্রেক্ষাপট 
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/Cold%20War%20and%202nd%20debate%20in%20IR%20in%20Bangla.html 

৬ষ্ঠ পর্বঃ আচরণবাদ বনাম ঐতিহ্যবাদঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দ্বিতীয় বিতর্ক 
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/second%20great%20debate%20in%20IR.html

৭ম পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ সিস্টেম থেকেই তবে বিশ্লেষণ শুরু হোক
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/01/System%20Theories%20in%20IR%20in%20Bangla.html 

৮ম পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ স্নায়ুযুদ্ধের ইতি ও চিন্তার দুনিয়ায় পরিবর্তন 
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/02/post-positivism%20theory%20in%20IR.html

৯ম পর্বঃ ইতিহাসের আলোকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ বিশ্বায়ন এবং নতুন পরিবর্তন
https://irstudycornerbangla.blogspot.com/2025/02/Globalization%20and%20IR%20Theory.html

১০ম পর্বঃ স্নায়ুযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক সম্পর্কঃ ইতিহাসের সমাপ্তি নাকি সভ্যতার সঙ্কট  


 




No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.