Header Ads

Header ADS

The Grand Canal ও চীনা সভ্যতার বিকাশঃ Sui Dynasty (তৃতীয় পর্ব)

The Grand Canal ও চীনা সভ্যতার বিকাশঃ Sui Dynesty 

৬০৫- ৬০৯ খৃষ্টাব্দে চীনে আরও একটি অভূতপূর্ব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তাহল চীনের গ্রান্ড খাল যা অতীতের ন্যায় বর্তমানেও পৃথিবীর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট খাল। এই খালের মাধ্যমে চীনের দুই প্রাণ অর্থাৎ ইয়াংজি নদী ও ইয়েলো নদীকে পরস্পর সংযুক্ত করা হয়। এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞটি সুই সাম্রাজ্যের (Sui Dynasty) অধীনে সম্পাদিত হয়। অসংখ্য শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয় এই দুই নদীকে একত্র করার জন্য যাতে অভ্যন্তরীণ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়। এই নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা উত্তর ও দক্ষিণের হান'দের মাঝে যে দূরত্ব তা প্রশমিত করে, এবং নতুনভাবে হান'রা চীনা সভ্যতা বিকাশে একত্রে কাজ করার অনুপ্রেরণা লাভ করে। এই মহাযজ্ঞটি সম্পাদনে কয়েক মিলিয়ন চীনা অধিবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রম রয়েছে এই মহাযজ্ঞটি (গ্রান্ড খাল) সম্পাদনে। তবে, এত ত্যাগের পরও সুফলের পরিমাণটাই বেশি ছিলো, এই খাল উত্তর ও দক্ষিণ চীনকে একত্র করে যা ছিলো চীনের আদি সমস্যা বা আকাঙ্ক্ষা। তবে, বন্যা এখনো রয়েছে, মাঝেমধ্যে বড় আকারেই হয়, তথাপি চীনের সার্বিক অগ্রগতিতে গ্রান্ড খালের ভূমিকা অনস্বীকার্য।  


হান'রা যেমন একে অন্যের সাথে মিলিত হতে চয়েছে, ঠিক একইভাবে একে অন্যের সাথে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ে। এভাবেই হান'দের সামাজিক বিবর্তন ঘটেছে। তবে, এগারো শতকে তাদের সকল মনোযোগ গিয়ে পড়ে মংগলদের দিকে। মংগলরা চীনের উত্তর সীমা পার হয়ে চীন সাম্রাজ্যে বারবার আক্রমণ চালাতে থাকে। চীনের একের পর এক রাজবংশ মংগলদের করলগত হতে থাকে, এবং এভাবেই মংগলদের নেতা কুবলাই খান সমগ্র মংগল সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র মালিক হয়ে ওঠে। প্রায় নব্বই বছরের মংগল আক্রমনের পর মিং রাজবংশ হান'দের নতুন সাম্রাজ্য হয়ে আসে এবং মংলদের বিপরীতে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 


মংগলদের পর স্প্যানিশ ও পর্তুগীজ বণিক ও ধর্মগুরুর আবির্ভাব ঘটে চীনের উর্বর ভূমিতে। তবে, ইউরোপীয়দের উপস্থিতিকে হান'রা কোনভাবেই মেনে নিতে রাজি হয়নি, বিশেষত চীনে তাদের বসবাসের ঘোর বিরোধী ছিলেন হান'রা। তবে, চীনের সমুদ্র সংলগ্ন অঞ্চলে এই ইউরোপীয় বণিকদের ব্যবসা করার সহজ সুযোগ করে দিয়েছিলো চীনারা। চীনের এই দ্বৈত নীতি আজও তার রাষ্ট্রনীতি হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। চীন তার সামুদ্রিক অঞ্চল বহি:বিশ্বের কাছে যত বেশি উন্মুক্ত করেছে, চীনা ভূখন্ডে বা মেইনল্যান্ডে প্রবেশের সুযোগ  সে তুলনায় অনেক কমই দিয়েছে বা মেইনল্যান্ডে বহি:বিশ্বের উপস্থিতিকে খুব কমই স্বাগত জানিয়েছে। এজন্যই চীনের উপকূলীয় শহরগুলো কেন্দ্র ভূমির শহরগুলোর তুলনায় অনেক শিল্পন্নোত ও অত্যাধুনিক। একসময়, যেখানে উত্তর চীনা সমভূমিতে চীনের ঘন বসতি গড়ে উঠেছিলো উর্বর ভূমিকে কেন্দ্র করে, আজ চীনের সমুদ্র সংলগ্ন শহরগুলো অত্যান্ত জনবহুল ও তাদের মাত্রাপিছু আয় অনেক বেশি। 


অষ্টাদশ শতকে চীনের আয়তন আরও বৃদ্ধি পায়, দক্ষিণে ইন্দোচায়না ও বার্মা পর্যন্ত, এবং উত্তর পূর্বে চীন ঝিনঝিয়াং অঞ্চল দখল করে যা চীনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। মালভূমি, মরুভূমি ও পর্বতশ্রেণীতে ঘেরা ঝিনঝিয়াং প্রদেশের আয়তন প্রায় ৬৪২,৮২০ বর্গমাইল যা আমেরিকার টেক্সাস প্রদেশের প্রায় দ্বিগুণ। অথবা এভাবেও বলা যায়, এক ঝিনঝিয়াং এ আপনি ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসকে রাখতে পারবেন, তার পরেও লুক্সেমবার্গকে রাখার জায়গা সেখানে থেকে যাবে। ঝিনঝিয়াং আসলেই বৃহৎ ও অনুর্বর প্রদেশ যাকে ঘিরে বর্তমান শি জিং পিং সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ও নিচ্ছে।

এই বৃহৎ প্রদেশ ঘিরে চীনের কিছু সমস্যাও রয়েছে বা অন্তত চীনা সরকার তা বলে আসছে। ঝিনঝিয়াং প্রদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম এবং তাদের সাংস্কৃতি অনেকটাই চীনা হান'দের থেকে আলাদা, যেহেতু তারা দীর্ঘদিন অটোমানদের অধীনে ছিলো, তাই ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তবে, চীনা ভাষ্যমতে, ঝিনঝিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায় চীনা রাষ্ট্রে নানাভাবে অস্থিরতা ও নিজেদের স্বাধীনতা দাবী করছে, যা চীনের অন্য অনেক দেশেই অস্থিরতা তৈরি করছে। এমনকি ঐতিহাসিকভাবে, ইউরোপীয়রা যখন চীনে উপনিবেশ গড়ে তুললো তখন ঝিনঝিয়াং প্রদেশকে ইউরোপীয়রা রাশিয়ার সাথে সেতুবন্ধন হিসেবে রাখতে চেয়েছিলো যা হান’দের উইঘুর মুসলিমদের প্রতি আরও ক্ষেপিয়ে তোলে। 





ভাবানুবাদক:

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


মূল বই: 

Prisoners of Geography: Ten Maps That Explain Everything about the World.


লিখেছেন:

Tim Marshall,

A former foreign correspondent for Britain's Sky News Television


চীন পর্বঃ


রাশিয়া পর্বঃ

 

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.