Header Ads

Header ADS

রাষ্ট্র হিসেবে চীনঃ মাও সেতুং (Mao Zedong) থেকে ডেং ঝিয়াওপিং (Deng Xiaoping) (চতুর্থ পর্ব)

 রাষ্ট্র হিসেবে চীনঃ মাও সেতুং (Mao Zedong) থেকে ডেং ঝিয়াওপিং (Deng Xiaoping)  (চতুর্থ পর্ব)

Mao Zedong and Deng Xiaoping

ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা যখন চীনের নিয়ন্ত্রণ নেয়, বিশেষত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, তারা নিজেদের প্রশাসনিক স্বার্থে চীন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন। তবে যে চীনারা সবসময় নিজেদের এক ভেবে এসেছে, বিশেষত মঙ্গলদের সময় থেকে তাদের জন্য এই বিভক্তি ছিলো চরম অপমানের।


এই বিভক্তি যে চীনাদের জন্য, হান’দের জন্য লজ্জাস্কর এ বয়ানটি মূলত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রচার করতো, এখনো করে। এই বয়ান চীনাদের মধ্যে কমিউনিস্টদের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি করে যা তাদের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। 

চীনের প্রতিবেশী জাপান ‘মেইজি রেস্টোরেশন’ নীতির ফলে আর্থিক ও সামরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ক্রমেই জাপানের মাঝেও সাম্রাজ্যবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। ফলে তারা চীনে ১৯৩২ সালে প্রথমবার, এবং ১৯৩৭ সালে দ্বিতীয়বার আক্রমন চালিয়ে চীনের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশ ও মঙ্গোলিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয়।

১৯৪৫ সালে জাপান যখন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্ম-সমার্পন করে তখন মাঞ্চুরিয়া থেকে জাপান সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, এবং ঐ ফাঁকা অঞ্চলে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশ করে। তবে, ১৯৪৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নও মাঞ্চুরিয়া থেকে সরে যায়। 

প্রাথমিকভাবে, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে ভাবা হচ্ছিলো, বিশেষত কিছু উদারবাদী চিন্তক যে চীনের সহস্র বছরের রাজশাসনের বিলুপ্তিতে চীনে হয়তো এবার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিকাঠামো গড়ে উঠবে।

আসলে সে চিন্তকদের উদারবাদী চিন্তার কোন প্রয়োগ চীনে ঘটেনি। কারণ, চীনের হাজার বছরের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর জটিলতায় পশ্চিমা আদর্শ প্রয়োগ ঘটা শুধু কল্পনা হিসেবেই ছিলো। 

পক্ষান্তরে, জাতীয়তাবাদী শক্তির ধারক চিয়াং কাই শেক ও মাও’য়ের কমিউনিস্টদের মধ্যে ১৯৪৯ সাল অব্দি চলমান যুদ্ধে কমিউনিজমের বিজয় হয়, জাতীয়তাবাদী চিয়াং কাই শেক তাইওয়ানে চলে যায়।

একই বছরে, রেডিও বেইজিং থেকে ঘোষণা আসে, “ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) সমগ্র চীনা ভূখন্ডে অতিসত্বর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। পিএলএ অতিসত্বর তিব্বত, ঝিনঝিয়াং, হাইনান ও তাইওয়ান দখলে নেবে।”

নতুন কমিউনিস্ট চীনে, মাও সেতুং ছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। মাও এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, তিনি ক্ষমতাকে যতটা কেন্দ্রীভূত করতে পেরেছিলেন, চীনা কোন রাজা ইতিপূর্বে তা পারেনি। মাও সেতুং, ইনার মঙ্গোলিয়ায় রুশ প্রভাব মুক্ত করে চীনা সীমানাকে মঙ্গোলিয়া অবদি বিস্তার ঘটান।


১৯৫১ সালে চীন তিব্বত দখল করে। তিব্বতে কোন হান’রা ছিলো না, কিন্তু চীনা ভূখন্ড নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় চীনের কাছে তিব্বতের গুরত্ব অনেক আগে থেকেই ছিলো। এভাবেই চীনা মানচিত্রের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকলো সুদূর সেন্ট্রাল এশিয়ার তৃণভূমি অবধি।


মাওয়ের কঠিন শাসনামলে চীনে কমিউনিস্ট দলের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় হয়। তিনি চীনকে গোটা দুনিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের মত করে গড়ে তোলার নীতি গ্রহণ করেন। ফলে, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে চীন চরমভাবে পিছিয়ে যেতে শুরু করে, এবং তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম দারিদ্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তবে, এত কষ্ট ও অভাবের মাঝেও চীনারা নিজেদের এক ভাবতো, একত্রে এগোতে চাইতো।      


মাও সেতুং-এর মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি হন চীনা নেতা ডেং ঝিয়াওপিং (Deng Xiaoping)। ঝিয়াওপিং মাওয়ের লং মার্চকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত করেন। ১৯৮০’র দশকে ঝিয়াওপিং চীনকে নতুনভাবে আন্তর্জাতিক মহলে পরিচিত করান, “চীনা সমাজতান্ত্র- সোস্যালিজম উইথ চাইনিজ ক্যারেক্টারিস্টিকস” বলে।

তার মতে চীনা সমাজতন্ত্র কমিউনিজম রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুসরণ করবে, তবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন হবে পুঁজিবাদী। ঝিয়াওপিং- এর নীতি অনুসরণ করে ক্রমেই চীন তৃতীয় বিশ্বের বৃহৎ/ উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশ হয়ে উঠতে থাকলো।

তবে, ১৯৮৯ সালে তিয়েন আমেন স্কয়ারের ম্যাসাকারের আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে চীন আলাদা হয়ে যায় যা ১৯৯০ এর শেষের দিকে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে, পর্তুগিজ দখলে থাকা ম্যাকাও দ্বীপ ও ব্রিটিশ দখলে থাকা হংকং দ্বীপ চীনের অধীনে আসে। চীন একদেশ দুই নীতি প্রণয়ন করে যা চীনকে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও প্রবেশের বৃহৎ সুযোগ করে দেয়।



ভাবানুবাদক:

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


মূল বই: 

Prisoners of Geography: Ten Maps That Explain Everything about the World.


লিখেছেন:

Tim Marshall,

A former foreign correspondent for Britain's Sky News Television


চীন পর্বঃ


রাশিয়া পর্বঃ

 

No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.