Header Ads

Header ADS

দূর প্রাচ্যঃ প্রাকৃতিক সুরক্ষায় ঘেরা আত্মবিশ্বাসী চীন (পঞ্চম পর্ব)

দূর প্রাচ্যঃ প্রাকৃতিক সুরক্ষায় ঘেরা আত্মবিশ্বাসী চীন  

আমরা যদি আধুনিক চীনের সীমানার দিকে তাকাই, আমরা দেখতে পাবো ঐতিহাসিকভাবে সীমানা নিয়ে চীনের সে দু;শ্চিন্তা অনেকাংশেই ঘুচেছে। আজ চীন পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র, চীনের এই সুরক্ষিত সীমারেখা চীনকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। 

শুধু প্রতিরক্ষা নয়, এই সুরক্ষিত ও বিস্তৃত সীমারেখা চীনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও সাহায্য করছে। চীনের উন্নয়নের ঘড়ির কাটা পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম-উত্তর এভাবে ঘুরে চলে। তাহলে চলুন আমরা একদম শেষ, অর্থাৎ, উত্তর দিয়ে শুরু করি এবং কাঁটার অনুপাতে চলি। 

মঙ্গোলিয়ার সাথে উত্তরে চীনের প্রায় ২৯০৬ মেইল দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। এ সীমার অধিকাংশ জুড়ে রয়েছে গোবি মরুভূমি। অতীতে, যাযাবর, বর্বর যোদ্ধারা এই দীর্ঘ ও রুক্ষ মরু পেড়িয়ে চীনের দক্ষিণে আক্রমন চালাতো। কিন্তু আধুনিক সামরিক কৌশলে এই রুক্ষ ও বিপজ্জনক মরু পাড়ি দেওয়ার পূর্বে কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতি দরকার পড়বে। 

কারণ, এই দীর্ঘ শুষ্ক পথের পাথেও ধরে রাখা খুবই কঠিন যতক্ষণ না তারা ইনার মঙ্গোলিয়ায় প্রবেশ করে, এবং সেখান থেকে ধারাবাহিকভাবে চীনের কেন্দ্রভূমিতে প্রবেশ করে। এই দীর্ঘ পথ এতই দুর্গম যে বড় ধরনের বা ভারি গোলাবারুদ যান চলাচলের সুযোগ নাই বললেই চলে। 

এ জন্যে গোবি মরুভূমি চীনাদের আগাম সতর্ক হওয়ার , এবং শত্রুকে মোকাবিলার পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ তৈরি করে দেয়। তাই, চীনের উত্তর দিক চীনের অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে কাজ করেছে। চীনের প্রাচীন সিল্ক রোড এ পথ ধরেই এগিয়েছে। 

এই উত্তর সীমান্তে ইনার মঙ্গোলিয়ায় প্রাকৃতিক সম্পদের আধিক্য রয়েছে, বিশেষত খনিজ পদার্থের বড় যোগান আসে ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে। ফলে, ঐতিহাসিকভাবে কেন্দ্রভূমির হান’রা আরও উত্তরে অগ্রসর হয়েছে, এবং মঙ্গোলিয়াতেও অনেক হান’ রয়েছে। 

চীনের পূর্ব সীমানা রাশিয়ার সাথে, যেটা গিয়ে মিশেছে প্রশান্ত মহাসাগরে অথবা বলা যায় এ সীমানা গিয়ে মিশেছে জাপান সাগরে। তার উপরে রয়েছে দূর প্রাচ্যের দুর্গম পর্বত শ্রেণী যেখানে জনসংখ্যার বসতি খুবই কদাচিৎ। এ পাহাড়ের নিচেই আছে মাঞ্চুরিয়া যাকে রুশ সাম্রাজ্য বারবারই তার অধীনে নিতে চেয়েছে যাতে চীনের কেন্দ্রভূমিকে দখলে নেওয়া যায়। 

মাঞ্চুরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ১০ মিলিয়নের বেশি এবং ক্রম বর্ধমান। বিপরীতে, রাশিয়ার দূর প্রাচ্যের মোট জনসংখ্যা মাত্র সাত মিলিয়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমহ্রাসমান। ফলে দূরপ্রাচ্য থেকে অনেকেই চীনের মাঞ্চুরিয়ায় অভিবাসন গ্রহণ করে যা চীনকে রাশিয়ার উপর ছড়ি ঘুরাতে সাহায্য করে। 

সামরিক বিবেচনায়, এ অভিবাসন পূর্ব রাশিয়ার বৃহৎ বন্দর শহর ভ্লাদিভস্টকের দিকে হওয়ার কথা, কিন্তু হচ্ছে তার উল্টো। কারণ দূরপ্রাচ্যের সমস্যায় সামরিকের তুলনায় আর্থিক প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভূত হয়। 

তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে পশ্চিমাদের রাশিয়ার উপর আরোপিত বিশাল আর্থিক অবরোধ, রাশিয়াকে অনেকাংশে চীনের উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে, এবং দূরপ্রাচ্যের অভিবাসনে সাহায্য করছে। 

রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের একদম নিচের দিকের সমুদ্র তীর ব্যাপী রয়েছে ইয়েলো নদী, পূর্ব চীন সাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর। যারা একদিকে চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশে সুবিধা দিয়েছে, অন্যদিকে ভারত মহাসাগরে। 

বিশেষত ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী বেশ কিছু সমুদ্র বন্দর রয়েছে যা চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এ দুই সমুদ্রের মাঝে রয়েছে কিছু দ্বীপ রাষ্ট্র, তন্মধ্যে জাপান অন্যতম। 

চলবে.....




ভাবানুবাদক:

বদিরুজ্জামান 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


মূল বই: 

Prisoners of Geography: Ten Maps That Explain Everything about the World.


লিখেছেন:

Tim Marshall,

A former foreign correspondent for Britain's Sky News Television


চীন পর্বঃ

রাশিয়া পর্বঃ

 




No comments

Theme images by rajareddychadive. Powered by Blogger.